লাঠিচার্জ-টিয়ারশেলে রণক্ষেত্র মোংলা ইপিজেড
২৫ মার্চ ২০২৪ ২২:০৩
বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোংলা ইপিজেডে একটি কারখানায় শত শত শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে শ্রমিকরা অবস্থান নিলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের নিবৃত্ত করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেলও ছোড়ে। ফলে দুপুরের পর থেকে মোংলা ইপিজেড এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
শ্রমিকদের দাবি— বেপজার নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ মিলে লাঠিচার্জ করে অন্তত একশ শ্রমিককে আহত করেছে। তারা বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, শ্রমিকরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে তাদের নিবৃত্ত করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছোড়া হয়। কয়েকজন শ্রমিককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তারা ভারতীয় কোম্পানি ‘ভিআইপি’র শ্রমিক। কোনোকিছু না জানিয়েই কৌশলে ৪ হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। অবশ্য কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, ছাঁটাইকৃত শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ৭৭৭ জন।
জানা যায়, ‘ভিআইপি’র বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে সোমবার (২৫ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা ফ্যাক্টরি এলাকায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। ফলে ইপিজেডের নিরাপত্তা কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
পরে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে।
কারখানাটির মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, মোংলা ইপিজেডের অভ্যন্তরে লাগেজ (ব্যাগ) উৎপাদনকারী ভারতীয় কোম্পানিটি কয়েকমাস ধরে লোকসান গুনছিল। লোকসান সামাল দিতে ১ হাজার ৭৭৭ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। ছাঁটাইকৃত শ্রমিকরা এক বছর ধরে কর্মরত। এক্ষেত্রে শ্রম আইন অনুসরণ করা হয়েছে।’
কারখানার ওই কর্মকর্তার দাবি—সোমবার সকাল ৯টার দিকে ছাঁটাইকৃত এসব শ্রমিকদের চলতি মার্চ মাসের বেতন ও ঈদুল ফিতরের বোনাসের টাকা দেওয়া হচ্ছিল। এ সময় শ্রমিকরা বাড়তি আরও তিন মাসের বেতন ও ঈদুল আজহার বোনাসের টাকা চেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
নব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, শ্রম আইন মেনে অগ্রিম বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছে। এরপরও কিছু শ্রমিক কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। যারা ভাঙচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে থাকা শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, প্রায় ৪ হাজার শ্রমিককে জোর করে কাগজে সই নিয়ে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। ছাঁটাইয়ের আগে তিনটা বেসিক (তিন মাসের বেতন) ও দুইটা বোনাস পরিশোধের কথা থাকলেও মালিকপক্ষ তা মানছে না। ফলে শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানায়।
শ্রমিকদের পক্ষ না দিয়ে বেপজার সিকিউরিটি সদস্য ও পুলিশ সদস্যরা কারখানার পক্ষ নিয়েছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছুড়ে অন্তত একশ শ্রমিককে আহত করা হয়েছে।
মোংলা থানার আফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করার পাশাপাশি টিয়ারশেল ছুড়তে বাধ্য হয়।’
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেশ কয়েকজন শ্রমিককে আটক করে থানায় আনা হয়েছে বলে জানান ওসি।
বাগেরহাট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. রাসেলুর রহমান বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।’
সারাবাংলা/একে