Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাক শাসকের চাপে মুছে যায় বঙ্গবন্ধুর নাম, ফেরেনি ৬ দশকেও

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ মার্চ ২০২৪ ১১:১৯

চট্টগ্রামের রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, যেটি পঞ্চাশের দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এখন সেই নামে ফিরিয়ে আনা নিয়েই তৈরি হয়েছে জটিলতা। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ভাষাসৈনিক জামাল উদ্দীন নূরী। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ করেন ‘শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমি স্কুল’। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চাপের মুখে বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দিতে বাধ্য হন প্রতিষ্ঠাতা। নগরীর হামজারবাগে স্থাপিত বিদ্যালয়টির নাম হয়ে যায় ‘রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিষ্ঠাতার উত্তরসূরীরা বিদ্যালয়টি আগের নামে অর্থাৎ শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ফেরানোর চেষ্টা করেন। দেখতে পান, ততদিনে প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সংক্রান্ত সব দলিল বিদ্যালয় থেকে উধাও হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠাতার নাম-নিশানাও মুছে ফেলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরে বিফল হয়ে নথিপত্র সংগ্রহ করে তারা আদালতে একটি মামলা করেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে সেগুলো জমা দিয়ে আবেদন করেন।

অবশেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়টি আদৌ বঙ্গবন্ধুর নামে ফিরবে কি না, সেটা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে প্রতিষ্ঠাতা ভাষাসৈনিক প্রয়াত জামাল উদ্দীন নূরীর পরিবারের মধ্যে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ প্রেক্ষাপটে একটি গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ধর্মীয় ইস্যু’ তৈরি করে বিদ্যালয়টিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ফেরানোর এ প্রক্রিয়া থামাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। তাদের দাবি, বিদ্যালয়টি সুফিসাধক সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারির ‘রহমানিয়া মঞ্জিলে’র নামে করা হয়েছিল। তবে এ দাবির পক্ষে তারা এখনো কোনো ধরনের নথিপত্র কোথাও উপস্থাপন করেননি।

জামাল উদ্দীন নূরী সম্পর্কে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার জন্ম ১৯২৯ সালে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বরুমছড়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৮ সালে গঠিত ছাত্রলীগের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পরে ডাকসুর নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সতীর্থ হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী কার্যনির্বাহী কমিটি তাকে যশোর জেলার সহসভাপতি মনোনীত করে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটনের দায়িত্ব দেয়।

রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ইনসেটে প্রতিষ্ঠাতা জামাল উদ্দীন নূরী। ছবি: সারাবাংলা

রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে হিসেবে নিয়েছিলেন জামাল নূরী। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। এরপর তিনি পুরোদস্তুর সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।

জানা গেছে, জামাল নূরীর ছেলে কানাডা প্রবাসী সম্রাট বাবর উদ্দিন নূরী ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি সিভিল মামলা দায়ের করেন। এতে তিনি হামজারবাগের রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন পুনরায় ‘শেখ মুজিবুর রহমান একাডমি স্কুল’ করা এবং জামাল উদ্দীন নূরীকে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ঘোষণার আরজি জানান।

মূলত এ প্রেক্ষাপটেই রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও নামকরণের ইতিহাসের বিষয়টি প্রায় ছয় দশক পর দৃশ্যপটে আসে। সম্রাট নূরী মামলার আরজির সঙ্গে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যন ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ডক্যুমেন্টেশন কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করা কিছু নথি আদালতে জমা দেন। একই নথিপত্র তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডেও জমা দেন।

নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৬ সালে জামাল উদ্দীন নূরী হামজারবাগে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত জুনিয়র স্কুল হিসেবে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর সেটি ‘শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমি স্কুল’ নামে পূর্ব-পাকিস্তান শিক্ষা বিভাগ থেকে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৬৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত স্কুলটির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন নূরী।

১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠাতা জামাল নূরী পরিচালনা পরিষদ গঠন ও দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন, যদিও তখনই নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিকের কার্যক্রম চালু ছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালের ২৮ জুলাই তৎকালীন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড বিদ্যালয়ের নাম ‘রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’ রাখার শর্তে পরিচালনা পরিষদের অনুমোদন দেয়। এরপর সেটি নাম পালটে রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় করা হয়। নাম পালটানোর পর ১৯৬৩ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার প্রাদেশিক শিক্ষা অধিদফতর নিম্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এরপর থেকে রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নামেই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলে আসছে।

ব্যানবেইসের ডক্যুমেন্টেশন কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করা স্কুলের প্রতিষ্ঠা ও ষাটের দশকে নাম পরিবর্তনের নথি। ছবি: সারাবাংলা

সম্রাট নূরী নথিতে ১৯৬২ ও ১৯৬৩ সালে ওই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করা দুজন শিক্ষার্থীর সনদ সংযুক্ত করেন। তাতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমি’ স্কুল উল্লেখ ছিল।

জানতে চাইলে সম্রাট নূরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৬২ সালে যখন শরীফ কমিশনের সুপারিশ বাতিলের দাবিতে শিক্ষা আন্দোলন চলছিল, তখন শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্কুল পরিচালনা নিয়ে আমার আব্বা পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়েন। পাকিস্তানের শাসকদের কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম তো তখন অনেকটা নিষিদ্ধ ছিল। অব্যাহত চাপের মুখে তিনি কৌশল করে রহমানকে রহমানিয়া বানিয়ে তিনি স্কুলের নামকরণ করলে সরকার সেটা মেনে নেয়। এগুলো আমার মুখের কথা নয়, পর্যাপ্ত ডক্যুমেন্ট সংগ্রহ করে জমা দিয়েছি।’

তবে ১৯৫৭ সালের ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অভিভাবক সমাবেশের একটি নথিতে বিদ্যালয়ের নাম ‘রহমানিয়া হোম এডুকেশন স্কুল’ উল্লেখ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্রাট নূরীর দাবি, পাকিস্তান আমলের বৈরী সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাদ দিয়ে সংক্ষেপে কিংবা ভিন্নভাবে বিদ্যালয়ের নাম উপস্থাপন করা হতো। এ জন্য অধিকাংশ নথিতে শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমি স্কুল থাকলেও কোথাও কোথাও ভিন্ন নাম ছিল।

পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিষ্ঠাতা জামাল নূরী বিদ্যালয়টিকে আগের নামে ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেছিলেন। এ জন্য তিনি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এইচ কে সাদেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এর দুই বছরের মাথায় তার মৃত্যুর পর সে প্রক্রিয়া আর এগোয়নি।

রাহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন নিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডকে পাঠানো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি। ছবি: সারাবাংলা

২০১০ সালে কানাডা থেকে দেশে ফেরেন ছেলে সম্রাট নূরী। তিনি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তখন পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতা। প্রধান শিক্ষক ছিলেন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। অনুষ্ঠানে উভয়েই তাদের বক্তব্যে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারির নাম উল্লেখ করেন।

সম্রাট নূরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনাদের বক্তব্য শুনে আমি হতবাক হয়ে যাই। আমার আব্বার নাম একবারের জন্যও উনারা উচ্চারণ করেননি। আমি প্রতিবাদ করলে উনারা বলেন, আমার আব্বা যে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা— এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই। আমি আবার স্কুলে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখি, সব নথিপত্র গায়েব করে ফেলা হয়েছে। আমি তখনকার লোকাল এমপি মঈনউদ্দিন খান বাদল সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ডিও লেটার পাঠান। এরপর আমি যতবার দেশে এসেছি, প্রত্যেকবার মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থায় গিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল না পেয়ে ২০২৩ সালে মামলা করেছি।’

সম্রাটের আইনজীবী রবি রায় দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শিক্ষা সচিব, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবরে নোটিশ ইস্যু করেছেন। এর মধ্যে আমরা আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আলাদা-আলাদা দরখাস্ত দিয়েছি।’

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়কে ‘শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমি স্কুল’ নামে পুনর্বহালের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেয়। এর ভিত্তিতে শিক্ষাবোর্ডের সহকারী অফিসার করুণাশীষ খিসাকে যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৯ অক্টোবর নির্দেশনা দেন চেয়ারম্যান। কিন্তু গত পাঁচ মাসেও ওই প্রতিবেদন দাখিল হয়নি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমি স্কুল হিসেবে নামকরণের জন্য যেসব নথিপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন একেবারে সন্নিকটে চলে আসায় কাজটা এগোয়নি। এখন আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। আরও ডক্যুমেন্ট আমরা সংগ্রহ করছি। চূড়ান্তভাবে এ বিষয়ে বলার সময় এখনো আসেনি।’

এদিকে ভাষাসৈনিক জামাল নূরীর পরিবার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় তোড়জোড় শুরুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্যালয়ের নামে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে নামকরণের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। শিক্ষক বাতায়ন পোর্টালে মহিউদ্দিন ওসমানী নামে এক শিক্ষক দাবি করেন, রহমানিয়া স্কুলের শিক্ষক ছালে আহম্মদের যাতায়াত ছিল মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের বাবা ভাণ্ডারি হিসেবে খ্যাত গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারির ‘গাউছিয়া রহমানিয়া মঞ্জিলে’। তিনিই এর সঙ্গে মিল রেখে রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রস্তাব করেছিলেন। এটিই প্রচলিত ইতিহাস বলে তিনি দাবি করেন।

রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকলেও বিদ্যালয়টির নাম বঙ্গবন্ধুর নামে ফেরানোর কাজটি সহজ হচ্ছে না। ছবি: সারাবাংলা

জানতে চাইলে মহিউদ্দিন ওসমানী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ওই স্কুলের শিক্ষক নই। আমার বন্ধুবান্ধব কয়েকজন সেখানে আছেন। তাদের কথায় আমি অনেক আগে শিক্ষক বাতায়নে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। আসলে আমি বিষয়টি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না।’

সম্রাট নূরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি নথিতে আমরা পেয়েছি, ১৯৫৬ সালের অক্টোবরে শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমি স্কুলের উদ্বোধন করেছিলেন সুন্নী হুজুর সৈয়দ আহমদ শাহ। সৈয়দ আহমদ শাহ ছিলেন বিবিরহাট মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা। সৈয়দ গোলামুর রহমান বা মাইজভাণ্ডারির কেউ স্কুল প্রতিষ্ঠা কিংবা নামকরণের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা আমরা কোথাও পাইনি। মাইজভাণ্ডারির বিষয়টি আসলে নিয়ে এসেছেন সাবেক প্রধান শিক্ষক আবু তৈয়ব এবং পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি এক আওয়ামী লীগ নেতা। উনারা মাইজভাণ্ডার তরিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।’

‘আমরা পাঁচ বোন, এক ভাই। বোনদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি কানাডায় থাকি। বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে দীর্ঘসময় আমাদের নজরে ছিল না। বাস্তবে আমরা এসব নিয়ে আগ্রহীও ছিলাম না। এ জন্য তারা আমার আব্বার নামটাও মুছে ফেলেছে। এখন আমরা যখন তোড়জোড় ‍শুরু করেছি, তখন নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমরা প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমার আব্বা জামাল নূরীর নাম ঘোষণা, স্কুলের নাম বঙ্গবন্ধুর নামে পুনর্বহাল এবং পরিচালনা পরিষদে প্রতিষ্ঠাতার পরিবারের পক্ষে আমার খালাতো ভাই মুহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেছি,’— বলেন সম্রাট নূরী।

শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী বলেন, ‘আমরা শুধু নাম পরিবর্তনের একপক্ষের নথিপত্রসহ আবেদন পেয়েছি। কেউ এখনো লিখিত বা আমাদের কাছে মৌখিকভাবেও কোনো আপত্তি করেনি। ফেসবুকে বিভিন্ন কথাবার্তা লিখছেন বলে শুনেছি। কিন্তু প্রমাণপত্র উপস্থাপন ছাড়া কেউ কোনো দাবি করলে সেটা তো আমাদের বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ নেই।’

অ্যাডভোকেট রবি রায় দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান। এখন পর্যন্ত আমাদের আরজির বিরুদ্ধে কেউ কোনো দলিল উপস্থাপন করেননি। কারও কোনো দাবি থাকলে প্রমাণসহ আদালতে এসে সুরাহা করতে হবে।’

সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারির প্রপৌত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. সৈয়দ মিশকাতুন নুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘সৈয়দ গোলামুর রহমান একজন আল্লাহর ওলী ছিলেন। আমরা জেনে এসেছি, ওই স্কুলের সাবেক শিক্ষক মরহুম ছালে আহমদ মাস্টারের প্রস্তাবে রহমানিয়া মঞ্জিলের নামে স্কুলটির নামকরণ হয়েছে। এখন যা শুনছি, তাতে আমরা ব্রিবত। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। সব বিষয় আমরা অবগত আছি। আমরা একটি সুন্দর সমাধান চাই।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড পাকিস্তান আমল বঙ্গবন্ধুর নামে বিদ্যালয় রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় শেখ মুজিব একাডেমি স্কুলের নাম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে হামলার হুমকি!
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৫

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর