Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনের ‘বিভক্ত’ আয়োজনে ‘অস্বস্তি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ মার্চ ২০২৪ ১৪:১৭

স্বাধীনতা দিবসে একাত্তরের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাবনত ছিল সারাদেশ। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে স্বাধীনতা দিবসে সব শ্রেণিপেশার মানুষের সম্মিলিত শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনটি ভাগ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশন বরাবরের মতো শহিদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসন আলাদাভাবে নবনির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে আরেকটি আয়োজন করে, যে দায়িত্ব অতীতে কখনোই সরকারি সংস্থাটির ছিল না।

এ পরস্থিতিতে এবারের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে নানা সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। রীতি অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। যথারীতি এবারও মেয়র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সূর্যোদয়ের পর। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে রাতেই শ্রদ্ধাপর্ব শেষ করে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ায় এবার শহিদ মিনারের আয়োজনও অনেকটাই ‘প্রাণহীন’ দেখা গেছে।

সম্মিলিত আয়োজনটি বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ জন্য সরকারি কিছু কর্মকর্তার আমলাতান্ত্রিক মনোভাবকে তারা দায়ী করেছেন।

এরপরও পুষ্পস্তবক অর্পণ, কুচকাওয়াজ, আলোচনা, গান-কবিতাসহ নানা আয়োজনে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেওয়া বীর সন্তানদের স্মরণ করছে বন্দরনগরী। যে মানুষটির ডাকে বাংলার মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিও এ দিন প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহিদ মিনারে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগে পুলিশের একটি চৌকস দল শহিদ মিনারে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন করে। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।

চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। ছবি: সারাবাংলা

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম মাসুম, নুরুল আমিন, গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের, সলিমউল্লাহ, আবুল হাসনাত মো. বেলাল, আবদুল মান্নান, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী ও আনজুমান আরা, ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমি, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমাম হোসেন রানা, উপ-সচিব আশেকে রসুল টিপুসহ সিবিএ নেতারা, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং চসিকের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছিলেন।

এ সময় মেয়র বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামে ভূমিকা ঐতিহাসিক। শুধু ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ নয়, স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করতে চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের ডাকে বিশাল জনসভায় প্রথম জনতার সামনে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা কর্মসূচির ঐতিহাসিক ঘোষণা প্রদান করেন। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। পাকিস্তানিদের ভিত কাঁপিয়ে দেয়া অপারেশন জ্যাকপট, যার মাধ্যমে পাকিস্তানিদের তিনটি বড় অস্ত্রবাহী জাহাজ পানিতে তলিয়ে যায় তাও পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দরে।’

‘তবে পর্যাপ্ত গবেষণা ও প্রচারের অভাবে চট্টগ্রামের এতসব ঐতিহাসিক ভূমিকা ও অর্জন জনগণের কাছে সেভাবে পৌঁছেনি। তরুণদের প্রতি আমাদের অনুরোধ গবেষণা ও প্রচারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের এই ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা জনতার কাছে ছড়িয়ে দিতে। যে চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সে চেতনাকে শাণিত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে তরুণদের,’— বলেন সিটি মেয়র রেজাউল।

পরে মেয়র নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং বঙ্গবন্ধু কর্নারের উদ্বোধন করেন।

নগরীর দক্ষিণ কাট্টলীতে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সেখানেও পুলিশের একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে। এরপর বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ ও জেলা কমান্ডার এ কে এম সরওয়ার কামালও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এবারই প্রথম অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ পেয়েছে চট্টগ্রাম। সেখানেও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনেকেই শ্রদ্ধা জানান স্বাধীনতা দিবসে। ছবি: সারাবাংলা

ডিআইজি ও পুলিশ সুপার নগরীর হালিশহরে জেলা পুলিশ লাইনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেন। সিএমপি কমিশনার নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের শহিদ মিনারেও শ্রদ্ধা জানান।

সকাল ৮টায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ শুরু হয়। কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার, সিএমপি কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে ডিসপ্লেতে অংশ নেয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও পুলিশ, কারারক্ষী, ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, বাংলাদেশ স্কাউটস, গার্লস গাইড এতে অংশ নেয়।

কুজকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘৫৩ বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। গৌরবময় লাল সবুজের পতাকা পেয়েছে বাংলাদেশ। বহির্বিশ্বে বাঙালির শাশ্বত অর্জনকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে।’

স্মৃতিসৌধে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে শাটল বাসের ব্যবস্থা করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নেওয়া হয় আলাদা চারটি বাসে করে।

এর আগে দিবসের প্রথম প্রহরে সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে অস্থায়ী শহিদ মিনারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, স-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সাংসদ নোমান আল মাহমুদ ও হাসান মাহমুদ হাসনী, আইন সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে সকালে দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। নগর মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে সকালে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় মনোরস ডিসপ্লে। ছবি: সারাবাংলা

এর একদিন আগেই সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা নগরীর ষোলশহরে বিপ্লব উদ্যানে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এ সময় নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্করসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সমবেতদের উদ্দেশে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতায় জাতি যখন নেতৃত্বশূন্য-দিশেহারা, তখনই জিয়াউর রহমান উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। এমনই এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানে এসে তিনি পাকবাহিনীর বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। কেউ চাইলেই এ ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারবে না।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে নগর বিএনপির পক্ষ থেকে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এটা বড় আয়োজন। এ জন্য একদিন আগেই শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।’

তবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি দিবসের প্রথম প্রহরে সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে বিপ্লব উদ্যানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। দক্ষিণের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনামসহ নেতাকর্মীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির উদ্যোগে অস্থায়ী শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সহকারি সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উত্তম চৌধুরী, ফরিদুল ইসলাম, সদস্য ডা. চন্দন দাশ ও প্রদীপ ভট্টাচার্যসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লেতে অংশ নেয়। ছবি: সারাবাংলা

জেলা ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপ, জাসদ, বাসদসহ আরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এ সময় সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশ, সহ-সভাপতি প্রবাল দে, বিধান বিশ্বাস, সুমন সেন ও তপন শীল, সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা, সহ-সম্পাদক জয় সেন ও ভাস্কর রায় উপস্থিত ছিলেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সংক্ষিপ্ত জমায়েতে মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা, বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান প্রতিহত করা এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের অসমাপ্ত বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়ে।

বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, উদীচী চট্টগ্রামের বিভক্ত আরেক অংশ, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরসহ আরও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

এদিকে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর অবস্থায় থাকা বিদেশি বিভিন্ন জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বন্দরের কর্মকর্তারা। এ সময় বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ফুল ও উপহার সামগ্রী তাদের দেওয়া হয়। বিজিবি দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়ন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে।

চট্টগ্রামে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা জানানোর এমন বিভক্ত আয়োজন নিয়ে অস্বস্ত্বি ছিল অনেকের মধ্যে। সকালে শ্রদ্ধা নিবেদন সময় আনুষ্ঠানিক ধারাভাষ্য না দিয়ে অস্থায়ী শহিদ মিনারের একপাশে বসে থাকতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নেতা ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী ও জ্যেষ্ঠ্য সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরীকে। লোক সমাগম কম হওয়ায় নিরাপত্তার আয়োজনও ছিল ঢিলেঢালা।

মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লেতে শিক্ষার্থীরা ফুটিয়ে তোলে স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা দিক। ছবি: সারাবাংলা

এমন বিভক্তি নিয়ে অস্বস্ত্বির কথা জানিয়ে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি আমাদের সবার ছিল। কিন্তু সেটা কোথায়, কীভাবে নির্মাণ করা হবে, সে বিষয়ে প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনগুলোর সঙ্গে বসে সুচিন্তিত মতামত নেওয়া সমীচীন ছিল। এখন শহরের একপাশে, যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো সহজ নয়, সেখানে একটি অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ বানিয়ে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে— সবাই এখানে ফুল দেন।’

‘শ্রদ্ধা নিবেদন করবে মানুষ তার হৃদয় থেকে, নিজের চেতনা থেকে। নিজেরাই গাড়িতে করে লোকজন নিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আমলাতান্ত্রিক আয়োজন একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের পদক্ষেপ স্বাধীনতা দিবসের যে চেতনা, সেটাকে ম্লান করেছে। চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারটিকে সংস্কারের নামে ব্যবহারের অযোগ্য করে ফেলা হয়েছে। কী উদ্দেশে এসব করা হচ্ছে, সেটা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না,’— বলেন অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর।

চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারও সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করে হঠাৎ একটি স্মৃতিসৌধ বানিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। সম্মিলিত শ্রদ্ধা নিবেদনের যে ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, সেটা আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে ম্লান হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের যে সর্বজনীন চেতনা, সেটাকে ধরে রাখার বদলে ক্রমাগতভাবে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

এদিকে স্বাধীনতা দিবসে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত প্রগতিশীল সাধারণ শিক্ষক সমাজ’। সকালে চবিতে স্বাধীনতা স্মারক চত্বর ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সংগঠনটি।

এ সময় শিক্ষকদের মধ্যে সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল হোসাইন, তাপষী ঘোষ রায়, ইকবাল আহমেদ, মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সোহেল, রামেন্দু পারিয়াল, বিশ্বজিৎ, রাজপতি দাশ, মাঈন উদ্দিন, সাদাত আল সাজীব, কাজী নূর সোহাদ, হানিফ মিয়া, আফতাব উদ্দিন, শহীদুল ইসলাম, সুমন গাঙ্গুলি, সুমন বড়ুয়া, নঈম উদ্দিন হাছান, আওরঙ্গজেব চৌধুরী, মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, শাহ আলম, এস এ এম জিয়াউল ইসলাম, শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময়, নাসরিন আক্তার, শারমিন জামাল, ইব্রাহিম খলিল আল হায়দার, কাজী মেজবাহ উদ্দিন আহমদ, ফারহানা রহমান কান্তা, জয়া দত্ত এবং ফারহানা রুমঝুম ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

অস্থায়ী শহিদ মিনার চট্টগ্রাম জাতীয় দিবস বিভক্ত আয়োজন শ্রদ্ধা নিবেদন স্বাধীনতা দিবস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর