সলংগা গণহত্যার দিনটিকে জাতীয় দিবসের স্বীকৃতি দিতে আইনি নোটিশ
২৭ মার্চ ২০২৪ ১৫:৫০
ঢাকা: ২৭ জানুয়ারি সলংগা গণহত্যা দিবসকে জাতীয়ভাবে পালন এবং সলংগা গণহত্যার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের জন্য আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (২৭ মার্চ) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে মন্ত্রি পরিষদ সচিব, সংস্কৃতি সচিব, জনপ্রশাসন সচিব এবং সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জের সলংগা হাটে ঘটে যাওয়া বৃটিশ পুলিশের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় স্থানীয়ভাবে প্রতিপালিত হয়ে আসা সলংগা গণহত্যা দিবসকে জাতীয় দিবসের স্বীকৃতি প্রদাণ এবং সংশ্লিষ্ট জায়গাটিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের জন্য আইনি নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।
আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন বলেন, ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি ছিল সলংগা হাটের দিন। এটিই ছিল এলাকার সবচেয়ে বড় হাট। সেখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সেদিন যুবক আব্দুর রশিদের (যিনি বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ‘মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ’ নামে পরিচিত) নেতৃত্বে সলংগা হাটে চলতে থাকে বৃটিশ পণ্য বর্জনের প্রচারাভিযান। ‘বিলেতি পণ্য বর্জন করো, এদেশ থেকে বৃটিশ হটাও’- শ্লোগানে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচারাভিযান যখন তুঙ্গে, তখন কংগ্রেস অফিস থেকে আব্দুর রশিদকে গ্রেফতার করা হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সেদিন বৃটিশ বেনিয়াদের নৃশংসতার এক রক্তাক্ত অধ্যায় রচিত হয় সলংগায়।
সমগ্র ভারতবাসীর জন্য রক্তাক্ত বিদ্রোহের ঐতিহাসিক এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয় সেখানে। ৩৯ জন বৃটিশ পুলিশের রাইফেলের মূহূর্মূহ গুলিতে রক্তের বন্যা বয়ে যায় সলংগার মাটিতে। পাবনার ম্যাজিস্ট্রেট আর. এন দাস, সিরাজগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক এস. কে সিনহা এবং পাবনা জেলার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। সেদিনের সন্ধ্যার আলো আঁধারীতে সলংগার মাটি নিহত ও আহত মানুষ এবং গৃহপালিত পশুর রক্তে ভেসে যায়। নিহতদের লাশ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় সিরাজগঞ্জের রহমতগঞ্জে। সেখানে তৈরি করা হয় বাংলাদেশের প্রথম ‘গণকবর’। আজও সে ‘গণকবর’ সলংগার নৃশংস হত্যাকান্ডের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। এ ছাড়া হোসেনপুর, বাসুদেবকোলসহ সলংগার বিভিন্ন জায়গায় নিহতদের কবরস্থ করা হয়। সরকারি হিসাবে এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা দেখানো হয় সাড়ে চার হাজার। কিন্তু বেসরকারি তথ্যমতে এ সংখ্যা দশ সহস্রাধিক বলে জানা যায়।
নোটিশদাতা বলেন, সলংগার নির্মম এ ঘটনাকে কেউ কেউ জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের চেয়েও ভয়ংকর ও হৃদয় বিদারক বলে উল্লেখ করেছেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও প্রকাশনায় এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের স্বীকৃতি রয়েছে। ইতিহাসে দিনটিকে ‘সলংগা দিবস’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দিবসটি কেবল স্থানীয়ভাবেই পালন করা হয়। জাতীয় দিবস হিসাবে এটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি আজও। এমনকি ঘটনাস্থলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ পর্যন্ত স্থাপন করা হয়নি।
সলংগা অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে এ দাবী জানিয়ে আসছে। জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও বই-পুস্তকে অনেক লেখালেখিও হয়েছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলও এ ব্যাপারে সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু জাতীয় দিবস ঘোষণা বা স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন কোনটাই আলোর মুখ দেখেনি।
সলংগা বিদ্রোহের বয়স একশ’ বছর পার হয়েছে। এত বছর পরও দিবসটি জাতীয় দিবস হিসাবে ঘোষণা এবং একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন না হওয়া অত্যন্ত দূঃখজনক। জাতি হিসাবে এটি আমাদের জন্য ব্যর্থতা ও লজ্জার বটে। তাই একজন সলংগাবাসী এবং সচেতন নাগরিক হিসাবে বিষয়টি অত্যন্ত যৌক্তিক এবং গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এ আইনি নোটিশ প্রেরণ করা হয়।
আগামী ১৫ (পনের) কার্যদিবসের মধ্যে এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার জন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে মর্মে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ