নিরাপত্তাহীন ১২ তলা পানির টাওয়ারে উঠছে শিশুরা, দুর্ঘটনার আশঙ্কা
২৮ মার্চ ২০২৪ ১০:১৬
কক্সবাজার: প্রায় ১২ তলা উঁচু ভবন সমান নির্মাণাধীন পানির টাওয়ার বা উচ্চ জলাধারে ওপরে বসে নীচের দিকে পা ঝুলিয়ে বসে আছে তিন সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু। কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়া’ই এভাবে বসে থাকার দৃশ্য যে কাউকে ভয় লাগিয়ে দেওয়ার মত। কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্টস্থ পানির টাওয়ারের ঘটছে এমন ঘটনা।
কাছে গিয়ে দেখা যায়, শুধু এই তিন পথশিশু’ই নয় ওখানে আরও প্রায় ১০-১২ জন টাওয়ারে ওঠানামা করছে। এই কাজে তারা একেকজন সময় নিচ্ছে ১৫-২০ মিনিট। কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই জরুরি মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া বিশেষ রড বেয়ে তারা ওপরে উঠছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, পথশিশুরা প্রতিনিয়ত নির্মাণাধীন এই টাওয়ারে ওঠানামা করে। তাদের কারো কথা শোনে না। এছাড়া এসব দেখাশোনার জন্য কোন দারোয়ান বা নিরাপত্তাকর্মী নেই। এতে যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। রয়েছে উচু থেকে পড়ে হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে মোহাম্মদ রায়হান জানান, অন্যদের দেখাদেখি সেও টাওয়ারে উঠছে। প্রথম প্রথম ভয় লাগলেও এখন স্বাভাবিক। ওপর থেকে ভালভাবে সমুদ্র সৈকতসহ পুরো শহর দেখা যায়। এটি দেখতে অনেক ভাল লাগে।
মোহাম্মদ জমির উদ্দিন নামে আরেক শিশু জানান, ভয় লাগলেও ওই টাওয়ারে উঠতে ভাল লাগে। অনেক ওখানে উপরে ওঠে বিভিন্ন জিনিস খায়। আবার অনেকে সাহস দেখিয়ে টাওয়ারের ওপর বসে পাঁ ঝুঁলিয়ে বাজি লাগে।
কেউ বাধা দেয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে ‘অনেক সময় আশপাশের দারোয়ান ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাধা দিলেও তাদেরও চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিকই ওপরে উঠে যায়। তবে ভয় লাগে যদি ওপর থেকে পড়ে যায়। এছাড়া ওপরে উঠার সময় নীচের দিকে কম তাকায়’।
টাওয়ার সংলগ্ন গণ শৌচাগারের দায়িত্বরত একজন জানান, শিশুগুলো কারো কথা শোনে না। এই উঁচু টাওয়ার দেখলে এমনিতে ভয় লাগে তারমধ্যে শিশুরা নির্ভয়ে ওপরে উঠছে। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনায় ঘটতে পারে। আসল কথা হলো, তারাতো শিশু। অনেক সময় তারা বিপদের ভয়াবহতা বুঝতে পারছে না।
স্থানীয় আরেক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, ঝুঁকি নিয়ে টাওয়ারে ওঠার ক্ষেত্রে শিশুরা যতটুকুনা দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ অথাৎ যারা এই টাওয়ারের দেখাশোনা দায়িত্বে রয়েছে। তাদেরই দায়িত্ব শিশুসহ কেউ যেন ঝুঁকি নিয়ে টাওয়ারে উঠতে না পারে। এটি তাদের ব্যর্থতা ছাড়া কিছুইনা।
এই প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা জানান, কক্সবাজার শহরের পাঁচটি পয়েন্টে অবস্থিত ‘ওভার হেড বা উচ্চ জলাধার’ তৈরি করা হয়েছে শহরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে। নির্মাণাধীন থাকার কারণে হয়তো এমনটা হচ্ছে। তবে বিপদ হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এই প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার মো. বখতিয়ার জানান, শহরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে শহরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, ঈদগাহ ময়দান, সুগন্ধা পয়েন্ট, হাসমিয়া মাদ্রাসা পয়েন্টে ওভার হেড বা উচ্চ জলাধার স্থাপন করা হয়েছে। এই টাওয়ারগুলোর উচ্চতা ১০ থেকে ১২ তলা পর্যন্ত। টাওয়ারের কাজ শেষ হলেও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কিছু পথশিশু সুগন্ধা পয়েন্টের টাওয়ারে ওঠার খবর পাওয়া গেছে। এই খবরের পর ওই টাওয়ারে ওঠার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র ইন্সপেক্টর ওমর ফারুক জানান, নির্মাণাধীন টাওয়ারে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ঝুঁকি নিয়ে ওঠার খবর তিনি এখন জানতে পেরেছেন। শিশুদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সারাবাংলা/এনইউ