Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এক বছরে টেকনাফে ১০৯ অপহরণ

ডিস্ট্রিক্ট করসেপন্ডেন্ট
২৮ মার্চ ২০২৪ ১২:২৪

কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফে ‘মুক্তিপণের দাবিতে’ পৃথক ঘটনায় আরও আটজনকে অপহরণ করেছে পাহাড়ি অপহরণকারী। গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০৯ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাংস্থ ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিম পাহাড়ি এলাকায় এবং পুটিবুনিয়া পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে উনচিপ্রাং এলাকা থেকে ছয়জন এবং পুটিবুনিয়া এলাকা থেকে দুইজনকে অপহরণ করা হয়। অপহৃতের স্বজনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, হোয়াইক্যংয়ের উনচিপ্রাং এলাকা থেকে অপহৃত ছয়জনকে ছেড়ে দিতে দুর্বৃত্তরা ইতিমধ্যে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে।

তবে হোয়াইক্যংয়ের পুটিবুনিয়া এলাকা থেকে পৃথক ঘটনায় অপহৃত দুইজনের স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বুধবার রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহজালাল ঘটনার ব্যাপারে এসব তথ্য সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অপহৃতরা হলেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এর করাচি পাড়া এলাকার লেদু মিয়ার ছেলে শাকিল মিয়া (১৫), বেলালের ছেলে জুনাইদ (১৩), নুরুল আমিনের ছেলে সাইফুল (১৪), শহর আলীর ছেলে ফরিদ (৩৫), নাজির হোছনের ছেলে সোনা মিয়া (২৪), শহর মুল্লুকের ছেলে গুরা পুইত্যা (৩২)।

এছাড়া পৃথক ঘটনায় অপহৃত অপর দুইজন হলেন, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যং উত্তর পাড়ার আলী আকবরের ছেলে ছৈয়দ হোসেন ওরফে বাবুল (৩৩) এবং রইক্ষ্যং দক্ষিণ পাড়ার কালা মিয়া ওরফে লম্বা কালুর ছেলে ফজল কাদের (৪৭)।

ইউপি সদস্য মো. শাহজালাল বলেন, সকালে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং এলাকার ছয়জন বাসিন্দা স্থানীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় গরু চড়ানো ও চাষের কাজ করতে যান। তারা দুপুরের পরও বাড়ি ফিরেননি। এক পর্যায়ে দুপুর ২টার পর অপহরণকারী চক্রের এক ব্যক্তি অজ্ঞাত স্থান থেকে ০১৮৯৭২৬৬৮৮৮ নাম্বার থেকে একজনের বাবার মোবাইল নাম্বারে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। অপহৃতদের মারধর করার চিৎকার শোনানো হয়। এ বিষয়ে পুলিশকে জানালে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বুধবার সকালে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পুটিবুনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু চড়াতে গিয়ে ছৈয়দ হোসেন ও ফজল কাদের নামের আরও দুইজন অপহৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী।

স্বজনদের বরাতে তিনি জানান, সকালে গরু চড়াতে গিয়ে তার ইউনিয়নের আরও দুই বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছে। বুধবার রাত ৯টার পরও তারা বাড়ি ফেরেনি। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দুইজনও দুর্বৃত্তদের হাতে অপহরণের শিকার হয়েছেন। এ ব্যাপারে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।

শাকিল মিয়ার বাবা লেদু মিয়া জানান, সকালে গরু চড়াতে গিয়ে বিকাল পর্যন্ত তার ছেলে ফেরত না আসায় উদ্বিগ্ন ছিলেন। এর মধ্যে একটি নাম্বার থেকে মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। এখন তারা আতঙ্কে রয়েছেন।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, এই আট জনের বিষয়টি নানা মাধ্যমে জানানোর পর ঘটনাস্থল ও স্বজনদের পরিবারে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলাপ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) টেকনাফের হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু আনতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন দুই জন। তারা হলেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং রোজার ঘোনা এলাকার আমির হোসেনের ছেলে অলি আহমদ (৩২) এবং কম্বনিয়া এলাকার ফিরুজের ছেলে নুর মোহাম্মদ (১৭)।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ হাসান বলেন, পাহাড়ি এলাকা থেকে দুজনকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, অপহৃত দুইজনের পরিবার থেকে বুধবার সকালে ফোনে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কত টাকা চাওয়া হয়েছে অপহৃতদের স্বজনরা কিছুই বলছেন না। ধারণা করা হচ্ছে হুমকির কারণে পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধিদের না জানিয়ে গোপনে টাকা দিয়ে তাদের ফেরত আনার চেষ্টা করছেন স্বজনরা।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, আবারও দুইজন অপহরণের বিষয়টি শোনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বিকেলের দিকে পাহাড়ে গরু আনতে গিয়ে দুই জনকে জিন্মি করা হয়েছে। কিন্তু বুধবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত অপহৃতদের পরিবারের সদস্যরা কোনো তথ্য দিচ্ছে না। এমন কি একাধিকবার চেষ্টার পরও লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে না। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। তবে স্বজনরা তথ্য না দেওয়ায় পুলিশ তার কাজে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন।

গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০৯ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের পরিবারের তথ্য বলছে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে।

সারাবাংলা/আইই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর