Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাল ভিসায় এয়ারপোর্টে ধরা, ছয় দিন ধরে দালালের বাড়িতে ৬ যুবক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৮ মার্চ ২০২৪ ২৩:৩৪

জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ছয়জন যুবক শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাল ভিসা নিয়ে ধরা খেয়ে দালালের বাড়িতে এসে ছয় দিন ধরে অবস্থান করছেন। টাকা ফেরত নিয়ে তারা নিজ বাড়িতে ফিরতে চান।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) উপজেলার জিন্দারপুর গ্রামে দালালের বাড়িতে তারা এখনো অবস্থান করছেন।

দালালের বাড়িতে অবস্থানরত যুবকরা হলেন উপজেলার মোলামগাড়ীহাটের মেহেদী হাসান, জিন্দারপুর গ্রামের আবু তাহের পাঁচগ্রামের আতিকুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, আব্দুল ওয়াদুদ, আলামিন তালুকদার।

অবস্থানরত যুবক, দালালের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জিন্দারপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে দালাল সুলতান মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান। এলাকায় তাকে মাবুদ নামে চেনেন। সাড়ে তিন বছর আগে একই এলাকার পাঁচগ্রাম, মোলামগাড়ীহাট ও জিন্দারপুর গ্রামের ছয়জন যুবক একসঙ্গে মালয়েশিয়াতে যাওয়ার জন্য দালাল মাবুদের সঙ্গে ৩৩ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তির পুরো টাকা তারা পরিশোধও করেছেন।

ছয় মাস আগে তাদের মালয়েশিয়া নয়, তাজিকিস্তানে পাঠানোর কথা হয়। তাতেও রাজি হন ওই যুবকরা। অনেক দেরিতে হলেও চলতি বছরের ১৮ মার্চ তাদের বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাজিকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকায়। এয়ারপোর্টে চেকিংয়ের সময় জানতে পারেন ম্যানপাওয়ার, ভিসা, বিএমইটি স্মার্ট কার্ড জালিয়াতি করে তাদের ভুয়া কাগজপত্র দিয়েছেন দালাল মাবুদ। শুধুমাত্র বিমানের টিকিট ছিল আসল। এয়ারপোর্ট থেকে তাদের ফেরত আসতে হয়। তাই তারা নিজ বাড়িতে না গিয়ে দালাল সুলতান মাহমুদের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

এখানেই শেষ নয়, গত ছয় মাস আগে একই উপজেলার আতাহার গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আমিরুল ইসলাম, জিন্দাপুর গ্রামের মোশারফের ছেলে মোহসিন আলী, বেলগড়িয়া গ্রামের ফরিদুলের ছেলে ফয়সাল, মহেশপুর গ্রামের ইউনুসের ছেলে রিমন, পাঁচগ্রামের মৃত মজিদের ছেলে মোস্তফাসহ অনেককেই মালয়েশিয়াতে একই কৌশলে পাঠিয়েছে দালাল মাবুদ। তারা বর্তমানে কাজ না পেয়ে মাবুদের লোকজনদের কাছে বন্দি অবস্থায় মালয়েশিয়াতে জীবনযাপন করছেন।

দালাল মাবুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছয়জন যুবক বাড়ির ভিতরে দড়ি দিয়ে বাঁধা লাগেজ নিয়ে অবস্থান করছেন। সব ঘরের দরজাই বন্ধ। বাড়িতে দালাল মাবুদের বাবা আব্দুর রাজ্জাক ও তার বড়ভাই আব্দুস সোবহান রয়েছেন। তবে দালাল সুলতান মাহমুদ নেই।

এ সময় যুবকরা বলেন, আমরা সবাই নিঃস্ব। এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি এসে এ বাড়িতে অবস্থান করছি। বুধবার দিবাগত রাতে মাবুদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়েছে। তারা সমাধানের জন্য মাবুদের বাড়িতে বৈঠকেও বসেছিলেন কিন্তু মাবুদ বৈঠকের অবস্থার বেগতিক বুঝে পালিয়ে যান।

অবস্থানরত যুবক আতিকুল ইসলাম বলেন, জমি বন্ধক রেখে দালাল মাবুদকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ছয় দিন ধরে এ বাড়িতে অবস্থান করছি।

আরেক যুবক আবু তাহের বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে যাওয়া হয়নি তাতে কোনো সমস্যা নেই। তাজিকিস্তানে যাওয়ার দিনে কেন ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আমাদের ফাঁসানো হলো। আমরা আর বিদেশে যাব না, টাকা ফেরত চাই।’

জিন্দারপুর ইউপির ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ও ওই গ্রামের বাসিন্দা রাজা মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে সবকিছুই জানি। মাবুদ ধোঁকাবাজ। যারা আজ অবস্থান করছেন তারা সবাই দরিদ্র পরিবারের ছেলে।’

দালাল সুলতান মাহমুদ ওরফে মাবুদ বলেন, ‘আমি যে এজেন্সির মাধ্যমে তাদের পাঠাচ্ছি মূলত তারাই এসব ভুয়া কাগজপত্র প্রস্তুত করেছে। তারা যে ভুয়া কাগজপত্র করেছে তার কিছুই জানি না। টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আমি তাদের কাছে সময় চেয়েছি।’

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, ‘৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতারিত যুবকদের অভিযোগ দিতে ডাকা হয়েছিল কিন্তু তারা অভিযোগ দিতে নারাজ। মাবুদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/একে

জাল ভিসা টপ নিউজ প্রতারণা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর