Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জয়পুরহাটে জমে উঠেছে ৫১৫ বছরের ঘোড়ার মেলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৪:১৫

জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ঐতিহ্যবাহী গোপিনাথপুর মেলায় ঘোড়ার হাট জমে উঠেছে। বাহাদুর, মহারাজা, রানি, সুইটি, সোনার চাঁদ, সোনার তরী আরও কত যে বাহারি নাম! ওদের ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তায়ও মেলে নামের সার্থকতা। ঘোড়াগুলোর দুলকী চলনে বিদ্যুৎ গতি, চোখের পলকে যেন মাইল পার। এমন নানামুখী গুণের কারণে দেশি-বিদেশি ঘোড়াগুলোর কদরও যথেষ্ট।

পছন্দের ঘোড়া পেতে ক্রেতাদের মধ্যেও রীতিমতো কাড়াকাড়ি। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে জয়পুরহাটে শুরু হয় মাসব্যাপী মেলা। মূল মেলা ১৩ দিন হলেও পশুর মেলা হয় পাঁচ দিন। ঘোড়া ছাড়াও মহিষ, গরু, ভেড়া ও ছাগল বেচাকেনা হয় এ মেলায়।

বিজ্ঞাপন

আয়োজকরা বলছেন, দেশের একমাত্র ঘোড়া বেচাকেনার হাট এটি। এ কারণে সারাদেশ থেকে আনা কয়েক হাজার ঘোড়া জড়ো করা হয় এখানে। একে ঘোড়ার মিলনমেলা বললেও অত্যুক্তি হবে না। ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথপুর মেলার ঘোড়ার হাট। দরদাম ঠিকঠাকের পর একটি খেলার মাঠে ঘোড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড়ার দৌড়।

দোল পূর্ণিমা মেলা কমিটি জানায়, ৫১৫ বছরের পুরনো এ মেলা শুরু থেকেই ঘোড়ার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। স্বাধীনতার পরও মেলায় নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলো থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া আসতো। বর্তমানে সেসব এখন স্মৃতির পাতায় হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঘোড় সওয়ারি ও ঘোড়া মালিকরা এ মেলায় আসেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, এ মেলায় ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘোড়ার আমদানি হয়। এখানে পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে নয় লাখ টাকা দামের ঘোড়া রয়েছে। ক্রেতারা দেখেশুনে পছন্দ মত কিনছেন ঘোড়া।

বিজ্ঞাপন

এদিকে মেলায় ঘোড়া ছাড়াও গরু-মহিষ, গৃহস্থালি সামাগ্রী, মন্ডা-মিঠাইসহ নানা দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।

নওগাঁ থেকে মেলায় এসেছেন আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, বাড়িতে ঘোড়া পালন করি। আর প্রতিবছর এ মেলায় আসি ঘোড়া বিক্রি করার জন্য। আমার সবচেয়ে বড় ঘোড়ার নাম বাহাদুর। এটি তাজি জাতের একটি ঘোড়া। দাম চাচ্ছি নয় লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা দাম বলছে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত।

চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে মহারাজা নামে একটি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন আব্দুল বারী নামে একজন। তিনি বলেন, বড় ঘোড়া নিয়ে আসছি তিনটা ও ছোট ঘোড়া দুইটা। আমাদের সবচেয়ে বড় ঘোড়া মহারাজা। এর দাম সাত লাখ টাকা। বিভিন্ন জন বিভিন্ন দাম বলছে, তিন থেকে চার লাখ। এখন শেষ পর্যন্ত দেখি দামে হলে বিক্রি করবো।

দিনাজপুর থেকে আসা মোশাররফ হোসেন বলেন, গোপীনাথপুর মেলা ঐতিহ্যবাহী একটি পুরাতন মেলা। আগে আমার বাপ দাদারা এ মেলায় আসতো। তারা মরে যাওয়ার পর আমি স্বাধীনতার সময় থেকে এ মেলায় আসি। বেচা হোক আর না হোক, প্রতিবছর এ মেলায় আসার একটা আনন্দ জাগে। কোন বছর বিক্রি হয়, আবার কিনি, আবার পরের বছর আসি।

নওগাঁ থেকে আসা মোস্তাকিম নামে এক ঘোড়া বিক্রেতা বলেন, আগে আমার চাচা এ মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসতো। এখন চাচার সাথে আমিও আসি। আমার এখানে ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আড়াই লাখ টাকা দামের বিভিন্ন ঘোড়া আছে।

আনোয়ার হোসেন নামে এক ঘোড়া ক্রেতা বলেন, আমার অনেকদিনের শখ একটা ঘোড়া কিনবো। সেজন্য মেলায় এসেছি। বিভিন্ন জাতের ঘোড়া দেখলাম। দরদাম করে একটা কিনবো।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ঘোড়া ক্রেতা তাজুল ইসলাম সরকার বলেন, আমার একটি ঘোড়া ছিল। সেই ঘোড়াটি বিক্রি করে দিয়েছি। আবারও ঘোড়া কিনবো তাই সিরাজগঞ্জ থেকে এখানে এসেছি।

আসলাম হোসেন নামে একজন বলেন, এই মেলায় বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া গেলেও মূল আকর্ষণ ঘোড়ার মেলা। মেয়েকে নিয়ে এসেছি। অনেক ঘোড়া দেখলাম। এছাড়া ঘোড়ার দৌড় দেখে অনেক ভাল লাগছে

গোপীনাথপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির প্রধান কর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি মেলা কমিটিও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। এত বড় পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, মেলায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/এনইউ

৫১৫ বছর ঐহিত্যবাহী ঘোড়ার মেলা জয়পুরহাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর