গবেষণাগারের বর্জ্য ফেলা হয় ড্রেনে, হুমকিতে ইবির পরিবেশ
৩০ মার্চ ২০২৪ ১০:৪১
কুষ্টিয়া: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) গবেষণাগারগুলোর বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বর্জ্যগুলো ফেলা হয় ভবন সংশ্লিষ্ট ড্রেনে। যা ড্রেনেজ টানেলের মাধ্যমে মিশে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক ও পুকুরের পানিতে। কিছু বর্জ্য সরাসরি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিসাধন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, কেমিক্যাল সম্পৃক্ত গবেষণায় শিক্ষকদের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৯টি বিশেষ থিসিস গবেষণাগার রয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় গবেষণাগারসহ বিভাগগুলোতে মোট ১২টি একাডেমিক গবেষণাগারে রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে গবেষণা করেন শিক্ষার্থীরা। বছরে এক কোটি টাকার অধিক মূল্যের প্রায় ৭০ রকমের অর্গানিক এবং নন-অর্গানিক কেমিক্যাল ব্যবহার হয়। এর মধ্যে কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, হাইডোক্লোরিক এসিড, সালফিউরিক এসিড, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডসহ অর্ধশতাধিক শক্তিশালী কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, গবেষণাগারে ব্যবহৃত কেমিক্যাল বর্জ্য নিষ্কাশন না হয়ে মিশে গেলে উদ্ভিদ ও পরিবেশের ওপর বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। স্বল্প মাত্রার কেমিক্যালও দীর্ঘ সময় ধরে পানি ও মাটিতে মিশলে একই রকম ক্ষতি হতে পারে। পরিবেশের ক্ষতি রোধে সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোতে রাসায়নিক পদার্থের পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার দাবি জানান তারা।
ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান হোসেন বলেন, ‘আমদেরকে নানা টক্সিক কেমিক্যাল ব্যবহার করতে হয়। যার বর্জ্য পরিবেশ এবং জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি। এগুলো যতটাই সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার হোক না কেন, এর কার্যক্রম নিরাপদ রাখা সম্ভব নয়। আমাদেরকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আলাদাভাবে পড়ানো হলেও এর বাস্তবায়ন হয় না। ইটিপি (শোধনাগার) প্ল্যান্ট নির্মাণের মাধ্যমে এসব ক্ষতি থেকে পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব।’
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বর্জ্য পরিশোধন করা না হলে তা সরাসরি প্রকৃতিতে প্রভাব ফেলবে। বর্জ্যগুলো পানিতে গিয়ে কীট-পতঙ্গ ও ব্যাঙের দেহে প্রবেশ করবে। যা মাছ ও পশুপাখি হয়ে মানবদেহে প্রবেশ করবে। এ ছাড়া লেড ও ক্যাডমিয়ামের মতো বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানিতে গিয়ে পৌঁছার আশঙ্কা থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে আন্ডারগ্রাউন্ড সিস্টেম করা হয়। এতে সব বর্জ্য সেখানে একাধিক পাত্রে জমা করা হয়। পরে নির্দিষ্ট সময় পরপর ন্যাশনাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থেকে সে সব বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়।’
জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিপুল রায় বলেন, ‘কেমিক্যাল বর্জ্যগুলো মাটি ও পানিতে মিশে পিএইচ মান ও অক্সিজেন মাত্রা তারতম্য ঘটায়। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জীবগুলোর ক্ষতিসাধন হয়। এতে মাটির উর্বরতা কমে এবং কৃষিকাজে ঠিকমত ফলন পাওয়া যায় না। এ জন্য ইটিপি প্ল্যান্ট করা যেতে পারে। তবে প্রথমত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের সমন্বয় দরকার।’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী একেএম শরীফ উদ্দীন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। বিভাগগুলো থেকে যদি কোনো প্রস্তাবনা আসে, তবে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই করে কাজ করা হবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অনুষদের যারা আছেন তারা ভালো বলতে পারবেন। ব্যাপারটা কীভাবে সমাধান করা যায় তা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মাধ্যমে প্রস্তাব এলে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারব। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।’
সারাবাংলা/একে