আইন অমান্য করে পাহাড় কেটে কুবিতে হচ্ছে বাস্কেটবল মাঠ
৩০ মার্চ ২০২৪ ০৮:২০
কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে বাস্কেটবল মাঠ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করেই এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণ পাশে বাস্কেটবল গ্রাউন্ড তৈরির জন্য একটি লাল মাটির পাহাড়ের প্রায় ৮০ ফুট কাটা হয়েছে। পাহাড় কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (সংশোধন) ২০১০-এর ৬-এর ‘খ’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না, তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে পাহাড় কর্তন করা যাবে।’ আইনে পাহাড় বা টিলা কাটার জন্য ছাড়পত্রের বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদফতর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো অনুমতি নেয়নি বলে জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১২ জন শ্রমিক বাস্কেটবল মাঠ তৈরির জন্য কাটছে পাহাড়। পরে এ মাটি দিয়ে বাস্কেটবল মাঠ লেভেল করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠের বিভিন্ন জায়গা সমান করা হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে এ বাস্কেটবল মাঠ। ড্রিম ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে।
তানভীর হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘লালমাই পাহাড়ের পাদদেশ ঘিরে এই ক্যাম্পাসটির সৌন্দর্যই হচ্ছে লাল পাহাড়। আমরা পাহাড়ি ক্যাম্পাস নিয়ে গর্ববোধ করি। কিন্তু প্রশাসনের একের পর এক পাহাড় কাটায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এসএম শহিদুল হাসান বলেন, ‘এটা জায়গা যারা নির্বাচন করেছে ওরা জানে। ওরা আমাদের যেখানে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের তো সেখানেই থাকতে হবে। এখানে অনুমতি নেওয়া হয়নি। যেহেতু জায়গাটা সমান না তাই আমরা সমান করার জন্য পাহাড় কাটার প্রয়োজন হয়েছে।’
তবে বাস্কেটবল মাঠের জন্য ওই জায়গাটাই কেন নির্বাচন করা হলো এ ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা দফতরের উপ-পরিচালক মনিরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
পরিবেশ অধিদফতর কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, ‘আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। ওইখানে গতকাল আমাদের পরিদর্শক পাঠিয়েছি। আমার মনে হয় এটার জন্য মামলা হয়ে যাবে। এটা আমরা তদন্ত করেছি এরপর রিপোর্ট বানিয়ে চট্টগ্রাম অফিসে পাঠাবো। চট্টগ্রাম অফিস থেকে মামলার অনুমতি দিলে আমরা মামলা করবো।’
অনুমতির বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর কুমিল্লা কার্যালয়ের পরিদর্শক জোবায়ের রহমান বলেন, ‘পাহাড় কাটার অনুমতি নেওয়া হয়নি। আমরা গতকাল ওই জায়গা পরিদর্শন করতে গিয়েছি। আমরা ওনাদের কারণ ব্যাখ্যা করার নোটিশ পাঠাবো রোববারে। আর কর্তৃপক্ষ আমাকে বলেছে পাহাড় পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিবে। যেগুলো কাটা হয়েছে ওইগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করে বাগান করে দিবে। ওইখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং একজন ইঞ্জিনিয়ার উপস্থিত ছিলেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড় কাটার অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা বা কেন নেওয়া হয়নি এ ব্যাপারে জানি না। ইঞ্জিনিয়ার দফতর বলতে পারবে।’
এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছোট-বড় টিলা ও পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে সময়ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতর থেকে কোনো ছাড়পত্র নেয়নি। ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সমাবর্তনের প্যান্ডেল তৈরির জন্য পাহাড় কাটা হয়। ২০২০ সালের ২ মার্চ অনুমতি না নিয়ে পাহাড় কাটায় কুবি ও ৪ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ লাখ পঁচিশ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদফতর।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বর্ধিতাংশ নির্মাণের সময় ও কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নির্মিত স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের সময় কাটা হয়েছে পাহাড়। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে পাহাড় কেটে সেই মাটি বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
সারাবাংলা/এমও