সাংবাদিকরা সরকারের ল্যাপডগ: আমীর খসরু
২৯ মার্চ ২০২৪ ২০:১৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাংবাদিকরা ওয়াচডগের বদলে সরকারের ল্যাপডগ বা কোলের কুকুর হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিএমইউজে) ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে এখন সাংবাদিকতার অবস্থা কী? বাংলাদেশ রাষ্ট্র যেভাবে চলছে, রাষ্ট্রের অঙ্গগুলো যেভাবে চলছে, সাংবাদিকতা তার চেয়ে ভালো অবস্থানে নেই। বিশেষ বিশেষ সাংবাদিক গোষ্ঠী এখানে সৃষ্টি করা হয়েছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়, রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় যাদের সাংবাদিকতা পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যারা চলে তারা সাংবাদিকতা করতে পারে না।’
সাংবাদিকদের ওয়াচডগ হতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তারা এখন হয়ে গেছে ল্যাপডগ মানে কোলের কুকুর। ওরা ওয়াচডগের বদলে এখন ল্যাপডগ হয়ে গেছে বাংলাদেশে। ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর ইমার্জেন্সির সময় সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল, একটু বাঁকা হয়ে সরকারের পক্ষে কথা বলতে। কিন্তু তারা বাঁকা হয়ে হামাগুড়ি দিচ্ছিল। সরকার বলেছিল, একটু বাঁকা হয়ে আমাদের পক্ষে লেখ। কিন্তু অতি উৎসাহী সাংবাদিকরা হামাগুড়ি দিচ্ছিল। বাংলাদেশেও সরকার বলছে হামাগুড়ি দিতে, কিন্তু ওরা এখন শুয়ে গেছে, সিজদায় পড়ে গেছে। বাংলাদেশ সরকার বলেছে- হামাগুড়ি দাও, এরা সিজদায় পড়ে গেছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার অবস্থা।’
যেসব সাংবাদিক সত্য বলার চেষ্টা করছে তাদের নিপীড়নের মুখে পড়তে হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যারা কিছু কিছু কথাবার্তা সাহস করে বলছে-লিখছে, তাদের বিরুদ্ধে একটা বড় ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। যারা জেলে যাচ্ছে, তারা তো যাচ্ছেই, বিভিন্নভাবে নির্যাতিত-নিপীড়িতও হচ্ছে। যেসব সাংবাদিক সংগঠন কিছু কথা বলার চেষ্টা করছে, তারা কিন্তু এখন বড় চাপের মধ্যে আছে। এর মধ্যেও ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অনেক বাধা সাহসিকতার সাথে কেউ কেউ চেষ্টা করে যাচ্ছে।’
এ অবস্থা থেকে সাংবাদিকদের মুক্ত হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকার কারণে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আওয়ামী লীগের বেনিফিশিয়ারি সাংবাদিকরা ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ সাংবাদিকরা মুক্ত হতে চাচ্ছে। তারা মুক্তির পথ খুঁজছে। তারা যদি মুক্ত হতে না পারে এখন, তাহলে আগামীদিনে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা বলে কোনোকিছু থাকবে না। সাংবাদিকতা পেশা বলে যে কিছু আছে, এটাও ভুলে যেতে হবে।’
দেশকে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে সবার দায়িত্ব আছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমি সবাইকে বলি, বিএনপির একার দায়িত্ব না এটা। বিএনপি গুম হবে, খুন হবে, মৃত্যুর মুখে যাবে, চাকরি হারাবে, ব্যবসা হারাবে, শুধু বিএনপির একার দায়িত্ব না। সাংবাদিকদের দায়িত্ব আছে, পেশাজীবীদের দায়িত্ব আছে, সর্বস্তরের মানুষের আজ দায়িত্ব আছে। ৯৫ শতাংশ মানুষ যারা ভোটকেন্দ্রে যায়নি, তারা কিন্তু তাদের একটা দায়িত্ব পালন করেছে। বিএনপি এবং বিরোধী দলের ডাকে তারা দায়িত্ব পালন করেছে, তারা কথা বলেছে, ঘরে বসে কথা বলেছে।’
‘আমরা বলেছি আপনারা নির্বাচনে যাবেন না। শেখ হাসিনা বলেছে, যেতে হবে। না গেলে আপনার ভাতা কাটা যাবে, না গেলে এলাকায় থাকতে পারবেন না, পুলিশের ধমক, আওয়ামী মাস্তান লীগের ধমক তো ছিলই। আমরা বলেছি, আপানার দেশের জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। এটা একটা গণভোট হয়েছে। এই গণভোটে দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ এই নির্বাচন, এই রেজিম, এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলি, ৯৫ শতাংশ, তারেক রহমান সাহেব অবশ্য ৯৭-৯৮ শতাংশ বলে থাকেন। বাকি ২-৩ শতাংশ কারা জানেন? যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, কিন্তু ভোট পায়নি। তারা হালুয়া-রুটির কারণে গিয়েছিল, কিন্তু হালুয়া-রুটি পায়নি, এখানে ২-৩ শতাংশ আছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা ভোট করে জিততে পারেনি, তারাও বলছে ভোট হয়নি। আমি আর ডামি আর কী! কিছু কিছু আমি হেরে গেছে, কিছু কিছু ডামি হেরে গেছে। আমিও বলছে ভোট হয়নি, ডামিও বলছে ভোট হয়নি।’
‘আবার ভিক্ষকের দল জাতীয় পার্টির মতো যারা যারা হালুয়া-রুটির জন্য গিয়েছিল, তারাও বলেছে ভোট হয়নি। শেষপর্যন্ত একমাত্র শেখ হাসিনা এবং তার কিছু লোকজন বলছে ভোট হয়েছে। তারেক সাহেবের হিসেব তাহলে ঠিক আছে। আমার ৯৫ শতাংশের পর উনার ৩ শতাংশ কোত্থেকে আসছে, আমি এখন বুঝে গেছি। যারা গেছে, তাদের মধ্যে ২-৩ শতাংশ বলছে ভোট হয়নি। তাহলে বাংলাদেশের ২ শতাংশ মানুষও এ নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি, প্রত্যাখ্যান করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছ, তাদের মধ্যে আরও ২-৩ শতাংশ প্রত্যাখান করার পর এখন আওয়ামী লীগ একা ছাড়া নির্বাচনের পক্ষে আর কেউ নেই। আজ সমস্ত দেশ ঐক্যবদ্ধ। সুশীল সমাজ যারা কথা বলতো না, তারাও এখন কথা বলছে।’
বিএনপির মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচনে যাবার পক্ষে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকে বলেছেন, ভোটে অংশগ্রহণ করলে বোধহয় ইমরান খানের মতো কিছু হতে পারতো। আরে পাকিস্তানে তো কেয়ারটেকার সরকার কাজ করছে, পাকিস্তানে তো এখনও বিচার বিভাগ কাজ করছে বহুলাংশে, পাকিস্তানের সব রাষ্ট্রীয় সংগঠন দখল করতে পারেনি শতভাগ। এজন্য পাকিস্তানে ওরা কিছু করতে পেরেছে।’
বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা খসরু বলেন, ‘বিএনপি খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। বিএনপি আজ অনেক বেশি পরিণত, অনেক বেশি শক্তিশালী। আমি মনে করি, বিএনপি আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক বেশি শক্তিশালী দল বিএনপি। আমাদের এ যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আমাদের সঙ্গে যেসব বিরোধী দল আছে, সবাইকে সাথে নিয়ে, হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে মুক্ত করতে হবে। এটা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম। এ সংগ্রামে বিজয়ী হতে হবে।’
ইফতার মাহফিল নিয়ে নানা আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ইফতার মাহফিল নিয়ে এত বাক্যালাপ অন্য কোনো দেশে আছে কি না আমার জানা নেই। মুসলিম দেশে তো নাই-ই, অন্য কোনো দেশে আছে কি না আমার জানা নেই। ইফতার মাহফিল হবে কি হবে না, করতে পারবে কি পারবে না, এটা নিয়ে বাংলাদেশে যে আলোচনা, এটা তো আজ সবচেয়ে বড় ধরনের অপরাধ। অনেকে প্রশ্ন তুলছে যে আমরা কোন দেশে বসবাস করি।’
নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসংলগ্ন একটি রেস্তোরাঁয়া সিএমইউজে সভাপতি মোহাম্মদ শাহনেওয়াজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী।
সারাবাংলা/আরডি/এমও