ফের উত্তাল বুয়েট, দাবি না মানলে ‘আন্দোলন চলবে’
২৯ মার্চ ২০২৪ ২১:২৩
ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ‘ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের’ ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও মিছিলের ঘটনায় ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে এ আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা। এ সময় বুয়েট ছাত্র কল্যাণ পরিদফতরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
নিজেদের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে সমাদৃত এবং শীর্ষস্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর এ আবরার ফাহাদের নৃশংস মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলনের ফলে বুয়েট বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাসে রূপ নেয়। বুয়েটে সর্বশেষ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে যে নিরাপদ এবং সুন্দর একটি ক্যাম্পাস আমরা উপহার হিসেবে পেয়েছি, তা দেশব্যাপী প্রশংসিত এবং অনুকরণীয়।’
২০১৯ এর সেই সময়টির পর থেকে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে উদ্যম, সৎ সাহস আর প্রেরণা পেয়েছিল সেটিই প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ছাত্ররাজনীতি অনুপ্রবেশ এর সব অপচেষ্টাকে রুখে দিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ঐক্য গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছিল। তবে এখনও বারে বারে পড়াশোনা কিংবা একাডেমিকসের চূড়ান্ত চাপ থাকার পরেও আমাদের এই নিরাপদ ক্যাম্পাসটিকে রক্ষা করতে আমাদের সর্বদা সজাগ থাকতে হয়, করতে হয় নিরন্তর নিয়মিত সংগ্রাম। শিক্ষার্থীদের যেন সেই কলুষিত হাতদের বিরুদ্ধে ন্যায়ের লড়াই, সত্যের লড়াই চালিয়ে যাওয়া যেন শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নিত্য অংশ হয়ে গিয়েছে।
তারা বলেন, এমনই একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা আমাদেরই এ প্রাণের বুয়েট ক্যাম্পাসে ঘটে গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে। রাত ১টার দিকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে পারি, বুয়েটে একটি বিশেষ রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের বেশ কজন শীর্ষস্থানীয় নেতারা এসেছেন। তারা ক্যাম্পাসের মেইন গেট দিয়েই প্রবেশ করে ভেতরে ঢুকেছেন। রাত সাড়ে ১০টার পরে যেখানে নিরাপত্তার কারণে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি নেই, সেখানে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বহিরাগত ব্যক্তিদের মধ্যরাতেই আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ ঘটে।
একের পর এক বহিরাগত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ক্যাম্পাসের মেইন গেটের সামনে আসতে থাকে। বিপুলসংখ্যক বহিরাগত ক্যাম্পাসে অনায়াসে প্রবেশ করতে থাকে। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখতে পায়, মিছিলের মতো করে বিশাল একটি জনবহর হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসে রাত ২টার পর প্রবেশ করতে থাকে।
দুঃখজনকভাবে এই বিশাল জনবহরের সকলেই বহিরাগত ছিল এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করে মধ্যরাতের সেই সময়টায় বিশেষ ওই ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের চিনতে পারে যা সুস্পষ্ট জানান দেয় এত বিপুল জনসমাগম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ।এমন একটি ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া এত বড় একটি রাজনৈতিক সমাগম এবং বহিরাগতদের আগমন ক্যাম্পাসের মর্যাদার প্রতি তীব্র অপমানজনক। একইসঙ্গে এটি একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশের নিরাপত্তার ব্যাপারকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদফতর কোনোভাবেই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, মধ্যরাতে বহিরাগত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের এমন দাপটসহ প্রবেশ কর্তৃপক্ষ এবং ডিএসডব্লিউর দৃষ্টির অগোচরে হওয়া অসম্ভব। ঘটনা ঘটে যাওয়ার দেড় দিন পার হয়ে গেলেও ডি.এসডব্লিউ থেকে ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো প্রকার সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা এখন পর্যন্ত আসেনি। ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে তারা প্রবেশের অনুমতি কীভাবে কর্তৃপক্ষ থেকে পেয়েছিল এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটি এখনো ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং সন্দেহের সঞ্চার করে যে, কীভাবে এবং কোন মদদে তারা প্রবেশ করতে পারল। এর সবই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি ও কর্মসূচি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো—
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ২৮ মার্চ মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ২১তম ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও হলের সিট বাতিল করতে হবে।
২. ইমতিয়াজের সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল ও টার্ম বহিষ্কার করতে হবে।
৩. রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বহিরাগত যারা ক্যাম্পাসে ঢুকেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তারা কেন ও কীভাবে প্রবেশের অনুমতি পেলেন— এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট জবাবদিহি দিতে হবে বুয়েট প্রশাসনকে।
৪. ১ ও ২ নম্বর দাবি আগামীকাল শনিবার সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগ চান।
৫. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রতিবাদ হিসেবে আগামীতাল শনিবার ও পরদিন রোববার টার্ম ফাইনালসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করা হবে।
৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে