কেনাকাটায় মানুষের ঢল নিউ মার্কেটে
২৯ মার্চ ২০২৪ ২৩:১৬
ঢাকা: কী দোকান, কী ফুটপাত আর কী অলিগলি— সবখানেই দোকান। এসব দোকানে উপচে পড়েছে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতা সাধারণ। রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় থেকে শুরু করে সাইন্সল্যাব মোড় পর্যন্ত সড়কের দুইপাশেই মানুষের ঢল। পছন্দের পোশাকটি কিনতে পেরে যেমন ক্রেতারা খুশি তেমনি বিক্রি বাড়ায় ব্যবসায়ীরাও বেশ খুশি।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল ১০টা থেকেই ক্রেতাদের ঢল নামে নিউ মার্কেট এলাকায়। জুমার নামাজের পর তা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। ক্রেতাদের ভিড়ে হাঁটা চলার রাস্তা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। থমকে যায় যান চলাচল। ট্রাফিক পুলিশও শত চেষ্টা করেও রাস্তা ক্লিয়ার করতে পারেনি। ফলে কোনোরকম থেমে থেমে যান চলাচল করে।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে দেখা যায়, সুরে সুরে ক্রেতাদের ডেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন বিক্রেতারা। ফুটপাতে কেউ বাচ্চাদের হরেক রকম ড্রেস, কেউ জুতা সেন্ডেল, কেউ কসমেটিক্স, কেউ চুড়ি ফিতা, কেউ শপিং ব্যাগ, কেউ টি শার্ট, শার্ট, কেউ নারীদের থ্রি-পিস, শাড়ি, ওয়ান পিস, ওড়না, আবার কেউ ঘর সাজানোর আসবাবপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ঈদের কেনাকাটায় এমন কোনো আইটেম নেই যা নিউ মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজধানীর বাড্ডা থেকে দুই যমজ বোন নাদিয়া ও নাহিদা এসেছেন কেনা কাটা করতে। হাতে বেশ কয়েকটি শপিং ব্যাগ। জানতে চাইলে নাহিদা বলেন, ‘সাধ্যের মতো আমার যা যা দরকার তার সবই নিউ মার্কেটে পাওয়া যায়। তাই এখানে এসেছি। বেশ সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে বাচ্চার ড্রেস, ল্যাগিংস, ওয়ান পিসসহ অনেক কিছু কিনেছি। এখন জুতা সেন্ডেল ও হিজাব কেনা বাকি আছে।’
তার ভাষ্য— আজ অতিরিক্ত ভীড়। পা ফেলা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ঢাকার সব মানুষ নিউ মার্কেটে এসেছে।
শিউলি বেগম কাফরুল থেকে এসেছেন তার মেয়ে তন্বীকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘মেয়ের জন্য ড্রেস কিনেছি। ছেলের জন্য জামা কাপড় কিনেছি। এক জায়গায় সব মেলে তাই এখানে আসা হয় প্রতিবছর। দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসি অনেক বছর ধরে।’
একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন নজরুল ইসলাম। রাজশাহীতে গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার জন্য যাবেন। কাজের ফাঁকে তিনি স্ত্রী ছেলে মেয়ের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, এত ভীড়ে এত কষ্ট করে কেনাকাটা করছি পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তাদের জন্যই তো এত কষ্ট করছি। আর সময় পাই কিনা সেজন্য কেনাকাটা করছি।’
তিনি জানান, মেয়ের জন্য দুইটা ড্রেস, চুড়ি, ফিতা, মাথার ক্লিপ, ছেলের জন্য শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, স্ত্রীর জন্য হিজাব, থ্রি-পিস, ঘর সাজানোর জন্য কিছু জিনিসপত্র কিনেছেন।’
চন্দ্রিমা মার্কেটের লতা বস্তালয়ের ম্যানেজার ইকবাল আসিফ বলেন, ‘ভাই অনেক কাস্টমার ব্যস্ত আছি। যা জানতে চান তাড়াতাড়ি বলেন।’
তিনি বলেন, ‘বেচাকেনা জমে উঠেছে। আজ ও আগামীকাল যারা ঢাকায় থাকবেন না, গ্রামে ঈদ করতে যাবেন মূলত তারাই কেনাকাটা করছেন। মাঝখানে একটি সপ্তাহ এরপরই ঈদের ছোটাছুটি শুরু হবে।’
নিউ মার্কেটের ওভারব্রীজ সংলগ্ন কসমেটিক্স মার্কেটের রাইয়ান কসমেটিক্সের মালিক আরিফুল হক শাওন বলেন, ‘বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঈদ এলে চুড়ি, ফিতা, চুলের ক্লিপ, ব্যান, রাবার, পিনসহ নানা আইটেম কিনে থাকে। ক্রেতাদের ৯৮ শতাংশই নারী।’
আজ উপচেপড়া ভিড় হয়েছে। বেচাবিক্রিও অনেক ভালো বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়. শার্ট, গেঞ্জি, লেগিংস, বাচ্চাদের ড্রেস বেশির ভাগই ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ওড়না ১০০ টাকা, হিজাব ৩০০-৪০০ টাকা, ওয়ান পিস ৪০০-৬০০ টাকা, জিন্স প্যান্ট ৫০০-৮০০ টাকা, বড়দের শার্ট ৩০০-৬০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। বিছানার চাদর ৪০০-৭০০ টাকা, জুতা সেন্ডেল ৪০০-৮০০ টাকায় মিলছে। ক্রেতারা বাসে, সিএনজিতে, রিকশায় ও নিজস্ব পরিবহনে করে দূর-দূরান্ত থেকে নিউ মার্কেটে এসে কেনাকাটা করছেন।
ছুটির দিনে নিউ মার্কেট এলাকায় সড়কে যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক সার্জেন্ট সাজ্জাদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ দিনের চেয়ে কয়েকগুণ মানুষ কেনাকাটা করতে এসেছে। একইসঙ্গে সড়কে গাড়ির চাপও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে থমকে যায় পুরো এলাকা। একপর্যায়ে সাইন্সল্যাব মোড় থেকেই কিছু গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। যে কারণে বিকেলের দিকে মানুষজন কিছুটা স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পেরেছে।’
আগামীকাল ও আগামী কয়েকদিন এরকম ক্রেতাদের চাপ থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই ট্রাফিক সার্জেন্ট।
সারাবাংলা/ইউজে/একে