খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগকারী বেড়েছে
১ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৬
ঢাকা: এখনো খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করে দেশের ১৬ লাখ সাত হাজার ৪৯৯ জন নাগরিক। দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১০ লাখ ধরে এই হার মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ।
বাংরাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আগের চার বছরেই খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগকারীর সংখ্যা ছিল নিম্নগামী। চার বছরের বিরতির পর গত বছর ফের এই সংখ্যা বেড়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় এ বছর কমেছে অনুন্নত টয়লেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এর বিপরীতে উন্নত টয়লেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা আগের তুলনায় গত বছর বেড়েছে।
‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বিবিএস। খানা বা পরিবারের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে খানার আকার, খানা প্রধান, খাবার পানি, বিদ্যুৎ ব্যবহার সুবিধা, সাবান ও পানিসহ হাত ধোয়ার অবস্থাসহ পয়ঃব্যবস্থাপনার অভিগম্যতার তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টয়লেট না থাকায় খোলা আকাশের নিচে পায়খানা করা মানুষের সংখ্যা ২০১৮ সালের জরিপে ছিল ২ শতাংশ। ২০১৯ সালে সেটি কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৩৯ শতাংশে। এরপর ২০২০ সালে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২০২১ সালে শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ২০২২ সালে এ হার আরও কমে শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশে দাঁড়ায়। এর বিপরীতে ২০২৩ সালের হিসাবে এই সংখ্যা কিছুটা বেড়ে হয়েছে শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ।
কমছে অনুন্নত টয়লেট ব্যবহারকারী
বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, দেশে অনুন্নত টয়লেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। ২০১৮ সালে এ হার ছিল ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর ২০১৯ সালে সেটি কমে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে। ২০২০ সালে ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও ২০২১ সালে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ছিল অনুন্নত টয়লেট ব্যবহারকারীর হার। ২০২২ সালে সেটি সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশে। ২০২৩ সালে ফের তা কমে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
উন্নত টয়লেটের ব্যবহার বাড়ছে
বিবিএসসের ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৭৮ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ উন্নত টয়লেট ব্যবহার করত। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ দশমিক ১৩ শতাংশে। এরপর ২০২০ ৮৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ২০২১ সালে ৮৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও ২০২২ সালে ৯২ দশমিক ৫১ শতাংশ মানুষ উন্নত টয়লেট ব্যবহার করত বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল। ২০২৩ সালে এই হার আরও কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৯৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
বিবিএসের স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করা মানুষের হার কখনো শূন্য শতাংশে আসবে না। কারণ কিছু পকেট এরিয়া আছে যেমন— চর, নদী ও পাহাড়ি এলাকার মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করতে অভ্যস্ত। তাদের অভ্যাস পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এটা বন্ধ হবে না।
২০২৩ সালে এই সংখ্যা আগের চার বছরের ধারাবাহিকতা ভেঙে বেড়েছে কেন— জানতে চাইলে বিবিএসের এই কর্মকর্তা বলেন, নদী ভাঙনে চরের মানুষের টয়লেট ভেঙে গেছে। তারা এখন টয়লেট তৈরি করতে পারছেন না। সে কারণে এ সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আলমগীর হোসেন বলেন, এটি এমন একটি প্রতিবেদন যেখান থেকে এসডিজির ২৭টি সূচকের তথ্য পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১০৪টি ডিআরএফ সূচকের মধ্যে ১৬টি আসে এই প্রতিবেদন থেকে। খানার বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত তথ্যগুলো এসডিজি ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মূল্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
স্যানিটেশন পরিস্থিতি
এদিকে দেশে মৌলিক স্যানিটেশন সুবিধা বাড়ছে বলে উঠে এসেছে বিবিএসের ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে। তথ্য বলছে, মৌলিক স্যানিটেশনের সুবিধা ভোগকারী ২০২১ সালে ছিল ৬৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে সেটি আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ৬৮ শতাংশে।
অন্যদিকে সীমিত স্যানিটেশন ভোগকারীর সংখ্যা দেশে কমছে। ২০২১ সালে সীমিত স্যানিটেশন ভোগকারী ছিল ২২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ২৪ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০২৩ সালে আবার কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে।
করোনার পর হাত ধোয়া কমেছিল, আবার বাড়ছে
বিবিএসের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সাবানসহ এবং সাবান ছাড়া শুধু পানি দিয়ে হাত ধোয়ার উভয় ক্ষেত্রেই উপস্থিতির হার বেড়েছে। ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২০ সালে এই হার একলাফে অনেকটা বেড়ে হয় ৭১ শতাংশ। এরপর ২০২১ সালে এটি আবারও এক লাফে কমে দাঁড়ায় ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশে। সেখান থেকে ২০২২ সালে সেটি কিছুটা বেড়ে এই হার হয়েছিল ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৩ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদনে হাত ধোয়ার হার আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ দশমিক ২ শতাংশে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে হাত ধোয়া নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচার ও কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ওই সময় সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া ও হাত পরিষ্কার রাখার হার অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এ কারণেই ২০২০ সালে হাত ধোয়ার হার অনেকটা বেশি পাওয়া গেছে। পরে করোনাভাইরাসে সংক্রমেণর প্রভাব কমে গেলে ফের হাত ধোয়ার হার কমে যায়। এখন ধীরে ধীরে এই হার বাড়ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে শুধু সাবান ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে। ২০২১ সালে এ হার ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে সেটি আর কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশে।
শুধু পানি দিয়ে হাত ধোয়ার হার অবশ্য কমছে। ২০২১ সালে এই হার ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে সেটি আরও কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ২ শতাংশে।
বিবিএস আরও বলেছে, হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থাই নেই অর্থাৎ সাবান বা পানি কিছুই নেই— এমন মানুষের সংখ্যা কমছে। ২০১৯ সালে এ হার ছিল ২২ দশমিক ৭ শতাংশ, সেটি কমে ২০২০ সালে হয় ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২১ সালে আবার সেটি বেড়ে হয় ২১ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক শতাংশে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে সেটি আরও কমে হয়েছে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
টয়লেট ব্যবহার পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস মলত্যাগ স্যানিটেশন হাত ধোয়া