Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৯০ পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংকিং খাত যেভাবে ঘুরে দাঁড়াল

মো. সাইফুল আলম তালুকদার
১ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:০৬

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক মরগান স্ট্যানলি ইন্দোনেশিয়াকে একসময় উদীয়মান অর্থনীতির মধ্যে ভঙ্গুর পাঁচটি দেশের একটি হিসেবে অভিহিত করেছিল। কারণ তখন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে যেসব দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতো তার মধ্যে ইন্দোনেশিয়া অন্যতম ছিল। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার তীব্রভাবে বাড়ছে, যা উন্নয়নশীল বিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলছে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী শক্তিশালী দেশ হিসেবে এগিয়ে চলছে।

বিজ্ঞাপন

গত কয়েক দশক ধরে ইন্দোনেশিয়া আশ্চর্যজনক না হলেও সুদৃঢ় উন্নয়নের ভিত্তি গড়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত মাথাপিছু জিডিপির ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ঘটেছে ১৬০ শতাংশ। স্বৈরশাসক জেনারেল সুহার্তোর বিদায়ের পর মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এমনকি সিঙ্গাপুরের চেয়েও তাদের ‘ফ্রিডম হাউজ র‍্যাংকিং’ ভালো অবস্থানে ছিল। এই ধারাবাহিকতায় তারা এখন মধ্যম আয়ের দেশ।

উন্নয়নশীল দেশ হয় সাধারণত দুই প্রকারের। একদল প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ থাকায়, শুধুমাত্র সেই প্রাকৃতিক সম্পদের রপ্তানিকারক হয়। আরেকদল পরিচিত মূলত শিল্প রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে। প্রথম দল শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করায়  সেই সম্পদ একসময় ‘অভিশপ্ত সম্পদ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দীনতা, অতিমূল্যায়িত মুদ্রা এবং ক্রমান্বয়ে সম্পদের দাম পড়ে যাওয়ার কারণে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। পক্ষান্তরে, আরেক দল শুরুর দিকে দরিদ্র থাকলেও শিল্প রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে এগিয়ে যেতে থাকে। ইন্দোনেশিয়া প্রথম দলভুক্ত হলেও ১৯৮০ এর দশক থেকে শ্রম-নিবিড় ও এসএমই ভিত্তিক শিল্পায়নের পথে এগিয়ে যেতে থাকে।

ব্যাংকিং শিল্প কিভাবে ঘুরে দাঁড়াল

১৯৯০ দশকের শেষের দিকে, বিশেষ করে এশিয়ান আর্থিক সংকটের সময়, ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংকিং খাত ধস নেমেছিল। ওই সময়ে তাদের মুদ্রা রুপিয়ার মানের ভয়ংকর অবনমন ঘটে। সেইসঙ্গে ব্যাংকগুলো মন্দ ঋণে সয়লাব হয়ে যায়। ফলে বেশিরভাগ ব্যাংক রক্ষার্থে সরকারকে এগিয়ে আসতে হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর নতুন পুঁজির যোগান সরকারকে করতে হয়। আজ দেখার চেষ্টা করব ইন্দোনেশিয়ার সেই যাত্রায় কিভাবে উত্তরণ ঘটেছিল।

বিজ্ঞাপন

১৯৯৮ সালে সরকার চারটি ব্যর্থ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংককে একটি নতুন সত্তায় একীভূত করে। যার নতুন নাম দেওয়া হয় ‘ব্যাংক মন্দিরি’। সেই ব্যাংক মন্দিরি ঘুরে দাঁড়িয়ে আজ ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। যার সম্পদমূল্য বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ২০২৩ সালে তাদের নিট আয় অর্জিত হয়েছিল প্রায় ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এশিয়ান আর্থিক সংকটের মন্দা থেকে বেশ ভালোভাবে ফিরে এসে ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংকিং সেক্টরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো আধিপত্য বিস্তার করেছে। দেশটির তিনটি বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হলো: ব্যাংক মন্দিরি, ব্যাংক রাকয়াত এবং ব্যাংক নেগারা। ২০২৩ সালে এই তিনটি ব্যাংকের সম্মিলিত সম্পদ ছিল ৩৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাদের নিট আয় ছিল ৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের। সরকারি ব্যাংকগুলোতে ৫৭-৬০ শতাংশ মালিকানা সরকারের আর বাকিটা জনগণের হাতে।

ইন্দোনেশিয়াতে ব্যক্তিখাতে বৃহত্তম ব্যাংক হলো ‘ব্যাংক সেন্ট্রাল এশিয়া’। ২০২৩ সালে এই ব্যাংকের সম্পদমূল্য ছিল ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। লাভ ছিল ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির অবদান কেমন ছিল

১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের ডিক্রির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ান ব্যাংক পুনর্গঠন কর্তৃপক্ষ (আইবিআরএ), যেখান থেকে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি) গঠিত হয়। ইন্দোনেশিয়ার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো ব্যাংকিং সেক্টরে নন-পারফর্মিং লোন পরিচালনা ও সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই সংস্থাগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অধিগ্রহণ, পরিচালনা এবং পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের সমাধান করতে সহায়তা করে। তাদের সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কিছু মূল ভূমিকার মধ্যে রয়েছে: এনপিএল কেনা, দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের ব্যবস্থাপনা, ঋণ পুনর্গঠন সহজতর করা, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ইত্যাদি।

এএমসিগুলোর কার্যক্রম স্পষ্টতই এনপিএল (মন্দ ঋণ) বাজার বাস্তুতন্ত্রের বিকাশে অবদান রেখেছে। ফলস্বরূপ, এনপিএল মার্কেট সার্ভিস এজেন্সি, যেমন ডেট (ঋণ) সার্ভিসিং এজেন্সি, সম্পদ মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, আইনজীবী এবং ব্রোকারদের জন্য ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কোরিয়া এবং থাইল্যান্ডে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর সৌজন্যে ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট এবং তার পরবর্তী সময়ে এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো এনপিএল বৃদ্ধি পায়নি। ইন্দোনেশিয়ার নন-পারফর্মিং লোন অনুপাত ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল।

এশিয়ার অনেক দেশ, বিশেষ করে চীন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কাজাখিস্তান অনলাইন এনপিএল ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলো বিকাশের প্রচেষ্টা শুরু করেছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মৌলিক কাজের মধ্যে রয়েছে ছোট এনপিএল পোর্টফলিও বান্ডিল করা, ডেটা শেয়ারিং এবং উচ্চমাত্রার ডেটা স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন, বিশদ ঋণ ফাইলের জন্য ইলেকট্রনিক (ভার্চুয়াল) ডেটা রুম এবং প্রতিটি সহায়ক নথি, ক্রেডিট পরিষেবা যেমন মূল্যায়ন এবং যথাযথ পরিপালনের পাশাপাশি বাস্তব জামানত মূল্যায়ন, তথ্যের অসামঞ্জস্যের সমাধান করতে, ঋণদাতার সমন্বয় বাড়াতে এবং বিনিয়োগকারীদের ভিত্তিকে প্রসারিত করতে সহায়তা করে।  এনপিএল পোর্টফলিও বিক্রয় বা সিকিউরিটাইজেশনে নিযুক্ত হতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি ভালো-কার্যকর সেকেন্ডারি মার্কেট প্রয়োজন, কারণ এটি ভালো মূল্য পেতে সাহায্য করে।

ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংকগুলোর উত্থানের পেছনে আর কী কী কারণ ছিল?

ব্যাংকগুলোর উত্তরণে কোভিড মহামারীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে! কারণ এই সময় তাদের জাতীয় সঞ্চয় হার যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়ায় মোট জাতীয় সঞ্চয় ছিল জিডিপির ৩১ শতাংশ, যেটা ২০২২ সালে ৩৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। ওই সময়টাতে লোকজন তাদের আয়ের বেশিরভাগ অংশ সঞ্চয় আকারে ব্যাংকে জমা রেখেছিল। মহামারি শেষে ২০২৩ সাল থেকে যদিও আমানত বৃদ্ধির হার ধীর গতিতে হচ্ছে, তবুও সঞ্চয় প্রবণতা এখনো উর্ধ্বমুখী।

ব্যাংক খাতে যখন আমানত বৃদ্ধি পায়, তখন ব্যাংকের জন্য মুনাফা অর্জন করা সহজ হয়— যদি তারা সঠিকভাবে ঋণ বা বিনিয়োগ পোর্টফলিও বৃদ্ধি করতে পারে। বর্ধিত সঞ্চয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই সঞ্চয়গুলো উৎপাদনশীল বিনিয়োগে পুনর্ব্যবহার করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংকগুলো শুধু বেশি ঋণ দিচ্ছে তা নয়, অবকাঠামো বা ব্যবসা উন্নয়নের জন্য কার্যকরী মূলধন প্রদানেও অর্থায়ন করছে।

ইন্দোনেশিয়ায় কী সব ব্যাংক সব ধরনের ঋণ দেয়?

ইন্দোনেশিয়ায় বড় ব্যাংকগুলো সাধারণত বেশি ভোক্তা ঋণ বা গৃহঋণ দেয় না। ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের মধ্যে একটি ক্ষুদ্রতম ব্যাংক হচ্ছে ‘বিটিএন’ (ব্যাংক তাবুনগান নেগারা), যেটি মর্টগেজ স্পেশালিস্ট ব্যাংক হিসেবে কাজ করছে। ব্যাংকটি ২০২৩ সালে ২৪৫ মিলিয়ন ডলার (২,৬৯৫ কোটি টাকা; ১ মার্কিন ডলার ১১০ টাকা হিসাবে) নিট মুনাফা লাভ করেছে এবং সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৯ বিলিয়ন ডলার বা তিন লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংক মন্দিরির মতো সরকারি বড় ব্যাংকগুলো শিল্প উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ এবং বড় আকারের জাতীয় প্রকল্পের বিকাশ ঘটাচ্ছে এমন অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থায় ঋণ দেয়। বড় সরকারি ব্যাংকগুলো মহামারির পর থেকে সরকারি বন্ড কিনতে ব্যস্ত ছিল। ব্যাংক মন্দিরির দিকে তাকালে দেখা যাবে তাদের ব্যালেন্সশিটে সরকারি বন্ডের মূল্য ২০১৯ সালে যেখানে ছিল ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, তা ২০২২ সালে উন্নীত হয়েছে ২১ বিলিয়ন ডলারে, শতাংশের হিসেবে যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১২৬ শতাংশ।

মহামারিতে ব্যাংকের অবদান কেমন ছিল?

মহামারি চলাকালীন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখার জন্য সরকারি ব্যয় বাড়িয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার সরকার। এ জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা হয়েছিল বিলিয়ন ডলার সরকারি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে। ইন্দোনেশিয়াতে তখন ব্যাংকগুলোর আমানত ভিত্তি ভালো থাকার কারণে ক্রমবর্ধমান বন্ড ইস্যুর দেনা শোধ করা সহজ ছিল। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থা যদি অন্ততপক্ষে মাঝারি কিন্তু কার্যকরী আর্থিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হয় তাহলে মহামারির মতো দুরবস্থা মোকাবিলা করা সম্ভব।

উল্লেখ করার মতো আরেকটি বিষয় হলো, ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংকিং সেক্টরে নিয়ন্ত্রক তদারকি এবং ব্যবস্থাপনা ৯০ দশকের তুলনায় অনেক উন্নত হওয়ায় ব্যাংকগুলো বেশ রক্ষণশীল। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। এরা খুব বেশি আগ্রাসী ব্যাংকিং করে না। বিনিয়োগ-আমানত অনুপাত ৮০ শতাংশের নিচেই থাকে সবসময়। যদিও এই অনুপাত ২০১৯ সালের মে মাসে ৯৬ দশমিক ১৮ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল।

সবচেয়ে বেশি নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন আয়ের ক্ষেত্রে এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো করছে ইন্দোনেশিয়া। ফলে মহামারিকালীন দুর্যোগের সময় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। মন্দ ঋণ কম রাখার পাশাপাশি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটাল এডেকোয়েশি রেশিও সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ বজায় রাখতে পেরেছিল ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংকিং ব্যবস্থা। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি ২ দশমিক ৭৫ শতাংশের ভেতর রাখা সম্ভব হয়েছে।

ডিজিটাল যাত্রা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করেছে

মহামারির সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত ত্রাণ প্রচেষ্টার জন্য ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংকগুলোর এনপিএল নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরের প্রচেষ্টাও এক্ষেত্রে কাজে লেগেছে। ২০২৫ ইন্দোনেশিয়ান পেমেন্ট সিস্টেম ব্লুপ্রিন্ট (বিএসপিআই ২০২৫) সক্রিয়ভাবে ডিজিটাল অর্থনীতি এবং অর্থায়নকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উৎস হিসেবে উৎসাহিত করেছে।

প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় কোভিড-১৯ মহামারি ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিতে তেমন গভীরভাবে আঘাত করেনি। একটি স্বাস্থ্যবান ফিনটেক বাজারের উপস্থিতি এক্ষেত্রে বেশ কাজে দিয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত, ফিনটেক পিয়ার-টু-পিয়ার ডিজিটাল ঋণ দেওয়া হয়েছে ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। ইন্দোনেশিয়া মাইক্রো, ছোট এবং মাঝারি (এমএমএসএমই) আকারের ব্যবসায়ীদের দেশ হিসেবে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে, তাদের এমএমএসএমই খাত জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ অবদান রাখে। বড় বড় অর্থনীতির তুলনায় কোভিডের সময় তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সম্পদের সঠিক বণ্টনে মুনশিয়ানা দেখানোর কারণে তাদের অর্থনীতি অনেক বেশি স্থির ছিল।

এছাড়া ডিজিটাল প্রযুক্তি অনেক এমএমএসএমইকে ‘নিউ নরমাল’-এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করেছে। কোভিড পূর্ববর্তী সময়ে মাত্র ১৩ শতাংশ এমএসএমই তাদের পণ্য এবং পরিষেবা বিপণন এবং বিতরণের জন্য ইন্টারনেট গ্রহণ করত, যা ২০২০ সালে ৩৯ শতাংশে উন্নীত হয়। ইন্দোনেশিয়ার সমবায় এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ মন্ত্রী তেটেন মাসদুকি ২০২০ সালের শেষে একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘যে ব্যবসাগুলোর অনলাইনে উপস্থিতি আছে সেগুলো মহামারি চলাকালীন টিকে থাকতে পারে। মহামারির পর থেকে ৭৫ শতাংশের বেশি ইন্দোনেশিয়ানরা ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা ব্যবহার করছে।

চীনের ২৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যবান কোম্পানি বাইটডান্সের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান টিকটক ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান টোকোপিডিয়াকে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। যদিও টোকোপিডিয়াতে টিকটক তার প্রকৃত অংশীদারিত্ব প্রকাশ করেনি, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে এটি ৭৫ শতাংশ বলে অনুমান করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার ই-কমার্স বাজার ২০২৩ সালে ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২৫ সালে ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০৩০ সালে ১৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে। আর সবকিছু মিলিয়ে দেশটির সার্বিক ডিজিটাল অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে ২০২৫ সালের মধ্যে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। অন্যদিকে, টিকটক ২০২৩ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ই-কমার্সের বাজার ১৩দশমিক ২ শতাংশ ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি  গ্রস মার্চেন্ডাইজ ভ্যালু (জিএমভি) ২০২২ সালের ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩ সালে ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর পথে ছিল।

তাই ডিজিটাল রূপান্তর হলো একমাত্র সুস্পষ্ট সমাধান, যা ভোক্তাদের দ্রুত ঋণ পেতে সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনে সহায়তা করার মাধ্যমে ক্যাশলেস সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আর যেসব দেশ মন্দ ঋণে জর্জরিত তাদের জন্য ডিজিটাল রূপান্তর একান্তই ফরজ হিসেবে বিবেচিত, যা আমরা ইন্দোনেশিয়ার উদাহরণ থেকে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারলাম। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় আর্থিক পরিষেবা খাতের স্থিতিশীলতা শক্ত পুঁজি, যথেষ্ট তারল্য এবং ভালো ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বজায় রাখা হয়েছে।

লেখক: ব্যাংকার, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি

সারাবাংলা/আইই

ইন্দোনেশিয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর