কারাগারের বাইরের জীবন অনেক কঠিন, কাঁদলেন ‘জল্লাদ’ শাহজাহান
১ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:০৫
ঢাকা: বঙ্গবন্ধুর খুনি, যুদ্ধাপরাধী, জামায়াতের শীর্ষ নেতা ও জেএমবিসহ আলোচিত মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৬০ জনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ভূঁইয়া নিজের দৈন্যদশার কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে কেঁদে কেঁদে বলেন, কারাগারের বাইরের জীবন অনেক কঠিন। আগে জানলে কারাগারেই রয়ে যেতাম। প্রতারিত হতে হতে আমি এখন নিঃস্ব। সবাই আমাকে ঠকিয়েছে। আমি এখন দিশেহারা। স্ত্রীসহ নানাজনের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছি। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিত্তবানদের কাছে বাসস্থান ও কর্মসংসস্থানের নিশ্চিতের অনুরোধ করছি।
সোমবার (১ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আবেদন জানান আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান।
শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য উপাদান খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা— এগুলোর কোনোটাই আমি পাচ্ছি না। আমি আমার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আমার মা-বাবা নেই, দায়িত্ব নেওয়ার মতো ভাই-বোন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিত্তবানদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আমাকে থাকার ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিন। আমি চরম অর্থনৈতিক সংকটে আছি। আমার কাজ করার মতো সামর্থ্য নেই, আয়-রোজগার নেই, অর্থের জোগান নেই, নিজের থাকার জায়গা নেই।’
তিনি বলেন, ‘৪৪ বছর কারাভোগ শেষে এখন এসে আমি বাইরের মানুষদের বুঝতে পারছি না। যেখানে যাচ্ছি, প্রতারণার শিকার হচ্ছি। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বিয়ে করে সেখানেও সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। বিয়ের কাবিন ৫ লাখ টাকা হলেও ১০ লাখ টাকা দেনমোহর লিখিত নিয়ে আমার স্ত্রী সাথী আক্তার ফাতেমা ৫৩ দিনের মাথা পালিয়ে যায়। পালিয়ে গিয়ে আমার নামে যৌতুকের মামলা দিলো, আমি মামলা দিতে গেলে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।’
শাহজাহান বলেন, ‘পরে আইনজীবীর সহায়তায় গতকাল রোববার আদালতে আমার স্ত্রী ও শাশুড়িসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এখানে যাদের আমি আসামি করেছি তারা এই কাবিনের সাক্ষী, তারা এই যৌতুকের টাকা নেওয়ার সাক্ষী, তারা এই ১০ লাখ টাকা নেওয়ার সাক্ষী, ওদের (স্ত্রীর) আত্মীয়রাই এখানে (আসামির তালিকায়)।’
তিনি বলেন, ‘৪৪ বছর কারাভোগ শেষে বাইরে এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছি। কারাগারে থাকতেই ভালো ছিলাম। কারাগারের বাইরের জীবন এত জটিল কেন? জীবন এত কঠিন হবে, জানলে কারাগারেই থেকে যেতাম। আমি কারাগার থেকে বের হলে আমার ভাগ্নে নজরুল অটোরিকশা কিনে দেবে বলে টাকা মেরে দেয়।’
জল্লাদ বলেন, ‘এরপর অনেক কষ্ট করে একটা চায়ের দোকান দিই। আমার দোকানে যে ছেলেটি ছিল সে চার মাস থাকার পর ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।’
শাহজাহান বলেন, ‘আমি এখন উভয়সংকটে জীবনযাপন করছি। একে তো আমার অচল অর্থনৈতিক অবস্থা, অন্যদিকে একজন নারী আমার জীবনের শেষ জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে এবং আমাকে যৌতুকের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। অথচ আমার থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়েছে, যার প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।’
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে ডাকাতি ও হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে যান শাহজাহান। ১৯৮৮ সাল থেকে সহকারী জল্লাদ হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। তখন তার বয়স ৩০ এর কিছু বেশি।
৪৪ বছর কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান শাহজাহান ভূঁইয়া। বর্তমানে তার হার্টের সমস্যা, রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে