কারওয়ান বাজার সরাতে অনড় ডিএনসিসি, রুজি হারানোর আতঙ্কে দোকানিরা
২ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৪৫
ঢাকা: শেষ পর্যন্ত সরতে যাচ্ছে কারওয়ান বাজার। প্রায় সাড়ে তিন শ বছর ধরে যে বাজারটি ক্রমেই ঢাকা শহরের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে, দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনা পেরিয়ে সেই বাজারটি সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে উত্তর সিটির আঞ্চলিক কার্যালয়টি এরই মধ্যে সরানোও হয়েছে। ওই ভবনে থাকা ১৭৬টি দোকান এবার সরিয়ে নেওয়া হবে গাবতলীতে। ডিএনসিসি বলছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনটি ঈদুল ফিতরের পর ভেঙে ফেলা হবে।
শহরের ঠিক মাঝে কাঁচাবাজার ও আড়তের অবস্থান দৃষ্টিকটূ, এই বাজার ও আড়ত গোটা এলাকায় যানজটের অন্যতম কারণ— এমন সব কারণ দেখিয়ে কারওয়ান বাজার সরানোর আলোচনা চলছিল দীর্ঘ দিন ধরেই। তারই ধারাবাহিকতায় বাজার সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে ডিএনসিসি। তবে ব্যবসায়ীরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, লাখো মানুষের কর্মসংস্থান যুক্ত এই বাজারের সঙ্গে, রয়েছে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ। জোর করে সরিয়ে দিলে তাদের রুটি-রুজিতেই টান পড়বে। একান্তই সরাতে হলে গাবতলীর বদলে তাদের যাত্রাবাড়ী স্থানান্তরের আর্জি তাদের।
নগর পরিকল্পনাবিদরাও বলছেন, ইতিহাস-ঐতিহ্য তো বটেই, খাদ্যপণ্যের জন্য ঢাকার প্রায় সব শ্রেণির নাগরিকদের কাছেই কারওয়ান বাজার বিকল্পহীন। বাজারটি সংস্কারের মাধ্যমে এখানেই টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা না করে ঢাকার উপকণ্ঠে সরিয়ে নেওয়া হলে সরাসরি ভোক্তাদের ওপর এর প্রভাব পড়বে।
প্রায় সাড়ে তিন শ বছর আগে ১৬৭৯ সালে সুবে বাংলার রাজধানী ঢাকার পান্ডু নদীর তীরে খাজা আম্বর মসজিদের দক্ষিণ দিকে বসতে শুরু করে ছোট্ট একটি বাজার। আশপাশের গ্রামের উৎপাদিত কৃষিপণ্য, বিশেষ করে শাক-সবজি, কামার-কুমোরদের গড়া তৈজসপত্র, প্রতিমা ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে বণিক, মহাজন, মাঝি-মাল্লা, ক্রেতা-বিক্রেতারা আসতেন বাজারে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে লোকসমাগম, বাড়তে থাকে বাণিজ্যিক গুরুত্ব। একপর্যায়ে নবাব আহসানউল্লাহর ওয়াকফ করা জমিতে বাজারটি সম্প্রসারিত হয়। খুচরা বিক্রির পাশাপাশি পাইকারির ব্যবসা শুরু হলে সেই কারওয়ান বাজার পরিণত হয় ঢাকার প্রধান একটি মোকাম বা আড়তে।
১৯০৫ সালে সম্প্রসারিত হতে থাকা নতুন ঢাকার বলতে গেলে কেন্দ্রে অবস্থান কারওয়ান বাজারের। মোগল আমলে পত্তন হওয়া বাজারটিকে ঘিরেই কালক্রমে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সংস্থার বাণিজ্যিক সদর দফতর, অফিস-আদালত, বিমা প্রতিষ্ঠান, শপিং মল আর হোটেল-মোটেল। দেশের প্রধান প্রধান বেশ কিছু গণমাধ্যমের কার্যালয় এখানে।
সেই বাজারটিই সরিয়ে ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ গাবতলী নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সিটি করপোরেশন, যে সিদ্ধান্তের সঙ্গে তীব্র দ্বিমত ব্যবসায়ীদের। কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজার ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান চৌধুরী সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই বাজার একদিনে গড়ে ওঠেনি। এর সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান যুক্ত। দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কৃষক, শ্রমিক, মিনতিরা আছেন। তাদের অনেকেই এই বাজারের আশপাশে থাকেন। তাদের সন্তানরা এখানেই পড়ালেখা করে। আশপাশের এলাকার মানুষ এখানে বাজার করতে আসেন। এখান থেকে বাজার সরানো হলে বিরাট একটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
কারওয়ান বাজার সরানোর এই ক্ষতিটা কেমন হবে— জানতে চাইলে সাইফুর রহমান বলেন, ‘বাজার ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন। শুধু আমাদের মার্কেটেই বছরে সাড়ে চার শ কোটি টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন হয়। বাজার স্থানান্তরে আমাদের মাত্র ২০ দিনের নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু আমাদের সারা দেশে যে পরিমাণ অর্থ লগ্নি করা আছে, সেটি তুলতেও তো সময় লাগবে। পাইকারদের কাছে বাকি আছে। এসব টাকার কী হবে— সেটি কেউ ভেবে দেখছে না।’
প্রয়াত আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র থাকাকালে কারওয়ান বাজার সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়। ওই সময় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন, সরাতেই হলে তাদের যেন যাত্রাবাড়ী পাঠানো হয়। কারণ যাত্রাবাড়ীও একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু গাবতলী গেলে সম্পূর্ণ নতুন করে ব্যবসা তৈরি করতে হবে তাদের। গত রোববারও (৩১ মার্চ) তারা ডিএনসিসির বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে চিঠি দিয়েছেন তাদের দাবি-দাওয়া শোনার আহ্বান জানিয়ে। এখান থেকে অস্থায়ী দোকান ও টোলবাজার সরানোর যে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেটিই যেন থাকে— এই দাবি তাদের।
বিশেষত গাবতলী যেত না চাওয়ার কারণ জানিয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী নেতা সাইফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমত, গাবতলী অনেক দূরে। ঢাকার মধ্যে থাকা অন্য আড়তদার বা ক্রেতারা সেখানে যাবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া গাবতলীয় এখনো প্রস্তুত না। আড়তের উপযোগী অবকাঠামেই নেই। এখানে একসঙ্গে চার থেকে পাঁচ শ ট্রাক ঢুকে মাল আনলোড করে বেরিয়ে যেতে পারে। ওখানে চার-পাঁচটা ট্রাকও ঢুকবে কি না, সন্দেহ। আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারের কাছে দাবি, দরকার হলে এই কারওয়ান বাজারই সংস্কার করে বহুতল মার্কেট করে দিক, যেন এই বাজার ঘিরে গড়ে ওঠা কর্মসংস্থান ও জীবনযাপন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’
একই দাবি কারওয়ান বাজারে থাকা কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী, কাঁচাবাজার আড়তের দোকানদার ও পেঁয়াজ-আলুর আড়তদারদেরও। তারা বলছেন, এখান থেকে গাবতলী গেলে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। সরকার ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে এখানেই সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিক ভবন করে দিতে পারে। ১০০ বছরের লিজ নিয়ে এখানে ব্যবসা করছেন তারা। ৩৫ বছরের মধ্যেই কীভাবে এসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়— সে প্রশ্ন তাদের।
কারওয়ান বাজার ঘিরে কর্মযজ্ঞে যুক্ত এসব হাজার হাজার মানুষের জীবনই কেবল নয়, ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনাতেও কারওয়ান বাজার সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কারওয়ান বাজারের ঐতিহাসিক গুরত্বও আছে। ঢাকার একদম কেন্দ্রে এত বড় বাজার কিন্তু আর নেই। বাজার ঘিরেই পরে ব্যবসায়িক ভবনগুলো গড়ে উঠেছে। এখন ট্রাফিক জ্যাম, অসুন্দর, বিজনেস হাব করার দোহাই দিয়ে বাজার সরানোর কথা বলে হচ্ছে। কিন্তু আধুনিক ভবন তৈরি করে চাইলেই এগুলোর সমাধান করা যায়। আবার আড়ত গাবতলী স্থানান্তর করলেও কারওয়ান বাজার এলাকায় যানজট কমবে না। কারণ আশপাশের ভবনগুলোর অনেকগুলোরই পার্কিং সুবিধা না থাকায় রাস্তায় গাড়ি পার্ক করা থাকে।’
কারওয়ান বাজারের অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘এই বাজার কিন্তু ঢাকার মতো উচ্চ মূল্যের শহরে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ভরসার জায়গা। ঢাকার কেন্দ্রে হওয়ায় অন্যান্য জায়গা থেকেও এখান থেকেই কাঁচাবাজার ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করেন খুচরা বিক্রেতারা। এখন গাবতলী নিলে সেকেন্ডারি ট্রান্সপোর্ট যুক্ত হয়ে খরচ বেড়ে যাবে। বাড়বে জিনিসপত্রের দাম।
সরকার শুধু ব্যবসায়ীদের কথা ভাবছে। কিন্তু ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাওয়া এই নগরের সাধারণ মানুষের কথাও সরকারকে ভাবতে হবে।’
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী, দোকানি, শ্রমজীবী বা নগর পরিকল্পনাবিদরা যাই বলুন না কেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এই বাজারটি সরিয়ে নিতে এবার বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেত্রে প্রথমে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক ভবনে থাকা ১৭৬টি দোকান ও পরে ১৮০টি টিনশেড দোকান সরানো হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য গাবতলীতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলেও তারা আশ্বস্ত করতে চাইছে সিটি করপোরেশন।
ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘গাবতলীতে ব্যবসায়ীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ করে দেওয়া হবে। নতুন করে কোনো সিকিউরিটি মানি না দিয়েই এখানকার সমপরিমাণ জায়গা তারা পাবেন। রাস্তাঘাট, লোড-আনলোডের সব সুবিধাই তৈরি করে দেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য যা যা লাগে, তার সবই সিটি করপোরেশন করে দেবে।’
মেয়র আরও বলেন, ‘একটি আধুনিক সিটির মাঝখানে তো এভাবে কাঁচাবাজার থাকতে পারে না। ট্রাক আসছে, ট্রাক যাচ্ছে, রাস্তা বন্ধ করে মালামাল নামছে— কোনো শৃঙ্খলা নেই। রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট হয়। এ ছাড়া বাজারটি ঝুঁকিপূর্ণও। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ স্মার্ট শহরের কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারবে না।’
অনিশ্চয়তার আতঙ্কে নানা পেশার হাজারও মানুষ
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটে ১৯৬৫ সাল থেকে বংশানুক্রমিকভাবে ব্যবসা মোহাম্মদ মামুন শেখের। দোকানে কর্মী তিনজন। গাবতলী গেলে ব্যবসা করতে পারবেন কি না, সে শঙ্কা তার। জানেন না, তার কর্মীরাও সেখানে গিয়ে তার দোকানে কাজ করবেন কি না। শূন্য থেকে শুরু করার আতঙ্কে এখন বিকল্প আয়ের পথ খোঁজার কথা ভাবছেন তিনি। মামুন শেখ বলেন, ‘হাত-পা ধরে জবাই করলে যা হয়, ওখানে গেলে তাই হবে আমাদের।’
১৯৮০ সাল থেকে চালের ব্যবসা করেন এইচ এম আসাদ। ১৯৮৩ সালে ভবন বুঝে পান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সেই ১৯৭৫-৭৬ সাল থেকে এখানে বাজার। ১৯৯৬ সালে বাজারের চারদিকে মুরগির বাজার ও অন্যান্য কাঁচাবাজার বসানো হয়। আর ২০০৪-০৫ থেকে শুরু হয় যানজট। চাঁদাবাজিসহ নানা ঝামেলার মধ্যেও আমরা খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা করে আসছিলাম। কারণ ঢাকার প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় এখানে কখনোই ক্রেতার অভাব হয় না। আশপাশের মগবাজার, তেজগাঁও, ফার্মগেট, তেজতুরি বাজার, ইন্দিরা রোডসহ অনেক এলাকার মানুষের বাজারের জায়গা এটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য এলাকা থেকেও মাসের বাজার করতে মানুষ এখানেই আসে। এখন গাবতলী সরে যেতে বাধ্য করা হলে আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ব। তার বদলে এখানেই কয়েকটি বহুতল ভবন করে দিলে সমস্যার সমাধান হয়।’
স্বাধীনতার পর নোয়াখালী থেকে ঢাকায় আগমন মো. ফজলুল করিমের পরিবারের। ওঠেন পূর্ব তেজতুরি বাজার। ১৯৮৩ সালে তার বড় ভাই প্রথম দোকান নেন কিচেন মার্কেটে। কোনো অ্যাডভান্স ছাড়াই তার ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। বর্তমানে দুই লাখ টাকা অ্যাডভান্স ও ১২ হাজার টাকা ভাড়ায় মুদিপণ্যের দোকান চালাচ্ছেন তিনি।
গাবতলী যাওয়ার কথায় আতঙ্কে আছেন জানিয়ে ফজলুল করিম বলেন, ‘সেখান ক্রেতা পাব কি না, তার নিশ্চয়তা নাই। এ ছাড়া দীর্ঘ দিনের ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ সব ওলট-পালট হয়ে যাবে। বাচ্চারাও তো আশপাশের স্কুলেই পড়ে। পরিবার নিয়ে কী করব, নতুন ব্যবসা শুরু করব কি না, কিছুই জানি না।’
এই মার্কেটেই ১৭ বছর ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া ওমর ফারুক বলেন, ‘সরকার চাইলে আমাদের কিছু করার নাই। আমরা ব্যবসা করে টিকে থাকার চেষ্টা করছি। এখন সরকারের কাছে দাবি, আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।’
আলুর আড়তদার মোহাম্মদ সোহরাব আলী ১৯৯৫ সাল থেকে ব্যবসা করছেন কারওয়ান বাজারে। বললেন, ‘আতঙ্ক লাগে। আমিনবাজার গেলে কারা কিনবে, তা জানি না। আমিনবাজার কখনো যাইনি। সেখানে দোকানের পজিশন কই, তা জানি না। সরকার জোর করে পাঠালে যেতে হবে। না পারলে ব্যবসা ছেড়ে দেবো, আর কী করা!’
আড়ত সমিতির ম্যানেজার আমির হোসেন বলেন, ‘গাবতলী পাঠানো হলে আমাদের পেটে লাথি মারা হবে। আমাদের আন্দোলন চলমান। সরকার যেন আমাদের দাবি মেনে নেয়।’
এদিকে মার্কেটের বাইরে ফুটপাতে গড়ে ওঠা মুরগির দোকান, যেগুলো নিয়ে অভিযোগ স্বয়ং বাজারের দোকানদারদেরও, তারাও বলছেন— এসব অস্থায়ী দোকান সরিয়ে দিলে মার্কেটের সৌন্দর্যও বাড়ে, আবার রাস্তাও পরিষ্কার হয়। কিন্তু এই মুরগির মোকাম ঘিরেও কর্মসংস্থান গড়ে উঠেছে অনেকের।
প্রবাসফেরত মোহাম্মদ মামুন তেমনই একজন মুরগির ব্যাপারি। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার ভেতরের বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট সবাই আমাদের ক্রেতা। এরা সবাই গাবতলী যাবে নাকি? ওখানে ভালো দোকান পেলেও লস হবে আমাদের। আর মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ হলে সংস্কার করুক। কিন্তু ব্যবসা যেন বন্ধ না হয়।’
এদিকে কারওয়ান বাজার ঘিরেই জীবন চলে অসংখ্য শ্রমজীবীর। বাজারে পড়ে থাকা আলু, পেঁয়াজ ও অন্যান্য সবজির পাশাপাশি চাল-ডাল কুড়িয়ে পরিষ্কার করে বিক্রির জন্য তৈরি করেন একদল নারী। তাদের অধিকাংশের বসবাস বেগুনবাড়ি বস্তিতে। এমনই একজন রেহানা বেগম। ১৭ বছর ধরে কাজ করছেন। ১৮ ও ১৬ বছর বয়সী দুই মেয়ে ও স্বামী নিয়ে চারজনের সংসার। দৈনিক আয় ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা। জানালেন, এখান থেকে বাজার সরে গেলে কী করে খাবেন তা জানেন না। একই সুর বাজার ঘিরে কাজ করা অন্যান্য নারী শ্রমিকদেরও।
বাজারজুড়ে বাঁশের ঝুড়ি মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ান মিনতিরা। খুচরা ও পাইকারি বাজার মূল রাস্তা বা পরিবহণ পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যান তারা। তাদের চোখেমুখেও পেশা হারানোর আশঙ্কা। এ প্রতিবেদককে ঘিরে ধরে সেই আশঙ্কার কথাই তুলে ধরলেন কয়েকজন। বললেন, দরিদ্র এই মানুষগুলোর অধিকাংশেরই ঢাকায় নেই থাকার কোনো জায়গা। রাস্তার ধারে বা বাজারের ভেতরে মেঝেতে ঘুমান। প্রতিদিন পাঁচ শ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন আছে তাদের। গ্রামের বাড়িতে থাকা সংসারও চলে এই খরচেই।
১৯৯১ সাল থেকে মিনতি হিসেবে কাজ করেন নরসিংদীর মজিবর। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনজনের সংসার। দৈনিক আয় এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে মার্কেট সরে গেলে কী করব, জানি না। গাবতলীতে যেতে না পারলে অন্য কাজ খোঁজার চেষ্টা করতে হবে।’
জামালপুরের ইসলামপুরের বাচ্চুও কারওয়ান বাজারে মিনতি হিসেবে কাজ করেন। দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চারজনের সংসার। বাজার সরে গেলে অন্য কাজ খুঁজে না পেলে গ্রামে চলে যাবেন বলে ভাবছেন তিনি।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
উত্তর সিটি করপোরেশন কারওয়ান বাজার কারওয়ান বাজার স্থানান্তর গাবতলী গাবতলীতে বাজার ডিএনসিসি বাজার স্থানান্তর