Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবাজারে ফের অপরিকল্পিত দোকান, বহুতল ভবনের কাজ শুরু ‘ঈদের পর’

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৪৯

বঙ্গবাজার ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ভস্ম হওয়ার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই সময়ে এসে ফের আগের মতোই দোকান বসেছে সেই বঙ্গবাজারে। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: নব্বইয়ের দশকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছিল বঙ্গবাজার। প্রায় তিন দশক পর গত বছর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে জনপ্রিয় সেই মার্কেটটি বলতে গেলে ভস্ম হয়ে গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জানিয়েছিল, সেখানেই নতুন করে মার্কেট গড়ে উঠবে। তবে অনিয়ম-অপরিকল্পনা নয়, সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবেই গড়ে তোলা হবে আধুনিক একটি বহুতল বিপণিবিতান।

এরপর এক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই বহুতল বিপণিবিতান তৈরির কাজ শুরু হয়নি। মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের মতো করে দোকানপাট বসাতে শুরু করেছেন। ফলে জায়গাটি আগের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ থেকে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের পর তারা যখন পথে বসে গেছেন, তখন সিটি করপোরেশন দীর্ঘ সময় নিয়েও তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। ফলে তারা বাধ্য হয়েছেন আগের মতো করে দোকান বসিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর। অন্যদিকে ডিএসসিসি বলছে, তারা বঙ্গবাজারে আধুনিক বিপণিবিতানের নকশার কাজ শেষ করেছে। ঈদুল ফিতরের পর প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে নির্মাণকাজের উদ্বোধন হবে। নতুন করে গড়ে ওঠা দোকানগুলো তখন ভেঙে ফেলতে হবে।

২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভোরে আগুন লেগেছিল বঙ্গবাজারে। সেই আগুন থেকে রেহাই পায়নি বঙ্গবাজারের কোনো দোকানই। গোটা মার্কেটটিই ভস্মীভূত হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই মার্কেটের কয়েক শ ব্যবসায়ী সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন।

মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সব হারিয়ে পথে বসলেও তারা সিটি করপোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী আধুনিক মার্কেট গড়ে ওঠার অপেক্ষা করেছেন। ব্যবসা বন্ধ করে না খেয়ে দিন পার করেছেন। মাসের পর মাস বেকার থেকেছেন। ঈদ চলে আসায় গত দুই-তিন মাসে যে যার মতো করে আবার দোকান তৈরি করছেন। কাঠ-বাঁশ দিয়ে কোনোমতে কাঠামো তৈরি করে ওপরে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে দোকানে মালামাল তুলেছেন।

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিটি করপোরেশন কোনো উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে তারা অস্থায়ী কাঠামো গড়ে দোকান বসাতে বাধ্য হয়েছেন। ছবি: সারাবাংলা

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে বঙ্গবাজার মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া পুরো এলাকাটিতে কাঠ ও লোহার ফ্রেমের ওপর ত্রিপলের ছাউনির অবকাঠামো তৈরি করে ছোট ছোট দোকান করা হয়েছে। সব দোকানেই মালামাল তোলা হয়েছে। তবে ক্রেতাদের আনাগোনা তেমন একটা নেই। আগে যেমন দিনের প্রায় সব সময়েই গোটা মার্কেট সারা দেশ থেকে আসা খুচরা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতাদের আনাগোনায় জমজমাট থাকত, সেই আবহ খুঁজে পাওয়া গেল না এই মার্কেটে। দোকানিদের বেশির ভাগই অলস সময় পারছিলেন।

সেভেন স্টার ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী ইকবাল হাসান বুলু সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি বছর হয়ে গেল সেই বিভীষিকাময় দিনের। একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি, ভাই। ব্যাংকের লোন এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। কী করব, আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধারদেনা করে কোনোরকমে দোকান সাজিয়েছি। মালামাল অনেক কম। কাস্টমার আসছে খুচরা হিসাবে কিনতে। দূর-দূরান্ত থেকে কাস্টমার কম আসছে। বিক্রি নেই বললেই চলে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল বলেন, ‘স্থায়ী মার্কেট হলে এখানে ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি হতো। আগুনে সব শেষ হয়ে গেছে ভেবে এখানে বাইরের কাস্টমার আসছেন না। তারা বিকল্প হিসেবে মিরপুর, শাহ আলী, ‍গুলিস্তান ও কেরানীগঞ্জ থেকে মাল কিনছেন। সরকারের সংস্থাগুলো যদি এক হয়ে এখানে মার্কেট তৈরি করে দিত, তাহলে উপকার হতো।’

জারা কিডসের মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এখানে নাকি ১২ তলা মার্কেট হয়? কোথায় সেই মার্কেট? আগুন লাগলে সবাই আসে, প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে চায় না কেউ। এভাবেই অপরিকল্পিতভাবে আবারও মার্কেট গড়ে উঠবে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। হয়তো কোনো একদিন আবারও কোনো এক আগুনে সর্বনাশ হবে। কিন্তু আমাদেরও তো কিছু করার নেই।’

রাইয়ান গার্মেন্টসের মালিক আবুল কাশেম বলেন, ‘আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আমরা কোনো অনুদান পাইনি। ব্যবসায়িকভাবে সহযোগিতাও পাইনি। মার্কেট হবে বলে এখানে বহুদিন দোকান করিনি। ঈদ আসায় মাসখানেক হলো দোকান করেছি অস্থায়ীভাবে। দোকান করার মতো টাকাও তো নেই। মাল বাকি এনে বিক্রি করছি। বিক্রি হলে লাভের টাকা দিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি বলছে, ঈদুল ফিতরের পরে বঙ্গবাজারের জায়গাটিতে বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ উদ্বোধন হতে পারে। ছবি: সারাবাংলা

ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, ঈদুল ফিতরের পর বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে তারা শুনেছেন। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেল সে কথাই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া বঙ্গ মার্কেটের জায়গায় ১০ তলা মার্কেট হবে। নকশার কাজ শেষ করা হয়েছে। টেন্ডারের কাজও শেষ হয়েছে। ঈদের পর প্রধানমন্ত্রী সময় দিলেই মার্কেটের উদ্বোধন করা হবে।’

কবে নাগাদ নির্মাণকাজ উদ্বোধন হতে পারে— জানতে চাইলে আবু নাছের বলেন, ‘আশা করছি এপ্রিলের মধ্যেই মার্কেটের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হবে।’

বঙ্গবাজারের সেই দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস বেশকিছু সুপারিশ করেছিল। জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছিল। সুপারিশ অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও রাজউক কাজ করে থাকে। ফায়ার সেফটি নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজও করা হয়েছে। পরে কী হয়েছে তা তো দৃশ্যমান। সেখানে আমাদের আর কোনো কাজ নেই।’

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

ডিএসসিসি দক্ষিণ সিটি করপোরশন বঙ্গবাজার বঙ্গবাজারে আগুন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর