রাজশাহীতে বেড়েছে লিচুর আবাদ, বাম্পার ফলনের আশা
৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৭
রাজশাহী: রাজশাহীতে ফলের চাষ বলতে প্রথমেই নাম আসে আমের। তবে শুধু আম নয়, রাজশাহী বিখ্যাত লিচুর জন্যও। রাজশাহীর লিচু স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। বর্তমানে জেলাজুড়ে লিচুর গাছে গাছে ঝুলছে মুকুল। কিছু কিছু গাছে গুটিও দেখা যাচ্ছে। কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন লিচু চাষি থেকে শুরু করে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, রাজশাহী অঞ্চলে চলতি মৌসুমের আবহাওয়া ছিল নাতিশীতোষ্ণ। তাই এবার লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।
চাষি ও কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে যে আবহাওয়া ছিল, তা লিচুর ভালো ফলনের জন্য উপযোগী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লিচুর উৎপাদন হবে ভালো। তবে চাষিদেরও গাছ পরিচর্যায় আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। চাষিরাও বলছেন, তারা লিচু গাছের পরিচর্যায় যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে শুধু লিচু চাষ করে জেলার কয়েক শ চাষি স্বনির্ভর হয়েছেন। তাই প্রতি বছর লিচু চাষ বাড়ছে। চাষিদের মধ্যে এ ফলটির আবাদ এরই মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাগান ছাড়াও বসতবাড়িতে দেশি লিচুর পাশাপাশি উচ্চফলনশীল চায়না-৩ এবং বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচু চাষ হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, রাজশাহীতে প্রতিবছর বাড়ছে লিচু চাষ। এ বছর জেলায় লিচুর চাষ বেড়েছে পাঁচ হেক্টর জমিতে। গত বছর লিচুর আবাদ ছিল ৫২৫ হেক্টর জমিতে, যা এ বছর বেড়ে হয়েছে ৫৩০ হেক্টর। এর আগে ২০২০ সালে ৫০০ হেক্টর ও ২০২১ সালে ৫১৯ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ মৌসুমে জেলায় লিচুর আবাদ হয়েছিল ৪৮৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল দুই হাজার ৫১০ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ সালে এক হেক্টর বেড়ে মোট চাষের জমি দাঁড়ায় ৪৯০ হেক্টরে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে চাষের জমি বাড়ে আট হেক্টর। মোট ৪৯৮ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদে উৎপাদন হয় দুই হাজার ৮৭৬ মেট্রিক টন। সে বছর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ছিল পাঁচ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন।
এরপর ২০১৯-২০ মৌসুমে লিচুর আবাদ আরও দুই হেক্টর বেড়ে ৫০০ হেক্টরে দাঁড়ায়। ২০২০-২১ মৌসুমে ১৯ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ বেড়ে মোট চাষের জমি দাঁড়ায় ৫১৯ হেক্টরে।
রাজশাহী নগরীরর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছরে প্রতিটি এলাকাতেই বসতবাড়িতে লিচু গাছ লাগানোর প্রবণতা বেড়েছে। এর মধ্যে নগরীর রায়পাড়া, বুলনপুর, ছোটবনগ্রাম ও কাটাখালী এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলাতেও চাষ হচ্ছে লিচু।
এসব এলাকার প্রতিটি বাগানের গাছেই এখন দেখা মিলছে মুকুলের। চাষিরা জানিয়েছেন, গুটি এরই মধ্যে বড় হতে শুরু করেছে। তাই গুটি টিকিয়ে রাখতে তারা বিভিন্ন রাসায়নিক ওষুধ স্প্রেসহ পরিচর্যার কোনো ত্রুটি রাখছেন না।
জেলার পবা উপজেলার বড়গাছি গ্রামের লিচু চাষি আবদুল কাদের বলেন, ‘আবহাওয়া যদি শেষ পর্যন্ত ভালো থাকে, তাহলে এবার লিচুর ফলনও ভালো হবে। গাছ থেকে লিচু যেন পড়ে না যায়, সে জন্য পর্যাপ্ত পানি দেওয়া হচ্ছে। কাঠবিড়ালি আর বাদুড় যেন নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য জালের ব্যবস্থা করা হবে। লিচুর পরাগায়ণ বাড়াতে বাগানে একজন মৌচাষিকে মৌ-বাক্সও বসাতে দিয়েছি।’
সরজমিনে লিচুর বাগানগুলো ঘুরে দেখা যায়, লিচু চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মুকুল ও গুটির পরিচর্যায়। গাছের গোড়ায় ড্রেন করা, পানি দেওয়া, স্প্রে করাসহ লিচু গাছের পরিচর্যা চলছে। কীটনাশকসহ বিভিন্ন ভিটামিন স্প্রে করছেন তারা। এ ছাড়াও লিচু মোটা করতে মাটিতে জৈব সার, হরমোনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার প্রয়োগ করবেন তারা।
দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর এলাকার লিচু চাষি মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময়মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে লিচুর ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি। এ বছর লিচুর মুকুল আসার সময় হালকা বৃষ্টি হওয়ার কারণে পূর্ণাঙ্গ মুকুল বের হয়েছে। এসব মুকুল ফুটতেও শুরু করেছে।’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘লিচু এমন একটি ফল যা মানুষকে আকর্ষণ করে। তাই এই ফলে খুব একটা লোকসান হয় না। তবে কোনো মৌসুমে ফলন একটু কম, আবার কোনো মৌসুমে বেশি হয়। তবে আশার কথা, রাজশাহীতে প্রতিবছর লিচুর আবাদ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে পাঁচ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ বেশি হয়েছে। তুলনামূলকভাবে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও কিছুটা বেশি।’
সারাবাংলা/টিআর