Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন্ধুর মেয়ে চুরি, মুক্তিপণের পর ফেরত দিয়ে ধরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:০০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে বন্ধুর দুই বছর বয়সী মেয়েকে চুরির ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটির যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য আট হাজার টাকা মুক্তিপণ পাঠিয়ে প্রথমে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর অভিযান চালিয়ে মূল অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে অবশ্য ঘটনায় জড়িত তার সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাতে নগরীর বন্দর থানার নিমতলা এলাকা থেকে শিশু চুরির সঙ্গে জড়িত মূল ব্যক্তি মো. হেলালকে (৩৬) গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি ভোলা জেলায়।

এর আগে, বৃহস্পতিবার ভোরে নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে হেলালের সহযোগী ইব্রাহিম রাঢ়িকে (২৫) গ্রেফতার করা হয় বলে বন্দর থানা পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ জানায়, নগরীর মাইলের মাথা এলাকায় একটি কলোনিতে পোশাককর্মী বিলকিস তিন সন্তান নিয়ে থাকেন। তার দুই ছেলে, এক মেয়ে। এরা হল- শামীম (১৪), রবিউল (৮) ও মেয়ে আয়েশা (২)। বিলকিসের স্বামী ভোলা জেলায় তাদের গ্রামের বাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

হেলালের বাড়িও ভোলা জেলায় একই গ্রামে। বিলকিসের স্বামীর বন্ধু হেলাল। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হেলাল বিলকিসের বাসায় যায়। বিলকিস তখন কারখানায় ছিলেন। বাসায় তিন সন্তানের মধ্যে শামীম বাইরে বের হয়েছিল। রবিউলকে ২০ টাকা দিয়ে দই কিনতে পাঠায় হেলাল। রবিউল বের হওয়ার পর দ্রুত আয়েশা নিয়ে চলে যায় হেলাল। রবিউল বাসায় ফিরে বোনকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তার মাকে জানায়। ওই রাতেই বিলকিস থানায় গিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।

বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কিশোর মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার ভোর রাত পৌনে ৪টার দিকে বিলকিসের মোবাইলে একটি কল আসে। সেখানে মেয়েকে মুক্তি দেয়ার জন্য এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আমরা ওই মোবাইল নম্বর পর্যালোচনা করে একই নম্বর থেকে ১৪টি কল পাই। সেই কলদাতা ইব্রাহিমকে শনাক্ত করে বৃহস্পতিবার ভোরে আমরা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। সে জানায়, আয়েশা চুরির সময় সে-ও ছিল, তবে কিছুটা দূরে অবস্থান করছিল। আয়েশাকে বিক্রি না করা পর্যন্ত তার স্ত্রীর হেফাজতে রাখার কথা ছিল। কিন্তু স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় হেলাল শিশুটিকে নিয়ে কর্ণফুলী উপজেলায় চলে যায়।’

‘এর মধ্যে আমরা বিলকিসের মাধ্যমে মুক্তিপণের আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকি। শিশুটির যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য আমরা বিকাশে ৮ হাজার টাকা পাঠাই। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে একজন অটোরিকশা চালকের মাধ্যমে শিশুটিকে সল্টগোলা এলাকায় পাঠানো হয়। বিলকিসসহ আমরা শিশুটিকে অক্ষত অবস্থায় গ্রহণ করি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অটোরিকশা চালককে আটক করা হয়। সে জানায়, তাকে ২০০ টাকা দিয়ে এক ব্যক্তি শিশুটিকে মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা বললে সে রাজি হয়েছিল। এসময় আমরা হেলালের ছবি দেখালে অটোরিকশা চালক তাকে শনাক্ত করে।’

এসআই কিশোর জানান, শিশুটিকে ফেরত দিলেও হেলাল বারবার স্থান পরিবর্তন করছিল। সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত করে শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে হেলাল জানিয়েছে, তারা দুজন মিলে শিশুটিকে চুরি করে বিক্রির পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ইব্রাহিমের স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এছাড়া শিশুটি মায়ের বুকের দুধ ছাড়া আর কিছু না খাওয়ায় তাকে হেফাজতে রাখা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। শেষমেষ বিক্রির পরিকল্পনা বাদ দিয়ে শিশুর মায়ের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক অটোরিকশা চালক মামলার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ইব্রাহিম কারাগারে আছেন। হেলালকে শনিবার আদালতে হাজিরের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে এসআই কিশোর মজুমদার জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর