আস্থা নেই যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে, তিন বছরে ১ অভিযোগ
৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০১
কুষ্টিয়া: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল থাকলেও দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম নেই। সর্বশেষ গত বছরের ১৮ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সেলকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। তারপরও কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো সভা করতে পারেনি নতুন কমিটি।
এ ছাড়া, শিক্ষার্থীদের মাঝে সেলটির কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা না থাকা ও আস্থাহীনতার কারণে গত তিন বছরে কাউকে কোনো অভিযোগ জমা দিতে দেখা যায়নি। তবে সেলটিতে সম্প্রতি একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। আর এর পর পরই ব্যক্তিগত অপারগতা দেখিয়ে কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দা সিদ্দীকা পদত্যাগ করেন। সে কারণে ১ এপ্রিল বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন আরা সাথীকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেন উপাচার্য।
প্রক্টর অফিস জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র অন্য ছাত্রের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ জমা দেন প্রক্টর অফিসে। প্রক্টর অফিস প্রাথমিক তদন্ত করে সেই অভিযোগ পাঠায় যৌননিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে। সেই অভিযোগ যাওয়ার পর সেলের আহ্বায়ক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। ফলে সেই অভিযোগ সেভাবেই পড়ে আছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায়সই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটলেও নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে কোনো অভিযোগ যাচ্ছে না। বিগত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সম্প্রতি সেলে যৌন-নিপীড়নের প্রথম অভিযোগ জমা পড়ে। তবে এই সময়ে প্রক্টর অফিসে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়ে, যা যৌন নিপীড়ন পর্যায়ের।
শিক্ষার্থীরা জানায়, যৌননিপীড়ন প্রতিরোধ সেল সম্পর্কে তাদের তেমন কোনো ধারণা নেই। পাশাপাশি দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম না থাকায় সেল নিয়ে আস্থাহীনতাও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেকোনো ধরণের ঘটনার জন্য প্রক্টর অফিসে অভিযোগ জমা দেন। প্রক্টর অফিস তাদের মতো করে কাজ করে। সেগুলোর মধ্যে কোনোটির নিষ্পত্তি হয়, আবার কোনোটি পড়ে থাকে দফতরেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকদের দাবি, যৌননিপীড়ন প্রতিরোধ সেল তাদের কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছতে ও আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এজন্য শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হলেও অভিযোগ করছে না। সেলটি শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পারলে উদ্দেশ্য সফল হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও উচিত তদারকি করা।
এদিকে, সেল থেকে পদত্যাগ করা আহ্বায়ক আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দা সিদ্দীকা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর কোনো অভিযোগ আসেনি। আগের কমিটিও কোনো অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে দেয়নি। এজন্য কোনো সভা বা কাজ হয়নি। আমি ব্যক্তিগত অপারগতার কারণে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম। তবে যতটুকু জানি সম্প্রতি একটি অভিযোগ এসেছে। আমি যেহেতু দায়িত্বপালন করব না, সেজন্য এটি নিয়ে কাজ করা হয়নি।’
সেলের সাবেক আহ্বায়ক আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি তিন বছর সেলের দায়িত্বে ছিলাম। এর মাঝে যৌন-নিপীড়নের কোনো অভিযোগ আসেনি। একটি অভিযোগ এসেছিল সেটিও সাইবার অপরাধসংক্রান্ত। আমার সময়ে বেশ কয়েকটি সেমিনারসহ কিছু কাজ করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনো অভিযোগ করেনি। শিক্ষার্থীদের লজ্জা ও ভয় থেকে বেরিয়ে এসে অভিযোগ করা উচিত।’
নতুন দায়িত্ব পাওয়া আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন আরা সাথী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাব। ঈদের পরে কমিটির সব সদস্যকে নিয়ে একটি সভা করব। সেখানে সেলের কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করি, আমাদের কার্যক্রমগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছবে ও সেল সম্পর্কে অবগত হবে।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপককে যখন দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন তার উচিত সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা। সব বিষয় তো আমরা তদারকি করতে পারি না। তাদের কোনো সমস্যা হলে, সেটি নিয়ে আমাদের কাছে এলে, তখন সমাধান করা যাবে।’
সারাবাংলা/পিটিএম