টাকার দামও বেড়েছে!
৭ এপ্রিল ২০২৪ ২২:২৪
ঢাকা: টাকায় ডলার বেচাকেনার বিষয়টা নিয়মিতই ঘটে থাকে। কিন্তু টাকায় টাকা কেনার বিষয়টা দেখা যায় বছরে দুয়েকবার। প্রতিবছর দুই ঈদে নতুন টাকা বিক্রির হিড়িক পড়ে। শুধু বিক্রি নয়, রীতিমতো চড়া দামে বিক্রি হয় বাংলাদেশি মুদ্রার নতুন নোট। এবার এর ব্যতিক্রম হয়নি। ডলারের মতোই বেড়েছে নতুন টাকার দাম।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোতে নতুন নোট বদলানোর জন্য কোনো ধরনের চার্জ নেওয়ার বিধান নেই। কিন্তু রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের ফুটপাতে টাকার বিনিময়ে নতুন টাকার নোট পাওয়া যাচ্ছে।
ঈদে রাজধানীতে বসবাস করা মানুষদের বড় একটি অংশ গ্রামে চলে যান। গ্রামে গিয়ে প্রিয়জনকে সালামি দেওয়া, দোকান খরচ, ফিতরা দেওয়া, ঈদ জামাতের মাঠে বিতরণ করা টাকার নোটটি যদি নতুন হয় তাহলে সবাই খুশি। কাউকে নতুন টাকা দিলে অনেক খুশি লাগে। সেজন্য গ্রামের যাওয়ার আগে অনেকে নতুন টাকার নোট কিনে যায়।
শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তান ও মতিঝিল এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, টাকার দোকানের সামনে উপচে পড়া ভিড়। তারা টাকার বিনিময়ে টাকা কিনছেন। কেউ ৫ টাকার নোট, কেউ ১০ টাকার নোট, কেউ ২০ টাকার নোট, কেউ ৫০ টাকার নোট, আবার কেউ ১০০ ও ২০০ টাকার নোট কিনছেন।
নতুন টাকা কিনতে আসা মানুষজন বলছে, টাকার দাম অনেক বেশি। ৫০ টাকার এক বান্ডিল নোটের (পাঁচ হাজার) বিপরীতে ৪০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতা। একইভাবে ২০ টাকা, ১০ টাকা ও ৫ টাকার নোটের প্রতিটি বান্ডিলে বিপরীতে ৩০০ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ এক বান্ডিল টাকা কিনতে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, কেউ যদি ২০ টাকার এক বান্ডিল (দুই হাজার) নতুন নোট কিনতে চান, তাহলে তাকে দুই হাজার ৩০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ দুই হাজার টাকার দাম ২৩০০ টাকা। একইভাবে ১০ টাকার বান্ডিল (এক হাজার) গুনতে হচ্ছে ১৩০০ টাকা এবং ৫ টাকার বান্ডিল (৫০০ টাকা) কিনতে ৮০০ টাকা দিতে হচ্ছে।
গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর যাচ্ছেন সুরুজ আলী। তিনি এক বান্ডিল ২০ টাকার নোট কিনেছেন। সুরুজ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই হাজার টাকা কিনেছে। দিতে হয়েছে ২৩০০ টাকা।’ আরেকজন ১০০ টাকার নোট কিনেছে এক বান্ডিল (১০ হাজার)। তাকে দিতে হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ টাকা।
নোয়াখালীতে ঈদ করতে যাবেন বোরহান উদ্দিন সাগর। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের নতুন টাকা দিলে খুশি হয়। ফিতরার টাকা নতুন দিতে ভালো লাগে। ঈদের মাঠেও বিভিন্ন জায়গায় টাকা বিতরণ করতে হয়। অনেকেই নতুন নোট বিতরণ করে। তাই আমিও টাকা কিনতে আসছি। কিন্তু দাম অনেক বেশি। এখন অল্প করে নিতে হবে।’
কামরুল ইসলাম নামে একজন ভদ্রলোক নোট কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। তাকে ফিরে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতেই সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘নতুন টাকাও যা পুরাতন টাকাও তাই। এটা কিনতে এত টাকা লাগবে কেন? টাকাই কিনব না। কোনো ধরনের আইন নাই টাকা বিক্রির। এরা অবৈধভাবে এই টাকা বেচাকেনা করে। এরা ছেঁড়া টাকা বিনিময়ের জন্য এখানে বসে। কিন্ত এর আড়ালে তারা বেশি দামে নতুন টাকার নোট বিক্রি করছে, যা রীতিমতো আইন বিরোধী।’
জানতে চাইলে টাকা বিক্রেতা নুরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার টাকার দাম বেশি। এক টাকা কিনতে ২৯০ টাকা খরচ হয়েছে। মাত্র ১০ টাকা লাভে ছেড়ে দিচ্ছি। ঈদের কয়দিন শুধু বিক্রি হয়। সারাবছর তো নতুন টাকা বিক্রি হয় না। তখন ছেঁড়াফাটা টাকা বিনিময় করি শুধু।’
দিনে কত টাকা বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিন চারদিন ধরে বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। আজ একটু বেশি হবে। আগামী দুই চারদিন অন্তত ১০ লাখ টাকা করে বিক্রির সম্ভবনা রয়েছে। মানুষ হুমরি খেয়ে কিনছেন। কারণ তাদের দরকার। যুগ পাল্টাইছে। সবাই নতুন টাকার নোট নিয়ে আনন্দ করতে চায়। এটাও এক ধরনের উৎসব। ঈদে সবাই আনন্দ করছে। বিনিময়ে আমাদেরও একটু আয় হলো।’
আইনের বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা বিক্রি করা যাবে না- এমন কথা কখনো শুনিনি। ১৫ বছর ধরে এখানে টাকা বিক্রি করি। কেউ কোনো দিন বাধা দেয়নি। পুলিশও কোনোদিন কিছু বলেনি। আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ বাধা দিত।’
টাকার বিক্রির কোনো বৈধতা আছে কি না? জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংক ছাড়া কেউ বাইরে নতুন টাকা বিনিময় করতে পারবে না। গুলিস্তানে নতুন টাকা বিনিময় হয় ছেঁড়াফাটা টাকার বিনিময়ে। সেক্ষেত্রে হয়তো তারা একটা কমিশন নেয়। কিন্তু নতুন টাকার নোট বিক্রি করা ঠিক নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি বিক্রিই হয়ে থাকে তাহলে আপনি নিচ্ছেন কেন? পুরাতন হোক আর নতুন হোক টাকা তো একই। তার মানে আপনি মেনে নিয়েই চড়া দাম দিয়ে কিনছেন নতুন নোট। আপনি না কিনলে সে তো জোর করে আদায় করতে পারবে না। আপনি ব্যাংকে শ্রম ও সময় না দিয়ে ওখান থেকে কিনছেন? এতে আপনি লাভবান হচ্ছেন। বিনিময়ে সে সার্ভিস চার্জ নিচ্ছে।’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম