মেক্সিকো দূতাবাসে অভিযান: লাতিন আমেরিকার সমালোচনার মুখে ইকুয়েডর
৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:১৬ | আপডেট: ৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩৯
কুইটোতে মেক্সিকো দূতাবাসে অভিযান চালিয়ে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসকে গ্রেফতার করে ইকুয়েডরের নিরাপত্তা বাহিনী। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ইকুয়েডরের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে মেক্সিকো। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেন দূতাবাসে অভিযান চালানোর কারণে লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলোও ইকুয়েডরের নিন্দা করছে।
আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, কিউবা, পেরু, উরুগুয়ে এবং ভেনিজুয়েলা শনিবার ইকুয়েডরকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করেছে। ইকুয়েডরের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসকে আটক করার কয়েক ঘন্টা পর নিকারাগুয়াও কুইটোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
শুক্রবার গভীর রাতে ঘটা এই ঘটনার সময় বিশেষ বাহিনী মেক্সিকো দূতাবাস ঘিরে ফেলে। অন্তত একজন নিরাপত্তা বাহিনীর এজেন্ট দেওয়াল টপকে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসকে দূতাবাস থেকে বের করে নিয়ে আসেন।
৫৪ বছর বয়সী জর্জ গ্লাস দুর্নীতির অভিযোগে ইকুয়েডরে ওয়ান্টেড। গত ডিসেম্বরে তিনি মেক্সিকোতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার পর থেকে মেক্সিকান দূতাবাসের ভিতরে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। মেক্সিকান কর্তৃপক্ষ শুক্রবার তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ মঞ্জুর করেছে। ঠিক ওই দিন রাতে তাকে গ্রেফতারে দূতাবাসে অভিযান চালায় ইকুয়েডর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, গ্রেফতারের পর গ্লাসকে কুইটো বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভারী সশস্ত্র সৈন্যরা তাকে পাহারা দিচ্ছেন। পরে একটি বিমানে করে দেশটির বৃহত্তম শহর গুয়াকিলের একটি কারাগারে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর ইকুয়েডরের এই অভিযানকে একটি অস্বাভাবিক কূটনৈতিক অনুপ্রবেশ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি তার দেশের দূতাবাস থেকে ইকুয়েডরের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টের গ্রেফতারকে একটি স্বৈরাচারী কাজ বলেও সমালোচনা করেছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক আইন এবং মেক্সিকোর সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া নেতৃত্বাধীন সরকার অবশ্য যুক্তি দিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগের কারণে মেক্সিকো দূতাবাসে জর্জ গ্লাসের আশ্রয় সুরক্ষা অবৈধ ছিল।
উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোনো দেশের প্রতিনিধিত্ব করে দূতাবাস। দূতাবাসকে ওই দেশের সার্বভৌম অঞ্চল হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কোনো দেশের সরকারের সঙ্গে সেদেশে অবস্থিত দূতাবাসের সম্পর্ক সুরক্ষিত। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, কোনো দেশ তার ভূখণ্ডে অবস্থিত কোনো দূতাবাসে অনুপ্রবেশ করতে পারে না।
ব্রাজিল সরকার ইকুয়েডরের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে নিন্দা করেছে। ব্রাজিল সরকার বলেছে, এই পদক্ষেপটি বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা যাই হোক না কেন তা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যানের বিষয়।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে একটি পোস্টে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, বিশ্বে যে বর্বরতার অগ্রগতি হচ্ছে তার মধ্যে অবশ্যই লাতিন আমেরিকাকে আন্তর্জাতিক আইনের অনুশাসনগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তার সরকার একটি পৃথক বিবৃতিতে বলেছে, গ্রেফতার হওয়া রাজনীতিবিদ গ্লাসের জন্য মানবাধিকার আইনে সুরক্ষা দাবি করে কলম্বিয়া।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইকুয়েডরের সমালোচনায় যোগ দিয়েছে। ওয়াশিংটন বলেছে, তারা কূটনৈতিক মিশনকে সুরক্ষা দেয় এমন কনভেনশনের যে কোনো লঙ্ঘনের নিন্দা করে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে উভয় দেশকে তাদের পার্থক্য সমাধান করার জন্য উৎসাহ দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি এই অভিযানে শঙ্কিত। উভয় পক্ষকে বিরোধ সমাধানে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটসও ক্রমবর্ধমান বিরোধ সমাধানের জন্য সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। একটি বিবৃতিতে তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো কঠোরভাবে মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য সংস্থাটির স্থায়ী কাউন্সিলের একটি অধিবেশন আহ্বান করা হবে।
অভিযানের পরদিন শনিবার কুইটোয় মেক্সিকো দূতাবাস ঘিরে রাখে পুলিশ। দূতাবাসে মেক্সিকোর পতাকাও নামিয়ে রাখা হয়। মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিনের শেষের দিকে বলেছে, কূটনৈতিক কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা রোববার একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ইকুয়েডর ত্যাগ করবেন। বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মিত্র দেশগুলোর কর্মীরা বিমানবন্দরে তাদের বিদায় জানাবেন।
মেক্সিকো সিটিতে প্রায় ৫০ জন বিক্ষোভকারী ইকুয়েডরের দূতাবাসের বাইরে সমাবেশ করেছে। কুইটোকে ফ্যাসিবাদী বলে অভিযুক্ত করেছেন তারা।
জর্জ গ্লাস ইকুয়েডরে প্রাক্তন বামপন্থী প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ঘুষসহ আর্থিক দুর্নীতির মামলা রয়েছে। এছাড়া ২০১৬ সালে একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর পূর্ণর্গঠন তহবিল তসরুপের অভিযোগেও একটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অবশ্য গ্লাস দাবি করেছেন, তিনি রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার। তবে ইকুয়েডর সরকার গ্লাসের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোরেয়া ২০১৭ সাল থেকে বেলজিয়ামে নির্বাসিত ছিলেন। তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি পলাতক থাকায় তার অনুপস্থিতিতেই বিচার হয়েছে। বিচারে আট বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন তিনি।
সারাবাংলা/আইই