ঈদে মসলার বাজার চড়া, বিক্রিও কম
৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৬
ঢাকা: ঈদের আগের শেষ সময়ে ক্রেতাদের আনাগোনা এখন মসলার বাজারে। এবার মসলার বাজারে বেচাকেনা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক কম বলে জানান বিক্রেতারা। তবে ক্রেতাদের ভাষ্য— ঈদের বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম। রাজধানীর নিউ মার্কেটের মসলার বাজার, মোহাম্মদপুরের কৃষি বাজার, শ্যামলী ও কল্যাণপুরের বিভিন্ন মসলার বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এ সব বাজারের মসলা বিক্রেতারা বলছেন, এবার মসলার দাম কিছুটা বেশি এ জন্য বিক্রিও আশানুরূপ হচ্ছে না। পাইকারি বাজারে বেশিরভাগ মসলা পণ্যের দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
মাত্র দুইমাসের ব্যবধানে এলাচের মূল্য কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বেড়েছে দারুচিনি, বাদাম, কিসমিসসহ আরও কয়েকটি মসলা পণ্যের দাম। তবে জিরার দাম কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভালোমানের (বড় আকারের) এলাচ ৩৫০০ থেকে ৩৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট আকারের এলাচ ৩০০০ থেকে ৩২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে; যদিও একমাস আগেও তা ২৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে বাজারে এখন জিরার দাম ১২০০ টাকা থেকে কমে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্য মসলার মধ্যে দারুচিনি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, ধনিয়া ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা, গোলমরিচ ৮০০ টাকা, বাদাম ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, জয়ফল ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা, জয়ত্রী ৩৫০০ থেকে ৩৬০০ টাকা, আলুবোখারা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, কিসমিস ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২৯০০ থেকে ৩১০০ টাকা, কাজুবাদাম ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, কাঠবাদাম ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা, চিনা বাদাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, আমদানিকৃত রসুন ২০০ টাকা, আদা ২০০ টাকা, দেশি আদা ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া বাজারে বিভিন্ন ব্যান্ডের প্যাকেটজাত মসলা পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে মাংসের মসলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, মুরগির মাংসের মসলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, কালা ভুনার মসলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বিরিয়ানির মসলা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মেজবানির মাংস মসলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, রোস্টের মসলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাবাব মসলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, জর্দা মিক্স ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, ফিরনি মিক্স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, হালিম মিক্স ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় প্রতি প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর নিউ মার্কেটের সাথী মসলা ভান্ডারের বিক্রেতা সুমন মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার বেচাকেনা মোটামুটি। তবে গতবারের চেয়ে কম। এবার এলাচি, বাদাম, দারুচিনি, কিসমিসের দাম বেড়েছে। তবে জিরার দাম কিছুটা কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরের এই সময়ে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হওয়া জিরার দাম কমে এখন ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’
সেখানে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে নিউ মার্কেটে ঈদের মসলার বাজার করতে আসা তৌহিদ মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে সব মসলার দামই বেশি। যেটি কিনতে যাই সেটার দামই বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম বাড়ায়। এ কারণে আমরা পড়ি বেকায়দায়।’
শনিবার মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারের মা মসলা স্টোরের বিক্রেতা মোহাম্মদ সাগরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার আগের মতো বেচাকেনা নেই। ঈদ উপলক্ষে আমাদের যে পরিমাণ বেচাকেনা হওয়ার কথা এবার তার চেয়ে অনেক কম হচ্ছে। বেশিরভাগ মসলা ঈদ ছাড়া অন্য সময় বিক্রি কম হয়। কিন্তু বিনিয়োগ করতে হয় বেশি টাকা। আর এসব মসলা কিছু পরিমাণ নষ্টও হয়। তাই খুচরায় মসলার দাম একটু বেশি।’
একই বাজারে আদাবর থেকে ঈদের মসলা কিনতে আসা তানিয়া মাহবুব সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে সব মসলার দাম বেশি। তাই প্রয়োজনের চেয়ে কম কিনছি।’ বাজেট কাটছাঁট করে বাজার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কৃষি বাজারের মো. শাহজাহান নামে আরেক মসলা বিক্রেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর কয়েকটি মসলাপাতির দাম বেড়েছে। দোকানে কাস্টমার কম।’ সামনের কয়েকদিন বেচাবিক্রি বাড়তে পারে এমন আশার কথা জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে এবার যে পরিমাণ মসলার দোকানে এনেছি, তার অর্ধেকও বিক্রি হয়নি।’
শ্যামলীতে বেসরকারি চাকরিজীবী হাসান মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আর মসলাপাতিও এর বাইরে নয়। তাই বাজার করতে হয় খুব হিসেব করে। প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনে বাজেট কাটাছাঁট করে মসলার বাজার করেছি।’
একই এলাকার মাওলানা স্টোরের বিক্রেতা ওমর আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোজায় জিরার দাম কিছুটা কমেছে। তবে বাদামসহ অন্য কয়েকটি মসলার দাম বেড়েছে। ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা যতটুক আশা করেছিলাম, ততটুকু হচ্ছে না।’
নিউ মার্কেটের জালাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জালাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার মসলার বাজার ভালো যাচ্ছে না। গতবার এ সময়ে কাস্টমারের কারণে আমরা দম ফেলার ফুসরত পেতাম না। আর এবার কাস্টমারের জন্য বসে থাকতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু মসলার দাম বেড়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এলাচি, দারুচিনি, বাদাম, কিসমিসসহ আরও কয়েকটি মসলা পণ্য। তবে দাম কমেছে জিরাসহ দু একটি মসলার।’
দোকানিরা নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেয় এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে ছোট ছোট দোকানদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এ ছাড়া অনেকে আবার ঈদ মৌসুমে শুধু মসলার ব্যবসা করেন। এ কারণে বিভিন্ন বাজারে মসলার দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।’
এ সব বিষয়ে সরকারের তদারকি বাড়াতে হবে জানান তিনি।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে