রঙিন হয়ে দর্শনার্থীদের ডাকছে চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলো
৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:১৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল ফিতর থেকে পহেলা বৈশাখ- দুই উৎসব মিলিয়ে অন্তঃত পাঁচদিনের টানা ছুটি। উৎসবের দিনগুলোকে রঙিন করতে আসবে মানুষ, জমবে মেলা, এমন আশার রঙ লেগেছে চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানগুলোতেও। প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের অপার আধার চট্টগ্রামের বিনোদন স্পটগুলো সাজছে বর্ণিল সাজে। যেন নতুন পোশাক গায়ে জড়িয়ে ‘বটতলা-হাটখোলা’ আবাহন করছে দর্শনার্থীর !
প্রতিবছর চট্টগ্রামে যে কয়েকটি বিনোদন স্পটে বিপুল জনসমাগম ঘটে, তার মধ্যে ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, চিড়িয়াখানা, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, পারকি সমুদ্র সৈকত অন্যতম।
পাহাড়ঘেরা ৩৩৬ একরের ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে আরও আছে- প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের আঁকাবাঁকা লেক, ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ড, ফয়’সলেক রিসোর্ট, বেস ক্যাম্পসহ বেড়ানোর নানা অনুষঙ্গ। এর সবকটিই পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় আছে দর্শনার্থী সমাগমের। ঈদুল ফিতরের দিন থেকে পহেলা বৈশাখ পার করে অন্তত দশদিনে ৫০ হাজার দর্শনার্থী সমাগমের আশা করছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
পার্কের কর্মকর্তারা জানান, অ্যামিউজমেন্ট পার্কের রাইড শিশু-কিশোরদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এবার সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, ফেরিস হুইল, পাইরেট শিপ, কফিকাপ, রেড ড্রাইল্লাইড, ইয়োলো ড্রাই-স্লাইড, বাগ বইন্স- এসব রাইডের মধ্যে কয়েকটি একেবারে নতুন সংযোজন।
ফয়’স লেকের বোটস্টেশন থেকে ইঞ্জিন বোটে দশ মিনিটের পথ পেরোলেই দেখা মিলবে জলের রাজ্যে রোমাঞ্চকর ওয়াটার পার্ক সী-ওর্য়াল্ড। এখানে আছে কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত বা ওয়েভ পুল, ড্যান্সিং জোন। শিশুপুলে আছে মালি প্রাইড, ডোম স্লাইড, প্লে-জোনের মতো আকর্ষণীয় রাইড।
এরপর আছে লেকের ধারে পাহাড় চূড়ায় বেসক্যাম্প। এতে আছে- কায়াকিং, আর্চারি, ক্রাইম্বিং ওয়াল, উড কেবিন, ট্রি টপ অ্যাক্টিভিটি, অন গ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি, টিম বিল্ডিং গেম এবং হিউম্যান ফুসবলের সুবিধা। এখানকার চমকপ্রদ আকর্ষণ হচ্ছে ওয়াটার জীপ লাইন- শূন্যে ঝুলে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ভ্রমণের ব্যবস্থা। এছাড়াও আছে জায়েন্ট সুয়িং, স্মল সুয়িং, জায়ান্ট হ্যামক। পিকনিক স্পট অ্যাকুয়াটিক জোনও প্রস্তুত করা হয়েছে।
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক পরিচালনাকারী কনকর্ডের উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে পার্ক খুলে দেওয়া হবে। ঈদের দিন থেকে টানা দশদিন উৎসব চলবে। গেম-শো, মিউজিক শো এবং ম্যাজিক শোসহ বেশ কিছু ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডে অনুষ্ঠিত হবে ডিজে শো। বাংলো এবং রিসোর্টগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘এবার গরম বেশি, এজন্য সি ওয়ার্ল্ডে সমাগম বেশি হবে বলে ধারণা করছি। এবার ঈদুল ফিতর এবং পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে ছুটিও বেশি। আমাদের ধারণা, ঈদের পরদিন থেকে পরবর্তী তিনদিন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ হাজার করে ট্যুরিস্ট আসবে। প্রতিবছর অন্তত ১০ দিন লোকজন আসে। ৫০ হাজারের মতো দর্শনার্থী আসবে বলে আমাদের ধারণা।’
ফয়’সলেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের পাশেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। ঈদের দিনগুলোতে সেখানেও হাজার-হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এবার ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে ঘিরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে মনে করছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিড়িয়াখানার খাঁচাসহ সব স্থাপনা ধুয়েমুছে নতুনভাবে রঙ করা হয়েছে। থাকছে আলোকসজ্জাও। পুরো চিড়িয়াখানা সিসি ক্যামেরায় মোড়ানো হয়েছে। ১৩ জন অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তাদের মতে, এবার দর্শনার্থীদের জন্য মূল আকর্ষণ হবে তিন ব্যাঘ্র শাবক- অরণ্য, স্রোতস্বিনী ও রূপসী। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চিড়িয়াখানার বাঘ জো বাইডেন ও বাঘিনী জয়ার ঘর আলো করে আসে শাবক তিনটি। একমাস পর সেগুলো খাঁচায় উন্মুক্ত করা হয়।
এছাড়া চিড়িয়াখানার প্রাণীকূলে প্রথমবারের মতো যুক্ত হওয়া জলহস্ত্বীও এবার ঈদ বিনোদনে অন্যতম আকর্ষণ হবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার দর্শনার্থীর সমাগম অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি হবে বলে ধারণা করছি। ঈদের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচদিন পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হতে পারে। বিপুল দর্শনার্থীর চাপ সামলানোর সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বাঘের তিনটি শাবককে আমরা খাঁচায় উন্মুক্ত করেছি। জলহস্ত্বী আসার পর এটা প্রথম ঈদ। এবার দর্শনার্থীরা বাড়তি বিনোদন পাবেন।’
বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ৭২ প্রজাতির ছয়’শরও বেশি প্রাণি আছে, যার মধ্যে ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৮ প্রজাতির পাখি ও ৪ প্রজাতির সরীসৃপ। স্তন্যপায়ী প্রাণির মধ্যে আছে- রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভারতীয় সিংহ, এশীয় কালো ভালুক, আফ্রিকান জেব্রা, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, সাম্বার হরিণ, প্যারা হরিণ, মুখপোড়া হনুমান, উল্লুক, রেসাস বানর, উল্টো লেজি বানর, মেছো বিড়াল, বন বিড়াল, চিতা বিড়াল, গন্ধগোকুল (হিমালিয়ান), বাঘডাস, গয়াল, খরগোশ, সজারু, শিয়াল। পাখির মধ্যে তিতির, ময়ূর, রাজ ধনেশ, কাক ধনেশ, শকুন, মদনটাক, সাদা বক, নিশি বক, তিলাঘুঘু, ভুবন চিল, কোকিল, ময়না, খঞ্জনা পাখি, তার্কি মুরগি আছে।
এছাড়া মিনি এভিয়ারিতে ছয় প্রজাতির ৩৪২টি বিদেশি পাখি আছে। এগুলেঅ হল- লাভ বার্ড, লাফিং ডাভ, ফিজেন্ট কবুতর, রিং নেড প্যারোট, ককাটেল এবং ম্যাকাও। চিড়িয়াখানায় সরীসৃপের মধ্যে আছে- অজগর, মিঠাপানির কুমির ও কচ্ছপ।
উন্মুক্ত বিনোদন স্পটের মধ্যে পতেঙ্গা ও পারকি সমুদ্র সৈকত, মেরিড ড্রাইভ সড়কে জেলা প্রশাসনের ফ্লাওয়ার পার্ক, নগরীর পতেঙ্গায় বাটারফ্লাই পার্ক, কর্ণফুলী নদীর অভয়মিত্র ঘাট, নেভাল-টু, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা পার্ক, আগ্রাবাদে কর্ণফুলী শিশু পার্ক, হালিশহর ও সীতাকুণ্ডে গুলিয়াখালী সাগরতীর, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, ফটিকছড়ি চা বাগানেও প্রতিবছর লোকসমাগম হয়।
শাহ আমানত সেতুতেও বেড়াতে বের হওয়া প্রচুর মানুষের ভিড় জমে। এবার সেতুর বাকলিয়া প্রান্তের দক্ষিণে নদীতীরে বাঁধ দিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) যে সড়ক তৈরি করছে, সেটিও দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অনেকে সেখানেও ঘুরতে যেতে পারেন। এছাড়া নৌকায় চড়ে কর্ণফুলী ভ্রমণ তো আছেই!
এদিকে নগরীর ১৩টি দর্শনীয় স্থানে ঈদের দিন থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএমপি। এসব স্থান হল- কোতোয়ালী থানা এলাকায় নেভাল-টু, সিআরবি ও ডিসি হিল, বাকলিয়ায় শাহ আমানত সেতু, চান্দগাঁওয়ে স্বাধীনতা পার্ক, ডবলমুরিংয়ে আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক ও শিশুপার্ক, পাহাড়তলীতে সাগরতীরে নিঝুম পার্ক, আকবর শাহ থানা এলাকায় ফয়’সলেক কনকর্ড পার্ক, বন্দরে আনন্দবাজার বেড়িবাঁধ এবং পতেঙ্গায় সমুদ্র সৈকত, নেভাল এবং বাটারফ্লাই পার্ক।
সিএমপির এডিসি-অপারেশন মো. জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘দর্শনীয় স্থানগুলোর কয়েকটিতে উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়। শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের বিভিন্নস্থান থেকে লোকজন বেড়াতে আসেন। লোক সমাগমের অতীত রেকর্ড বিবেচনায় রেখে ৫ থেকে ১২ জন পর্যন্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে। এগুলো থানার নিয়মিত সদস্যের বাইরে অতিরিক্ত হিসেবে মোতায়েন থাকবে। এছাড়া টহল টিম, সাদা পোশাকের পুলিশ, গোয়েন্দা টিম তো থাকবেই।’
ছবি : শ্যামল নন্দী, স্টাফ ফটোকরেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ