জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু আনবেন না: সিএমপি কমিশনার
১০ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদ জামাতে যাবার সময় জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু না নেয়ার জন্য মুসল্লিদের অনুরোধ করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামে জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতের নিরাপত্তা প্রস্তুতি পরিদর্শনে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত হবে। প্রধান জামাতকে ঘিরে আমাদের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। ঈদগাহ হোক আর মসজিদ হোক, সার্বিকভাবে চট্টগ্রাম শহরে ৭৫০টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সবগুলো ঈদ জামাতের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর থাকবে। অনেক জায়গায় আমরা ফিজিক্যালি উপস্থিত থাকবো। অনেক জায়গায় হয়তো আমরা ফিজিক্যালি থাকবো না, তবে নানাভাবে সংযুক্ত থাকবো।’
জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে নিরাপত্তার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। গেটগুলোতে আর্চওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। যারা এখানে আসবেন, আর্চওয়ের মধ্য দিয়ে চেকিংয়ের মাধ্যমে আসবেন। আমরা অনুরোধ করবো, যারা ঈদ জামাতে আসবেন, তারা জায়নামাজ ছাড়া অন্যকিছু নিয়ে আসবেন না, যাতে কোনো বিপত্তির সৃষ্টি না হয় কিংবা আমাদের চেকিং কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা বা বিলম্ব সৃষ্টি না হয়। আমরা আশা করছি, মুসল্লিদের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আমাদের যে গৃহীত ব্যবস্থা সেটার মধ্য দিয়ে আমরা একটি সুন্দর ঈদের দিন উদযাপন করবো।’
উল্লেখ্য, নগর পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, এবার নগরীতে মসজিদ ও ঈদগাহ মিলিয়ে ৭৭১টি স্থানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে চান্দগাঁও থানা এলাকায় ১১২টি, খুলশীতে ৫০টি, বায়েজিদ বোস্তামিতে ৫০টি ও পাঁচলাইশে ২০টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
কোতোয়ালীতে ৭৩টি, বাকলিয়ায় ৩৪টি, চকবাজারে ২৩টি ও সদরঘাটে ৪৪টি, ডবলমুরিংয়ে ১৩টি, হালিশহরে ৭৩টি, পাহাড়তলীতে ৩০টি, আকবর শাহ থানা এলাকায় ৫৪টি স্থানে ঈদ জামাত হবে। এছাড়া ইপিজেড থানা এলাকায় ২৬টি, বন্দরে ৩৯টি, পতেঙ্গায় ৬০টি এবং কর্ণফুলী থানা এলাকায় ৭০টি স্থানে ঈদ জামাত হবে।
তবে পুলিশ নগরীর দুটি মূল স্থান যেখানে কয়েকটি জামাত মিলিয়ে লাখো মুসল্লীর সমাগম ঘটে, সেগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাধানে প্রধান জামাত জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দান ও আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-অপারেশন) মো. জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে তিনটি গেইট ও চারটি আর্চওয়ে থাকবে। ২০ জনের টিম ভাগ হয়ে সেখানে দায়িত্ব পালন করবে। থানার নিয়মিত মোবাইল টিমের পাশাপাশি একটি অতিরিক্ত থাকবে। এছাড়া পুরো মাঠ ঘিরে অতিরিক্ত ফোর্স দিয়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি তো থাকবেই। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদেও একই ব্যবস্থা থাকবে। দুটি বড় জামাতকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় একাধিক চেকপোস্ট বসানো হবে।’
থানাভিত্তিক ঈদ জামাতগুলোকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি নগর পুলিশের একাধিক মোবাইল টিম টহল দেবে বলে জাহাঙ্গীর জানান।
এদিকে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় জানিয়েছেন, ঈদ জামাতের পর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও পর্যান্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন বিকেল থেকে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র এবং পর্যটনের আকর্ষণ আছে এমন স্থানগুলোতে অনেক মানুষের ভিড় হবে। এসব স্থানে সিএমপির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশও বিভিন্ন জায়গায় তাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যে কোনো ধরনের প্রবলেম যদি কেউ ফেস করে, তাহলে নিকটস্থ পুলিশ কিংবা ট্রিপল নাইনে যেন ফোন করে আমাদের সাহায্য নেয়ার জন্য।’
বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তো সব জায়গায় ফিজিক্যালি উপস্থিত থাকতে পারবে না। পর্যটনের বিভিন্ন স্থাপনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের নিজস্ব চেকিং, নিজস্ব নিরাপত্তা এবং সার্বিকভাবে ট্রাফিক ডিসিপ্লিনের জন্য কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এসব জায়গায় যাতে গাড়ি নিয়ে মানুষ পৌঁছাতে পারে, সেই সুযোগ-সুবিধা তাদের সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে।’
উল্লেখ্য, নগরীর ১৩টি দর্শনীয় স্থানে ঈদের দিন থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএমপি। এসব স্থান হল- কোতোয়ালী থানা এলাকায় নেভাল-টু, সিআরবি ও ডিসি হিল, বাকলিয়ায় শাহ আমানত সেতু, চান্দগাঁওয়ে স্বাধীনতা পার্ক, ডবলমুরিংয়ে আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক ও শিশুপার্ক, পাহাড়তলীতে সাগরতীরে নিঝুম পার্ক, আকবর শাহ থানা এলাকায় ফয়’সলেক কনকর্ড পার্ক, বন্দরে আনন্দবাজার বেড়িবাঁধ এবং পতেঙ্গায় সমুদ্র সৈকত, নেভাল এবং বাটারফ্লাই পার্ক।
সিএমপির এডিসি-অপারেশন মো. জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘দর্শনীয় স্থানগুলোর কয়েকটিতে উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়। শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের বিভিন্নস্থান থেকে লোকজন বেড়াতে আসেন। লোক সমাগমের অতীত রেকর্ড বিবেচনায় রেখে ৫ থেকে ১২ জন পর্যন্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে। এগুলো থানার নিয়মিত সদস্যের বাইরে অতিরিক্ত হিসেবে মোতায়েন থাকবে। এছাড়া টহল টিম, সাদা পোশাকের পুলিশ, গোয়েন্দা টিম তো থাকবেই।’
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ