Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফাঁকা ঢাকায় ঈদের আমেজ, চাঁদ রাতে কেনাকাটায় ব্যস্ত নগরবাসী

রাজনীন ফারাজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৫৯

রাজধানীর মার্কেটগুলোতে চাঁদ রাতে তরুণীদের ভিড় বেশি দেখা গেছে গহনার দোকানগুলোতে। ছবি: হাবিবুর রহমান/ সারাবাংলা

ঢাকা: রাত পেরোলেই ঈদুল ফিতর। এর আগেই বলতে গেলে ফাঁকা হয়ে এসেছে রাজধানী ঢাকা। তারপরও যারা এখনো রাজধানীতে অবস্থান করছেন, তাদের জন্য ঈদের আমেজ ধরে রেখেছে রাজধানীর মার্কেটগুলো। চাঁদ রাতেও জমজমাট এসব মার্কেট ও শপিং মল।

বুধবার (১০ এপ্রিল) ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকেই সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকাতেও চারদিকে খুশির আমেজ। ইফতারের পর থেকেই শোনা যেতে থাকে বাজি ফোটানোর শব্দ। আর বিভিন্ন মসজিদ থেকে আসতে থাকে ঈদ জামাতের সময়সূচি। মোড়ে মোড়ে বেজে ওঠে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে/ এলো খুশির ঈদ।’ চলছে মোবাইল ফোন আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও দাওয়াত বিনিময়।

ঈদ উৎসবের জমজমাট আয়োজন চোখে পড়ছে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে। পল্টন, গুলিস্তান ও উত্তরার বিভিন্ন ফুটপাত থেকে শুরু করে নিউ মার্কেট, মৌচাক, তালতলা, বঙ্গবাজার ও ধানমন্ডি-গুলশানের বিভিন্ন শপিং মলে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সারতে বেরিয়েছেন অনেকে। অনেকে আবার চাঁদ রাতে ঘুরতে বেরিয়েছেন পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে।

নিউ মার্কেট ও এর আশপাশে গাউসিয়া, ইস্টার্ন মল্লিকা, চাঁদনি চকসহ প্রায় প্রতিটি মার্কেটেই নারী ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানালেন, ঈদ উপলক্ষে কেনা বা তৈরি করা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়নাগাটি ও অন্যান্য সাজগোজের জিনিস কেনার জন্যই এসেছেন তারা। অনেকে আবার ম্যাচিং স্যান্ডেল, হ্যান্ড ব্যাগ, ঘর সাজানোর উপকরণও কিনছেন। সেই সঙ্গে ফুটপাতের দোকানগুলোতে এখনো সমান তালে চলছে জামাকাপড় কেনাকাটা।

নিউ মার্কেট ও গাউসিয়া এলাকায় ব্যাগের দোকানগুলোও ক্রেতাদের উপস্থিতিতে ছিল সরগরম। ছবি: হাবিবুর রহমান/ সারাবাংলা

দোকানদাররা বলছেন, ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকেই মার্কেট জমে উঠলেও অনেকেই অপেক্ষায় থাকেন ঢাকা ফাঁকা হওয়ার। কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে বেতন-বোনাস পেয়ে কেনাকাটা করতে আসেন। এ কারণে প্রতিবারই চাঁদ রাত ক্রেতাদের উপস্থিতিতে থাকে জমজমাট। সারা রাত ধরে চলে কেনাকাটা।

গাউছিয়া মার্কেটে সারিবদ্ধ গহনার দোকানে দেখা গেল উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন বয়সী নারীরা ভিড় করে গহনা দেখছিলেন ও কিনছিলেন। কালাম নামের একজন দোকানি সারাবাংরাকে বলেন, ‘আজ সকাল থেকেই ভিড়। রোজার শুরু থেকে বিক্রি ভালো না হলেও রমজানের শেষ সপ্তাহে ভালো বিক্রি হচ্ছে।’ কী ধরনের গয়না কিনছেন তরুণীরা— জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন, ‘কয়েক বছর ধরে ঝুমকাই চলছে বেশি। এ ছাড়াও চোকার, ব্যান্ড, আংটি, বো ইত্যাদিরও বিক্রি বেশি।’

কী ধরনের গয়নার বেচাকেনা বেশি— সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, রঙ-বেরঙের পাথর বসানো জমকালো ডিজাইনের ঝুমকার পাশাপাশি আর্টিফিশিয়াল মুক্তার চোকার, মালা-কানের দুলের সেট, কুন্দনের সেট, পাথর বসানো মাথার ব্যান্ড, নানা রঙ ও আকারের সাটিন কাপড়ের তৈরি বো ক্লিপ, সাদা বা সোনালি পাথর বসানো টিয়ারা, পাথর বসানো হাতের ব্রেসলেট ইত্যাদির বিক্রিই বেশি।

ক্রেতা-বিক্রেতারা বললেন, কয়েক বছর ধরেই ঈদের মধ্যে হালকা নকশার তুলনায় পাথর, পুঁতি ও কুন্দনের কাজ করা জমকালো নকশার ঝুমকা বেশি জনপ্রিয় তরুণীদের মধ্যে। আবার নানা ধরনের জমকালো নকশার পাথর ও পুঁতি বসানো চুলের ক্লিপও চলছে বেশ। গাউছিয়া মার্কেটে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকার মধ্যে মিলছে পছন্দের গয়না।

চাঁদ রাতে ছেলেদের ভিড় বেশি দেখা গেছে পাঞ্জাবির দোকানে। ছবি: হাবিবুর রহমান/ সারাবাংলা

অনেকেই আবার চাঁদনি চকের গোল্ড প্লেটেড গহনার দোকানেও ভিড় জমিয়েছেন। এখানে রূপা বা অন্য ধাতবের ওপর সোনার প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা গহনা পাওয়া যায়। নকশা দিয়ে তৈরি করেও নেওয়া যায়। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত আগে থেকে অর্ডার করা গহনার ডেলিভারি যেমন নিতে এসেছিলেন অনেকে, তেমনি অনেকে আবার রেডিমেড গহনাও কিনতে এসেছিলেন।

লতা নামের এক গৃহিণী ঈদ উপলক্ষে রুপার ওপর গোল্ড প্লেটেড এক জোড়া হাতের বালা বানিয়েছেন। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে চাঁদ রাতে সেটাই নিতে এসেছিলেন লালবাগ থেকে। লতা বলেন, ‘সোনার দাম অনেক বেশি। ঈদে-চাঁদে তাই আর সোনার গয়না কিনতে পারি না। এখন গোল্ড প্লেটেডই ভরসা।’ জানালেন, ফেরার পথে মেহেদি আর ফুটপাত থেকে কিছু গহনা কিনে নেবেন।

ম্যাচিং অ্যাকসেসরিজ প্রসঙ্গে জুতার কথা না বললেই নয়। চাঁদ রাতে গাউছিয়া, নিউ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের পাশাপাশি ফুটপাত, ভ্যান ও ঝুড়িতে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের জুতা। তরুণীদের বেশি পছন্দ চকচকে হিল ও জুতি। জানা গেল, লেহেঙ্গা ও অন্যান্য ভারি নকশার পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে পাথর বা জরি বসানো হিল বেশি কিনছেন তরুণীরা। আবার অ্যামব্রয়ডারি করা বা চুমকি বসানো জুতি বা নাগ্রাই জুতাও কিনছেন নানা বয়সী মেয়েরা।

চাঁদ রাতের অন্যতম আকর্ষণ মেহেদি। বাজার থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মেহেদি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। আবার চাঁদ রাত উপলক্ষে বিভিন্ন শপিং মল ও ব্র‍্যান্ড শো-রুমেও চলছে বিশেষ অফারে মেহেদি উৎসব। কোথাও কেনাকাটার সঙ্গে মেহেদি ফ্রি, আবার কোথাও টাকার বিনিময়ে হাতে মেহেদি পরিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

চাঁদ রাতে নিউ মার্কেট এলাকা, ঈদের আগে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরগরম। ছবি: হাবিবুর রহমান/ সারাবাংলা

সেই সঙ্গে পার্লারগুলোও চাঁদ রাতে যথেষ্টই ভিড় দেখা গেল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। শেষ মুহূর্তের হেয়ার কাট, ভ্রু প্লাক, ফেসিয়াল, ওয়াক্সিং ও মেহেদি পরানোর মতো কাজগুলোতে অলিগলির সব পার্লারও জমজমাট। কয়েকটি পার্লারের কর্মীরা বললেন, মধ্যরাত পেরিয়েও খোলা থাকবে তাদের সেবা।

কেবল নারী নয়, পুরুষদের দোকানগুলোতেও চাঁদ রাতে যথেষ্টই ভিড়। এলিফ্যান্ট রোডের পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন বিক্রয়কর্মীরা। ওই এলাকায় জুতা কিনতেও ক্রেতারা ছুটছিলেন দোকান থেকে দোকানে। সঙ্গে বেল্টের দোকানগুলোতেও চাঁদ রাতের বেচাকেনা যথেষ্টই ছিল জমজমাট। পাশাপাশি ছেলেদের সেলুনেও চুল কাটা, শেভ করা বা ফেসিয়ালের জন্য দেখা গেছে দীর্ঘ সিরিয়াল।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

ঈদ ঈদ উৎসব ঈদুল ফিতর ঈদের কেনাকাটা চাঁদ রাত চাঁদ রাতের কেনাকাটা টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর