রাউজান শিল্প নগরী: ৩ বছরের প্রকল্প ৮ বছরেও শেষ না হওয়া নিয়ে সংশয়
১৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৯
ঢাকা: চট্টগ্রামের রাউজানে বিসিক শিল্প নগরী স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই তিন বছর পেরিয়েছে অনেক আগেই। দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে সেই মেয়াদ করা হয়েছিল আট বছর, যা শেষ হতে সময় বাকি আর মাত্র আড়াই মাস। কিন্তু এখনো প্রকল্পের কাজ বাকি পাঁচ ভাগের এক ভাগ। ফলে তিন বছরের প্রকল্পটির কাজ আট বছরেও শেষ হবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দেখা গেছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়েছিল বিসিক শিল্প নগরী রাউজান প্রকল্পটি। পরে প্রথম সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ৯৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দেন। কিন্তু প্রকল্পের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২০ সালের ৪ মার্চ শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক আদেশ জারি করে প্রকল্পের মেয়াদ চলতি ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
দফায় দফায় বাড়ানো সেই মেয়াদ শেষে যখন আর মাত্র আড়াই মাস বাকি, তখন রাউজানের সেই শিল্প নগরী স্থাপন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি আরও কম— ৭৯ শতাংশ। সে হিসাবে প্রকল্পের ২১ শতাংশ কাজ এখনো বাকি রয়েছে। বর্ধিত মেয়াদ আগামী জুনের মধ্যে এই ২১ শতাংশ কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্পের আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয় প্রস্তাবের ওপর বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (ডিপিইসি) সভা হয়েছে। সেখানে প্রকল্পের ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি নির্ধারিত সময়েই প্রকল্প শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই ডলার সংকটের কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দরপত্র দিয়েও ঠিকাদার পাওয়া যায়নি। এ কারণেই অতিরিক্ত সময় যাচ্ছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানাগুলোকে অবকাঠামোসমৃদ্ধ সুবিধাজনক পরিবেশবান্ধব একটি জায়গায় নিয়ে আসার জন্যই বিসিক শিল্প নগরী স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নতি, জিডিপিতে অবদান বাড়ানো ছিল অন্যতম উদ্দেশ্যে। এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই ৩৫ একর জায়গাজুড়ে রাউজানে শিল্প নগরী স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ১৮৪টি শিল্প প্লট হবে এই শিল্প নগরীতে। কর্মসংস্থান হবে সাড়ে সাত হাজার মানুষের।
সম্প্রতি প্রকল্পটি নিয়ে যে ডিপিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে সভাপতিত্ব করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা। ওই সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর ফলে রাজস্ব খাতের জনবলের বেতন-ভাতাসহ ভ্রমণ ও যাতায়াত, প্রকাশনা ও বিজ্ঞাপন, আইইই ও ইআইএ, পরিবেশ ছাড়পত্র, কমিটি মিটিং ইত্যাদি খাতে ৭১ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন। তবে এই টাকা প্রকল্পের অন্যান্য অঙ্গ থেকে সমন্বয় করা হবে বলে জানান তিনি।
সভার সভাপতি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের প্রস্তাবে আলাদা আলাদা খাতওয়ারি বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও বিবিধ খাতে অতিরিক্ত চার লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনুমোদনের সুযোগ নেই। আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের আগে খাতওয়ারি যাচাইয়ের জন্য পরিকল্পনা অনুবিভাগে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন তিনি।
সভায় পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রতিনিধিও বিবিধ খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, বিবিধ খাতে প্রস্তাবিত চার লাখ টাকা ছাড়া বাকি ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় করা যেতে পারে। তবে আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের প্রস্তাব অনুমোদিত ডিপিপির ব্যয়ের চেয়ে যেন কোনোভাবেই বেশি না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
কাজ আরও ২১ শতাংশ বাকি থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে নারাজ শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা। প্রকল্পের অগ্রগতিতে তিনি অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন।
সচিব বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরএডিপিতে (সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) সমাপ্ত করা প্রকল্পের তালিকায় এই প্রকল্পটি রয়েছে। তাই এর মেয়াদ বাড়ানোর আর কোনো সুযোগ নেই। নির্ধারিত মেয়াদ চলতি বছরের জুনের মধ্যে অবশ্যই এর কাজ শেষ করতে হবে।
কাজের গতি বাড়ানো এবং অসমাপ্ত পূর্ত কাজগুলো শেষ করার জন্য চলতি এপ্রিল মাসেরই অ্যাকচুয়াল টাইম বাউন্ড অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে মন্ত্রণালয় পাঠানোর নির্দেশনা দেন শিল্প সচিব।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর