Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একনজরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:২৫

ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমাদের উদ্বেগের কারণ। ইরানের অস্ত্রাগারের গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। সিরিয়া দূতাবাসে ইসরাইলের বিমান হামলার পর প্রতিশোধমূলক আক্রমণের হুমকি দিয়েছে ইরান। আর এতে ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হতে যাচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের মতে, ইরান এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত দেশ।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের বিবরণ

* আধা-সরকারি ইরানি নিউজ আউটলেট আইএসএনএ চলতি সপ্তাহে একটি গ্রাফিক প্রকাশ করেছে। এতে ৯টি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র দেখানো হয়েছে যা ইসরাইলের ভূখণ্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম। এর মধ্যে রয়েছে ‘সেজিল’ ক্ষেপণাস্ত্র—যা প্রতি ঘণ্টায় ১৭ হাজার কিলোমিটারের বেশি বেগে উড়তে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা হলো ২৫০০ কিলোমিটার। এছাড়া রয়েছে ‘খেইবার’ ক্ষেপণাস্ত্র— যার পাল্লা ২০০০ কিলোমিটার। ‘হজ কাসেম’ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১৪০০ কিলোমিটার। হজ কাসেম ক্ষেপণাস্ত্রটির নামকরণ করা হয়েছে কুদুস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির নামে।

* বিশ্বে ড্রোনের অন্যতম উৎপাদক দেশ ইরান। গত আগস্টে ইরান বলেছিল, তারা ‘মোহাজের-১০’ নামে একটি উন্নত ড্রোন তৈরি করেছে যার অপারেশনাল রেঞ্জ ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ড্রোনটি ৩০০ কেজি পর্যন্ত ভারবহন করে ২৪ ঘণ্টা উড়তে পারে।

* ইরান বলেছে, তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং অন্যান্য সম্ভাব্য আঞ্চলিক লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ এবং প্রতিশোধমূলক শক্তি। তবে ইরান কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

* গত জুনে, প্রথমবারের মতো অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করে ইরান। সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরনা এ খবর প্রকাশ করেছে। হাইপারসনিক মিসাইল শব্দের গতির চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ দ্রুত উড়তে সক্ষম। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র জটিল গতিপথে উড়তে পারে, ফলে এসব ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে ধ্বংস করা কঠিন।

* মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও ইরান বলে আসছে, তার প্রতিরক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আরও উন্নত ও বিস্তৃত করবে।

* ওয়াশিংটনভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি মূলত উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার নকশার উপর ভিত্তি করে তৈরি। এছাড়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে সহায়তা করেছে চীনও।

* আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ইরানের স্বল্প-পাল্লার এবং মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে শাহাব-১, যার আনুমানিক পাল্লা ৩০০ কিলোমিটার। জোলফাঘরয়ের পাল্লা ৭০০ কিলোমিটার। শাহাব-৩ এর পাল্লা ৮০০ থেকে ১ হাজার কিলোমিটার। এমাদ-১ এর পাল্লা ২০০০ কিলোমিটার।

* ইরানের একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হলো বায়ুচালিত কেএইচ-৫৫। পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এছাড়া ইরানের আছে উন্নত জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র খালিদ ফরজ—যার পাল্লা ৩০০ কিলোমিটার। খালিদ ফরজ ক্ষেপণাস্ত্রটি ১ হাজার কেজি পর্যন্ত গোলাবারুদ বহনে সক্ষম।

আঞ্চলিক হামলার অভিজ্ঞতা

* ইরানের বিপ্লবী গার্ড গত জানুয়ারিতে ইরাকের আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে ইসরাইলের গুপ্তচর সদর দফতর আক্রমণ করেছে বলে দাবি করে। ওই আক্রমণে তারা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল। এছাড়া তারা সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের উপরও হামলা চালিয়েছে। সম্প্রতি প্রতিবেশি পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে জঙ্গি গোষ্ঠীর দুটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিজ্ঞতা আছে ইরানের।

* সৌদি আরব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা বিশ্বাস করে, ২০১৯ সালে সৌদি আরবের মূল্যবান তেল স্থাপনায় ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পেছনে ছিল ইরান। তেহরান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

* ২০২০ সালে ইরানের কুদুস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানির উপর মার্কিন ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবে আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিসহ ইরাকের কয়েক জায়গায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। এতে মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

ইয়েমেনে হুথিদের সমর্থন

* ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করার অভিযোগ আছে ইরানের বিরুদ্ধে। এই হুথি বিদ্রোহীরা গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে লোহিত সাগরে ইসরাইলগামী জাহাজে লাগাতার হামলা চালাচ্ছে। হুথিদের দাবি, তারা ফিলিস্তিনের সমর্থনে লোহিত সাগরে এমন হামলা চালাচ্ছে। যদিও তেহরান হুথিদের অস্ত্র দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে।

* ২০২২ সালে হুথিরা বলেছিল, তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও করা হয়েছিল। তবে ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছিল।

হিজবুল্লাহর প্রতি সমর্থন

* লেবাননের ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গ্রুপের নেতা বলেছেন, লেবাননে হাজার হাজার রকেটকে নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্রে রূপান্তর করা এবং ড্রোন তৈরির সক্ষমতা তাদের রয়েছে।

* গত বছর হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ বলেছিলেন, দলটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় স্ট্যান্ডার্ড রকেটকে নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্রে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছে।

সিরিয়ার প্রতি সমর্থন

* ইসরাইলি ও পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সমর্থন দিতে ইরান দেশীয় নির্ভুল গাইডেড মিসাইল সিরিয়ায় স্থানান্তর করেছে।

* এছাড়া ইরান তার কিছু উৎপাদন ক্ষমতা সিরিয়ার ভূগর্ভস্থ কম্পাউন্ডেও স্থানান্তরিত করেছে। সিরিয়ায় আসাদের সামরিক বাহিনী এবং অন্যান্য তেহরানপন্থী বাহিনী তাদের নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা শিখেছে।

সারাবাংলা/আইই

ইরান ইসরাইল টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর