‘মুক্তভাবে বৈশাখ উদযাপনের অপেক্ষায় আছি’
১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২৮
ঢাকা: রাত পেরুলেই পয়লা বৈশাখ। বরাবরের মতো এবারও রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান ঘিরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। একদিকে যখন মহড়ায় ব্যস্ত শিল্পীরা, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত নিরাপত্তা জোরদারে। এমনই পরিস্থিতে স্বাভাবিক পরিবেশে বর্ষবরণ উদযাপনের আকাঙ্ক্ষার কথা জানালেন ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) রমনা বটমূলে মহড়া চলাকালে প্রখ্যাত এই নজরুল সংগীত শিল্পী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিরাপত্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠান যেন ভালোভাবে হয়ে যায় তারা সেটা চান। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, এতটা না হলেই নয়। আমরা সেদিনের অপেক্ষায় আছি, যেদিন মুক্ত আকাশের নিচে একেবারে মুক্তভাবে অনুষ্ঠান করতে পারব। আমরা চাই দেশের সার্বিক সামাজিক পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, যেন আমাদের এত ভয় নিয়ে নববর্ষ উদযাপন করতে না হয়। সেদিনের অপেক্ষায় আছি, যেদিন এমন ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা যেন করতে না হয়।’
ছায়ানটের বৈশাখ উদযাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে গানে গানে নববর্ষকে বরণ করি এটি একদমই ইউনিক একটি বিষয়। আমার মনে হয় পৃথিবীতে খুব কম দেশ আছে যারা এভাবে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেয়। এখানে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মনের আনন্দে আসি। ধর্মীয় পরিচয় ভুলে গিয়ে বাঙালি পরিচয়ে এখানে আমরা আসি। বাঙালির যে নিজ সংস্কৃতি, সেটি তুলে ধরাই আমাদের উদ্দেশ্য।’
‘এছাড়া আমরা লক্ষ্য করছি, দিনে দিনে আমাদের সামাজিক পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। আমাদের চলন-বলন, পোশাক-আশাকে যে পরিবর্তন ঘটে চলেছে, দেখে মনে হয় আমরা একটি বিপর্যয়ের মুখে। সেই থেকে আমাদের উদ্ধার করতে হবে। ছায়ানটের এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদেশের যত বাঙালি আছে, প্রত্যেকের উচিত এই অনুষ্ঠান ঘিরে নিজ পরিচয়টাকে ভালোভাবে জেনে নেওয়া, যাতে করে বাংলাদেশের বাঙালিরা কীভাবে চলব তা বুঝে নেওয়া যায়। পঞ্চাশ বছর হয়ে গেল আমাদের এই আয়োজন। সেই ৬৭ সাল থেকে আমরা এটি আয়োজন করছি। এত বছর পর এসে এই অনুষ্ঠান কীভাবে আরও বড় করা যায় সেটি ভাবার কথা’- বলেন খায়রুল আনাম শাকিল।
তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করি সবকিছু সরে যাবে। স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। এজন্য প্রয়োজন নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলন। পাকিস্তান আমলে আমরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই আয়োজন করেছিলাম। কারণ তখন মনে করেছিলাম আমাদের সংস্কৃতির উপর আঘাত আসতে যাচ্ছে। সেটা যেন আবার নতুন করে না আসে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। মুসলমানের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির কী সংঘর্ষ তা আমাদের কাছে স্পষ্ট না। প্রতিবছর পয়লা বৈশাখ আসলেই এর বিরুদ্ধে যেসব প্রচারণা হয়, তা নিয়ে সরকারকে আরও সতর্ক হতে হবে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে এই প্রচারণা বন্ধ করা উচিত।’
সন্ধ্যার মধ্যে উদযাপন শেষ করার বাধ্যবাধকতা বিষয়ে খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিতে পারি- এই ভাবনা থেকে তারা সন্ধ্যার মধ্যে শেষ করতে বলেন। কিন্তু আমরা যেন সারাদিন ও সারারাত আনন্দ করতে পারি সেটি নিশ্চিত করা উচিত। একদিকে দেখতে গেলে, নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি এর বিপক্ষের লোকদের আরও উৎসাহিত করে। নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেটি এমনভাবে করতে হবে যেন অনুষ্ঠানের রূপটা নষ্ট না হয়।’
সারাবাংলা/আরএফ/এনএস