Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সম্পন্ন প্রস্তুতি, অপেক্ষা বর্ষবরণের

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৫৮

ঢাকা: আগামীকাল পয়লা বৈশাখ। শেষ হয়েছে উদযাপনের সব প্রস্তুতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আয়োজনে মঙ্গল শোভযাত্রা, ছায়ানটের আয়োজনে রমনা বটমূলের সংগীত আয়োজনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

বরাবরের মতোই রমনার বটমূল থেকে গান, কবিতায় বরণ করা হবে বাংলা নতুন বছর ১৪৩১।

এর আগে, শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে রমনার বটমূলে অনুশীলন করেন সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র ছায়ানটের শিল্পীরা। ১৭০ জন শিল্পী মঞ্চে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অনুশীলন করেন। মূলত শব্দ ব্যবস্থাপনা, কারিগরি ব্যবস্থা এবং মঞ্চের সঙ্গে শিল্পীদের অভ্যস্ত করাই ছিল আজকের এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য। তৈরি করা হয়েছে একসঙ্গে সব শিল্পীর বসার মতো করে মঞ্চ। বসানো হয়েছে পাটাতন। বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নির্দিষ্ট সীমানা।

বর্ষবরণের জন্য রমনা বটমূলে মহড়া করছেন ছায়ানটের শিল্পীরা, ছবি: সারাবাংলা

রোববার (১৪ এপ্রিল) ভোরে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ৩০টি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাবেন ছায়ানটের শিল্পীরা। ভোরের আলো ফুটতেই আহীর ভৈরব রাগে বাঁশির সুরে নতুন বছর আবাহনের সূচনা হবে। পুরো অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে।

শনিবার ছায়ানটের মহড়ার সঙ্গে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও নিরাপত্তা মহড়াও। ২০০১ সালে রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। সেই তৎপরতা ছিল আজকের মহড়াতেও। বোমা বিস্ফোরণের শব্দ তৈরি করে মহড়া দেয় র‍্যাব ও পুলিশ। এসময় ছিল র‍্যাবের প্রশিক্ষিত কুকুরও।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া নিরাপত্তা বলবৎ রাখতে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ছায়ানটের পক্ষ থেকে যাদের প্রবেশের বিশেষ কার্ড দেওয়া হয়েছে, তারাই শুধু সীমানার ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। অন্য সবাই বর্ষবরণের এ আয়োজন উপভোগ করতে পারবেন নিরাপত্তাবেষ্টনীর বাইরে বসে।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে রমনা বটমূলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মহড়া শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব) জানায় হামলার কোনো হুমকি নাই। তবে দেশজুড়ে সতর্ক অবস্থানে আছে তারা।


বর্ষবরণের আয়োজনে সুনির্দিষ্ট কোনো হামলার শঙ্কা নেই জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তবু অতীতের সবকিছু মাথায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। সন্ধ্যার আগেই সব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে আর বিকেল ৫টার পর কেউ রমনা পার্কে প্রবেশ করতে পারবেন না।’

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতিসত্ত্বার অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ। এ কারণে বার বার এ আয়োজনে আঘাত হানা হয়েছে, জঙ্গি হামলা হয়েছে। তাই সবকিছু মাথায় রেখেই আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো হামলার শঙ্কা নেই।’

একই আয়োজনে র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যেন সব উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারেন সেজন্য র‍্যাবসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে সর্বদা সজাগ রয়েছে।’

নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর টিএসসি, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাতিরঝিল, রমনা বটমূল, পূর্বাচলের ৩০০ ফিটসহ যেসব এলাকায় মানুষের সমাগম হবে সেখানে পেট্রোলসহ সুইপিং করা হবে। এসব এলাকায় আমাদের গোয়েন্দা টিম সার্বিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। সারাদেশব্যপী আমাদের রিজার্ভ টিম, কন্ট্রোল রুম স্থাপন, সিসি ক্যামেরা মনিটরিং থাকবে বলেও জানান র‍্যাব মহাপরিচালক।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো হামলা মোকাবিলায় আমাদের স্পেশাল কমান্ডো টিম প্রস্তুত থাকবে। জঙ্গি হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবু আমরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগছি না। গোয়েন্দা তথ্য ও সাইবার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে জঙ্গিদের যেকোনো ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে র‍্যাব সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। ভার্চুয়াল জগতে যেকোনো ধরণের গুজব বা উস্কানিমূলক বা মিথ্যে তথ্য ছড়িয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য র‍্যাব সাইবার জগতে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।’


এদিকে রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের পর ঢাকায় পয়লা বৈশাখের আরেক আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলার আয়োজনে এই বর্ণিল শোভাযাত্রায় অংশ নেন নানা রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নানা বয়সী মানুষ। এতে নানাবিধ পশু ও প্রাণির মোটিফ, মুখোশ নিয়ে অংশ নেন তারা।

আগামীকাল রোববার সকাল ৯ টা ১৫ মিনিটে চারুকলার সামনে থেকে যাত্রা শুরু করে ঢাকা ক্লাব ও শিশুপার্কের সামনে থেকে ঘুরে শেষ হবে এই মিছিল।

প্রস্তুতি প্রসঙ্গে চারুকলার ডিন অধ্যাপক নেসার হোসেন বলেন, ‘আমরা জনসমাগম আশা করছি। ভিড়ের জন্য অনেকে যারা আসেন না, এবার তারাও আসবেন বলে আশা করি।’


প্রস্তুতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজ মধ্যরাত পর্যন্ত শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলতে থাকবে। মুখোশ, মোটিফ তৈরি ও বিক্রি হবে।’

এছাড়া ডিসিদের প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে নিজ নিজ এলাকায় আয়োজনের। তাদের যেসব ছাত্ররা ঢাকার বাইরে তারা নিজ এলাকায় আয়োজনে অংশ নিতে পারবে, বলেন তিনি।

চারুকলার ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. ঐশিক অদ্রি জানান, তাদের তৈরি সরা, মুখোশ, পেইন্টিং এবং অন্যান্য ডেকোরেশন পিসের বিক্রি ভালো। এখানে সরা পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকায়। ডেকোরেশন পিস ১০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকায় এবং মুখোশ পাওয়া যাচ্ছে ১০০০ থেকে ৪০০০ টাকায়।

চারুকলা থেকে কেনার জন্য পেইন্টিং দেখছিলেন মামুনুর রহমান খান। সঙ্গে স্ত্রী ও পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে। বললেন, ‘প্রতিবছরই আসেন বাচ্চাকে দেশি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করানো ও উৎসবের অংশ নেওয়ার জন্য। যারা বাঙালি সংস্কৃতিকে দমন কর‍তে চায় তাদেরই এদেশে থাকার অধিকার নাই। আমরা চাই এসব উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে।’

ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নববর্ষ বরণের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউট।

নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ক্যাম্পাসে মুখোশ আর প্রতিকৃতিতে শেষ মুহূর্তের তুলির আঁচড় দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।


শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে দেখা যায়, চারুকলা ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের সামনের সড়কে ও পাহাড়ের প্রতিরোধ দেয়ালে কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে বিভিন্ন চিত্র আঁকছেন। সড়কেও আলপনা আঁকার প্রস্তুতি চলছে। শোভাযাত্রা জন্য ডামি ও মুখোশ তৈরি করছেন।

এদিকে, নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত রাজশাহীবাসী। এর আগে, গেল চার বছর করোনা ও রোজার কারণে সেভাবে পালন হয়নি বাঙালির এই প্রাণের উৎসব। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। তাই আয়োজনেও রয়েছে নানান বৈচিত্র্য। এদিন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের আয়োজনে হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। সকাল ৯টায় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে গিয়ে শেষ হবে। সকাল ১০টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে।

এছাড়াও, এদিন বিকেলে বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমিতে নাটক মঞ্চায়িত হবে।

তবে এবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আয়োজন থাকছে না। রাবির চারুকলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ঈদের ছুটির কারণে এবার কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না। বৈশাখের শেষ দিন অথবা জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে যার নাম দেওয়া হবে ‘কালবৈশাখী’ উৎসব।

বাংলা নতুন বছরকে বরণকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন, শিল্পকলা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট রংপুর জেলা ও রংপুর, সম্মিলিত লেখক সমাজ, রবীন্দ্র সম্মিলনসহ বিভিন্ন সরকারি ও সাহিত্য সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ইতোমধ্যেই প্রস্তুত ঐতিহ্যবাহী রংপুর জিলা স্কুল মাঠের বটতলা। মঙ্গল শোভাযাত্রা, গ্রামীণ মেলা, মিলন উৎসব-প্রায় সবকিছুর প্রস্তুতি চলছে মহাসমারোহে। প্রতিবারের মতো এবারও এ আয়োজনকে ঘিরে নানা ধরনের মাস্কট বানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে থাকবে ফানুস উৎসব, র‌্যালি, ঘুড়ি উৎসব, চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, বৈশাখী মেলা, খেলার আসর ইত্যাদি।


জেলা প্রশাসন রংপুরের উদ্যোগে সকাল ১০টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। শোভাযাত্রা শেষে জিলা স্কুলের মাঠের বটতলায় অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে কারাগার, হাসপাতাল, শিশু পরিবারের উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

বাংলা নববর্ষ সামনে রেখে অলওয়েদার সড়কের ১৪ কিলোমিটার জুড়ে আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের ‘অল ওয়েদার’ সড়কে

মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দীর্ঘ এ সড়কে আলপনা আঁকতে অংশ নিয়েছেন প্রায় ৬৫০ জন শিল্পী। ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনা গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পাবে বলে আশা স্থানীয়দের।

সারাবাংলা/আরএফ/এমও

১৪৩১ বর্ষবরণ

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর