নববর্ষে ঢাবিতে শ্লীলতাহানি, সাক্ষীর অভাবে ঝুলে আছে বিচার
১৪ এপ্রিল ২০২৪ ২০:০৪
ঢাকা: ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় বাংলা নববর্ষের উৎসবে বেশ কয়েকজন নারীকে শ্লীলতাহানি করা হয়। ওই ঘটনার পর শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলা সাক্ষীর অভাবে গত ৯ বছর ধরে ঝুলে আছে।
তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া অভিযোগপত্রে ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে নয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাক্ষী বাদ পড়ায় মামলাটি রায় থেকে তুলে ফের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়।
এদিকে, সাক্ষী হাজির করে দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ করার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক শওকত আলীর আদালতে বিচারাধীন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলায় নয়জনের সাক্ষী নেওয়ার পর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ ঘোষণা করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য গত ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। সেদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত ১৩ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এদিন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মামলার রায় ঘোষণা থেকে তুলে ফের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আবেদন করেন। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১৫ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণে নতুন দিন ধার্য করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় নববর্ষের উৎসবে বেশ কয়েকজন নারীকে শ্লীলতাহানি করা হয়। ওই ঘটনার পর সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর নারীদের লাঞ্ছনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আটজনকে শনাক্তের পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে পুলিশ। তাদের ধরিয়ে দিতে পুলিশ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে।
পরে ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। প্রতিবেদনে আসামি খুঁজে না পাওয়ার কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
পরের বছর ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক জনৈক ব্যবসায়ী কামালকে একমাত্র আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০১৭ সালের ১৯ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্য সাতজনকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের অভিযোগপত্রে নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। এ মামলায় ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকার ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলা নববর্ষের উৎসবে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তবে মামলাটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বাদ পড়ায় আমরা রায় ঘোষণা থেকে তুলে ফের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আবেদন করি। আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটির পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন।’
তিনি আরও জানান, অভিযোগ গঠনের প্রায় ছয় বছর পরও ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে নয়জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের প্রতি জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না।
তবে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটি যেহেতু রায়ের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল সেখান থেকে আবার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য এসেছে, ধরে নিতে হবে মামলাটি গুরুত্ব সহকারে বিচার কাজ চলছে। মামলাটি দ্রুত শেষ করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হলে সব সাক্ষীর আর দরকার হবে না। সে ক্ষেত্রে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে এ বছরের মধ্যে রায় দেওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম