রংপুরে তীব্র গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
১৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১১
রংপুর: রংপুরে তীব্র গরম ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। একে তো প্রখর রোদ, তার ওপর নেই দেখা বৃষ্টিরও। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ফলে তীব্র গরমে ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রোকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী। সবমিলিয়ে রংপুর নগরীসহ জেলার সর্বত্র গরমে অস্বস্তির মাত্রা বেড়েছে। এক পশলার বৃষ্টির অপেক্ষায় উত্তর জনপদের মানুষ। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আবহাওয়া অফিস দুঃসংবাদ দিয়ে বলছে, আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। সামনের দিনগুলোতে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টা পর্যন্ত রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) তা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গত কয়েকদিন তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ওঠা নামা করছে।
তিনি বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। গতবছরে রংপুর অঞ্চলে ১৯৮১ সালের পর চলতি মাসের ১ জুন আবহাওয়া অফিস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আগামী এক সপ্তাহ এমন তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি বিরাজ করবে। এরমধ্যে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিদ্যুৎ গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তীব্র দাবদাহ থাকে। আবার দিনে ও রাতে বেশির ভাগ সময় থাকে না বিদ্যুৎ। এতে জনজীবনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে শিল্প উৎপাদনে জড়িত মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের কারণে কাজ কর্মে সমস্যা হচ্ছে।
আব্দুর রহমান নামে একজন বেসরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘গরমের সঙ্গে লোডশেডিংয়ে বাসার শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দিনে তো বিদ্যুৎ থাকেই না রাতেও থাকে না।’
নগরীর চারতলা মোড়ের আহাদ ওয়ার্কশপের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ব্যবসার জন্য সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন, আর এখন বিদ্যুৎ থাকে না। এতে উৎপাদন করতে পারছি না। শ্রমিকদের ঠিকই বেতন দিতে হচ্ছে।’
কারখানার শ্রমিক আবু তালেব বলেন, ‘গরমে খুবই কষ্ট হচ্ছে আমাদের। এদিকে বিদ্যুৎ না থাকলে কাজ করতে পারি না। এভাবে চললে তো মালিকপক্ষ ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। তখন কাজ হারাতে হবে।’
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভ্যাপসা গরমে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন কর্মজীবী মানুষজন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তাপদাহ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে ঠান্ডা পানীয়র। চলতি পথে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে লেবু ও ফলের শরবত খেয়ে শরীর জুড়িয়ে নিচ্ছেন অনেকে। চাহিদা বেড়েছে ডাবের পানির।
নগরির পার্কের মোড় এলাকার রিকশা চালক আহমদ আলী বলেন, ‘ভ্যাপসা গরমের কারণে রিকশা চালানো অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। এত গরম যে, বসার সিট পর্যন্ত গরম হয়ে যায়। রোদের কারণে রাস্তায় টেকাই যাচ্ছে না।’
নগরীর লালবাগ এলাকার দিনমজুর মাসুদুল বলেন, ‘কড়া রোদের মধ্যে কাজ করতে পারছি না। তাই কাজের ফাঁকে গাছের নিচে আশ্রয় নিচ্ছি। আমরা তো গরিব, কাজ না করলে পুরো পরিবার না খেয়ে থাকবে।’
এদিকে প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে নগরীর সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কম। বড় বড় শপিং মলগুলো বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে। তবে এ গরমে স্বল্প আয়ের মানুষ বিশেষ করে ক্ষেতমজুর ও শ্রমিকরা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
এদিকে তাপদাহ ও গরমে রংপুরের বাসিন্দারা ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা গরমে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত দু’দিন অন্তত ২০ জন রোগী হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আব্দুল আহাদ বলেন, গরমে অনেকেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এ সময় সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। বেশি করে পানি পান, ঠাণ্ডা জাতীয় পানীয় বিশেষ করে লেবুর শরবত, ডাবের পানি বেশি করে পান করতে হবে।
অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াজেদ আলী বলেন, বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আরও সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে। দুপুরের পর কোনো অবস্থাতেই যেন বাইরে তাদের না থাকতে হয়, সেভাবেই শিক্ষকদের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সারাবাংলা/এনএস