সিজারিয়ান প্রসব বেড়ে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখার আহ্বান
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০১:১৬
ঢাকা: স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দেশে সিজারিয়ান প্রসবের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ কী, তা খতিয়ে দেখা এবং সিজারিয়ান প্রসবের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানায়। রাজধানীর মিটফোর্ডের হাসপাতালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করতে চিকিৎসকদের চাপ প্রয়োগ এবং অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) ৩১তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেশে উদ্বেগজনক হারে সিজারিয়ান প্রসব বেড়ে যাওয়ার পরিসংখ্যান নজরে এলে এমন আহ্বান জানায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৩ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিক মোহসিন কবিরের ‘গর্ভবতী মাকে মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে বের করে দিলেন গাইনি চিকিৎসক’ শিরোনামে লেখাটি ‘৭১ টিভি’র মাধ্যমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়।
ওই সংবাদের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীর শ্যামপুর থেকে এক গর্ভবতী নারী মিটফোর্ড হাসপাতালে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সবকিছু ঠিক আছে মর্মে স্বাস্থ্যকর্মী জানান। দায়িত্বরত চিকিৎসক তার আর্থিক অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করেন এবং সিজার করতেই হবে বলে জানান। কিন্তু গর্ভবর্তী নারী পূর্বে দুটি সন্তান স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে উল্লেখ করেন এবং সিজার করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
এতে চিকিৎসক ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর ওপর নানা ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করেন। চিকিৎসক আপত্তিকর মন্তব্যসহ হয়রানিমূলক কথা বলেন মর্মে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। পরে মুগদা নবস্বাস্থ্য নামক একটি সরকারি হাসপাতালে ওই নারীর স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়।
অন্যদিকে গত বছরের ১০ জুন দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনে ‘শিশু জন্মে অস্ত্রোপচার যেন সুনামির মতো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয়, পেশাজীবী চিকিৎসকদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) ৩১তম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের একটি অধিবেশনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেছেন, দেশে শিশু জন্মে অস্ত্রোপচার যেন সুনামির মতো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অস্ত্রোপচার বাড়ছে। দুটি শিশু জন্মের একটি হচ্ছে অস্ত্রোপচারে। এতে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্য ব্যয়।
মানবাধিকার কমিশন বলছে, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দেশে সিজারিয়ান প্রসবের হার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে মর্মে পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। প্রয়োজন ছাড়া শিশু জম্মে অস্ত্রোপচার করা মা ও নবজাতকের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে স্বাস্থ্য খাতে প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমাণে অর্থ ভর্তুকি দিতে হয়, সেখানে মিটফোর্ডের মতো একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে চিকিৎসকের সিজার করতে চাপ প্রয়োগ করার বিষয়টি কমিশনের কাছে বোধগম্য নয়। এ ধরনের সিজারিয়ান প্রসবের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ কী, তা খতিয়ে দেখা এবং সিজারিয়ান প্রসবের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এ অবস্থায় মিটফোর্ড হাসপাতালের বিরুদ্ধে উল্লিখিত অভিযোগ তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে অবহিত করতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের পরিচালককে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রসবে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার বা সি-সেকশন বন্ধ, এ লক্ষ্যে নারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং সিজারিয়ান প্রসবের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য সচিবকে বলা হয়েছে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর