পোনা উৎপাদনেই অনাগ্রহ, রোগমুক্ত চিংড়ি চাষের প্রসার নেই
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২৪
ঢাকা: দেশে রোগবালাইমুক্ত চিংড়ির পোনা (এসপিএফ) উৎপাদন ও চাষ সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা চলছে প্রায় এক দশক ধরে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে এসপিএফ হ্যাচারি ও নার্সারি তৈরির কাজও চলমান। প্রকল্পের আওতায় ক্লাস্টার পদ্ধতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকার চাষিদের ঘেরে চলছে এসপিএফ চিংড়ির চাষ। তবে যে হ্যাচারিগুলোকে এসপিএফ হ্যাচারিতে পরিণত করা হয়েছে, তারাই এখন এসপিএফ চিংড়ির পোনা উৎপাদনে উৎসাহ দেখাচ্ছে না। ফলে চাষিরাও এখন এসফিএফ পোনা পাচ্ছেন না। দেশে এসপিএফ চিংড়ি চাষেরও প্রসার ঘটছে না।
চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে মা চিংড়িকে বলা হয় ‘ব্রুডস’। মা চিংড়ি ডিম ছাড়ার পর সেই ডিম ফুটলে তাকে বলা হয় ‘নপ্লি’। ২২ থেকে ২৪ দিন পর ওই ‘নপ্লি’ থেকেই চিংড়ির পোনা হয়। পিএল হচ্ছে পোস্ট লার্ভা, যা চাষিদের ঘেরে ছাড়া হয়। এগুলোর মধ্যে ব্রুড ম্যানেজম্যান্ট সেন্টার (বিএমসি) থেকে সরবরাহ করা হয় ব্রুডস ও নপ্লি। পিএল সরবরাহ করা হয় হ্যাচারি থেকে। নার্সিং পয়েন্ট পিএল নার্সিং করে কৃষকদের কাছে সরবরাহ করে।
দেশে চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা তথা এসপিএফ চাষ প্রসারের অংশ হিসেবে সরকারি সহায়তায় উদ্যোক্তাদের সাধারণ হ্যাচারিকে স্পেসিফিক প্যাথোজেন ফ্রি (এসপিএফ) হ্যাচারিতে উন্নীত করা হচ্ছে, নার্সারি ও নার্সারি পয়েন্টগুলোকেও এসপিএফে উন্নীত করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে তিনটি বিএমসি, পাঁচটি হ্যাচারি এবং আটটি নার্সারি ও নার্সারি পয়েন্টকে এসপিএফ হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় চলমান এ প্রকল্পের অধীনে যেসব বিএমসি, হ্যাচারি ও নার্সারিকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে তারাই এখন এসপিএফ চিংড়ির পোনা উৎপাদনে তেমন আগ্রহী নয়। সব মিলিয়ে ১৬টি বিএমসি, হ্যাচারি, নার্সারি ও নার্সিং পয়েন্টের মধ্যে এ বছর এখনও এসপিএফের কার্যক্রমই শুরু করেনি ১২টি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠাগুলো বলছে, এ বছর তারা এখনো এসপিএফের কার্যক্রম শুরু করেনি। কেউ কেউ বলছে, তারা ব্রুডস ও নপ্লি পায়নি। হ্যাচারি ও নার্সিং পয়েন্টগুলো এখনো নপ্লি ও পিএল সরবরাহ শুরু করেনি। কেউ কেউ জানিয়েছেন, সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ হলে এসপিএফ চিংড়ির পোনা উৎপাদন শুরু হবে।
যা বলছে ৩ বিএমসির মালিকপক্ষ
বর্তমানে দেশের মাত্র তিনটি হ্যাচারিতে নির্দিষ্ট রোগবালাইমুক্ত ব্রুড চিংড়ি পোনা উৎপাদন হচ্ছে। সেগুলো হলো কক্সবাজারের ফিশ ট্যাক হ্যাচারি, এমকেএ হ্যাচারি ও গোল্ডেন অ্যাকুয়া শ্রিম্প হ্যাচারি লিমিটেড। ২০১৫ সাল থেকে দেশে রোগমুক্ত পোনা উৎপাদনের যাত্রা শুরু। বেসরকারি উদ্যোগে এসব হ্যাচারি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় পরিচালিত মৎস্য অধিদফতরের প্রকল্পের অধীনে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা উৎপাদনে এসব হ্যাচারিসহ আরও কয়েকটি হ্যাচারি ও নার্সারিকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে ফিশট্যাক হ্যাচারির মালিক আতাউল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো ব্রুডস করেছি। এটিই আমাদের মূল কাজ।’ তবে কোন কোন হ্যাচারিতে নপ্লি বা পিএল সরবরাহ করা হয়েছে, সে তথ্য জানাতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে গোল্ডেন অ্যাকুয়া শ্রিম্প হ্যাচারি লিমিটেডের কনসালট্যান্ট মোদাব্বির আহমেদ খন্দকার (পলাশ) সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বিএমসির কাজ চলছে। এক বছর হয়েছে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। আমরা এসপিএফ ব্রুডস ও পিএল তৈরি করব। দেশের বাইরে থেকে পিপিএল নিয়ে এসেছি। এটা থেকে ব্রুডস তৈরি করব।’
তিনি আরও বলেন, আমরা ব্রুডস তৈরি করছি। আমরা যে পিপিএল নিয়ে এসেছিলাম সেগুলো অনেকটা ব্রুডের সাইজ হয়েছে। এখন পোস্ট লার্ভা তৈরি করতে পারলে নপ্লি সাপ্লাই দিতে শুরু করব। পোনাও তৈরি করব।
এক প্রশ্নের উত্তরে মোদাব্বির বলেন, দেশে এসপিএফ নিয়ে মানুষের কোনো ধারণা নেই। এটা অনেকটা ফার্মের মুরগির মতো। যত দিন সরকারিভাবে সঠিক মনিটরিং করা হবে না, তত দিন এসপিএফের প্রসার ঘটবে না। এসপিএফের জন্য যেরকম বায়োসেফটি প্রয়োজন, তা দেওয়ার মতো সক্ষমতা এখনো দেশের গড়ে ওঠেনি। এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সক্ষমতাও আমাদের শূন্য। এসপিএফ চিংড়ি চাষ করতে হলে পরিপূর্ণভাবে বায়োসেফটি নিশ্চিত করে কারিগরিভাবে নিখুঁত হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এগুলো আমরা পারিনি।
জানতে চাইলে এমকেএ হ্যাচারির মালিক মঈন উদ্দিন আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমকেএ ২০১০ সালে এফপিএফের যাত্রা শুরু করে। তখন আমরা অস্ট্রেলিয়ার সিসরো ও ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ওয়েলসের সাহায্যে বঙ্গোপাসগরের মা ও বাবা চিংড়ি মাছের জেনেটিং ও রোগ বালাইয়ের স্ক্রিনিং করি। ২০১৪ সালে আমরা হাওয়াইয়ের মোয়ানা থেকে প্রথমে ব্রুড ও পরে পিপিএল এনে ব্রুড তৈরির কাজ করি। এ বছর এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ১৪০ কোটি নপ্লি উৎপাদন করেছি ও দেশবাংলাকে ৩০০টি ব্রুড সরবরাহ করেছি। আমরা এখন একটি বিখ্যাত জেনেটিক সংস্থার সঙ্গে চিংড়ির জেনেটিক ও রোগবালাই স্ক্রিনিং নিয়ে কাজ করছি।’
যা বলছেন এসপিএফ হ্যাচারির মালিকরা
প্রকল্পের আওয়াতায় কক্সবাজারের এআরসি শ্রিম্প হ্যাচারি, বলাকা হ্যাচারি, বেঙ্গল বে হ্যাচারি, লাবিব হ্যচারি ও খুলনার দেশবাংলা হ্যাচারিকে এসপিএফ হ্যাচারিতে উন্নীত করা হয়েছে। আর এই পাঁচ হ্যচারির কোনোটিই এখন বিএমসি সেন্টার থেকে এসপিএফ ব্রুডস ও নপ্লি সংগ্রহ করছে না। ফলে নার্সিং পয়েন্ট হয়ে এসপিএফ পিএল বা পোনা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে না।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের সোনাপাড়ার এআরসি শ্রিম্প হ্যাচারির এমডি আব্দুর রহিম চৌধুরি সারাবাংলাকে বলেন, ‘যখন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ হবে তখন ব্রুডস নেব।’ কক্সবাজারের কলাতলীর লাবীব শ্রিম্প হ্যচারির প্রোপাইটার মোহাম্মদ ইব্রাহিম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন এসপিএফ মাদার পাচ্ছি না। কোনো বিএমসিতেই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এ বছর এখনো এসপিএফ করতে পারিনি। কোথাও এসপিএফ পিএল সাপ্লাইও করতে পারিনি।’
কক্সবাজারের বলাকা হ্যাচারি লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ নাজিবুল ইসলাম অবশ্য বললেন ভিন্ন কথা। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এ বছর এসপিএফ প্রোডাকশনে যাইনি। প্রকৃতপক্ষে যারা এসপিএফ বলে ব্রুডস বা নপ্লি দিচ্ছে, সেগুলো প্রকৃত এসপিএফ নয়। এসপিএফের নামে যেসব ব্রুডস বা নপ্লি দিচ্ছে সেগুলো এসপিএফ নয়। আমরা এ বছর সমুদ্রের মাদার চিংড়ি ব্যবহার করছি।’
একই জেলার বেঙ্গল বে হ্যাচারির মখলেসুর রহমান বাবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘বছরের যে সময়টায় সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকে, তখন আমরা এসপিএফ করি। এ বছর এখনো এসপিএফ শুরু করিনি। ২০ মে মাছ ধরা বন্ধ হলে তখন করব। আমরা একইসঙ্গে এসপিএফ ও ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতিতে চাষ করে থাকি।’
পাঁচ হ্যাচারির মধ্যে একমাত্র দেশবাংলা হ্যাচারিই খুলনার। প্রতিষ্ঠানটির মালিক এম এ হাসান পান্না সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর এসপিএফ কেবল শুরু হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে এক কোটির বেশি পিএল উৎপাদন করেছি। তা বিভিন্ন নার্সিং পয়েন্ট বা ঘেরে সরবরাহ চলছে। আমরা থাইল্যান্ডের সিপি থেকে ব্রুডস নিয়ে আসি। কক্সবাজার থেকে ব্রুডস বা নপ্লি নিই না।’
এমকেএ ও দেশবাংলার কাছ থেকে ব্রুডস ও নপ্লি নিয়ে থাকে খুলনার মাসুম শ্রিম্প হ্যাচারি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির এস এম আবুল হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ বছর এসপিএফ পিএল করেছি। আমরা ব্রুডস ও নপ্লি দেশবাংলা ও এমকেএ থেকে নিই। এ বছর দেশবাংলা থেকে নিয়েছি। সামনে এমকেএ থেকে নেব। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
নার্সারির মালিকরা যা বলছেন
দেশে আটটি এসপিএফ নার্সারি ও নার্সিং পয়েন্ট রয়েছে। এদের প্রায় সবাই জানিয়েছে, তারা এখনো এসপিএফ নপ্লি পায়নি। হ্যাচারিগুলো নপ্লি দিতে পারেনি। ফলে তারা তা নার্সিং করে কৃষকদের কাছে এখনো পিএল সরবারাহ শুরু করতে পারেনি।
কক্সবাজারের বোরাক শ্রিম্প হ্যাচারি লিমিটেডের এমডি মো. মশিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এসপিএফ পিএল উৎপাদন করার জন্য হ্যাচারি প্রস্তুত রেখেছি। এ বছর এখনো নপ্লি নিইনি। সাতক্ষীরার কাজী এসপিএফ নার্সিং পয়েন্টের কর্ণধার কাজী আফসার হোসাইন বলেন, ‘এ বছর এখনো এসপিএফ শুরু করিনি।’
খুলনার কপোতাক্ষ শ্রিম্প হ্যাচারির চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মোড়ল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর এখনো এসপিএফ শুরু করিনি। জুনের দিকে শুরু করব।’ খুলনার পাইকগাছার ব্লু স্টার হ্যাচারি ও নার্সারির ভবন কান্তি দাস বলেন, ‘দেশবাংলা, সিপি, গোল্ডেন ও ফিশট্যাককে চাহিদাপত্র দিয়েছি। তারা কখন নপ্লি দিতে পারবে তা জানালে সে অনুযায়ী হ্যাচারি রেডি করব। যখন ওরা নপ্লি দেবে তখন থেকেই উৎপাদনে যাব।’
বাগেরহাটের চিত্রা এসপিএফ নার্সিং পয়েন্টের রুহুল আমিন শেখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দেশবাংলা ও এমকেএ থেকে পিএল কিনে আনি। গত বছর করেছিলাম। এ বছর এখনো শুরু করিনি।’ একই জেলার এস আলম নার্সিং পয়েন্টের শাহ আলম বলেন, ‘আমরা দেশ বাংলা থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার পিএল আনছি। এখানে দুই থেকে তিন দিন রেখে তা বিক্রি করে দিই। প্রতিদিনই পিএল আনি, প্রতিদিনই বিক্রি করি। প্রতি হাজারে হয়তো আমাদের ৫০ টাকা লাভ থাকে, কিন্তু খরচ অনেক। মূল লাভ দেশবাংলারই। এসপিএফ পদ্ধতি চিংড়ি চাষে চাষিরা লাভবান হচ্ছে।’
যা বলছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা
কক্সবাজারের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বদরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশবাংলা থাইল্যান্ড থেকে ব্রুডস এনেছে, এটি ঠিক নয়। কাগজপত্র অনুযায়ী তারা এমকেএ থেকে ব্রুডস নিয়েছে। কক্সবাজারের বাইরে একমাত্র দেশবাংলা আর কক্সবাজারে এমকেএ ও ফিশট্যাক এসপিএফ করছে। বলাকা, এআরসি, বেঙ্গল বে, লাবিব— এগুলো এপ্রিলের মধ্যভাগে এসপিএফ শুরু করবে।’
নার্সিং পয়েন্টগুলো বিষয়ে বদরুজ্জামান বলেন, ‘আমার নপ্লি নিয়ে কেউ যদি নার্সিং করে বিক্রি করে, ওই পোনাকে এসপিএফ বলা যাবে না। যদি তার এসপিএফ ক্যাপাসিটি থাকে তবেই ওই পিএল এসপিএফ হবে। আমার জানামাতে দেশের কোনো নার্সিং পয়েন্টের এসপিএফ করার সক্ষমতা এখনো হয়নি। তারা এসপিএফ পিএল বা নপ্লি বিক্রি করে থাকলে বিষয়টি সেখানকার মৎস্য কর্মকর্তাদের দেখার কথা। এসপিএফ করার মতো সক্ষমতা তারা তৈরি করতে পারেনি।’
খুলনার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) জয়দেব পাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানকার মাছুম শ্রিম্প হ্যাচারি লিমিটেড এবং ব্লু স্টার হ্যাচারি ও নার্সারি এখনো এসপিএফ শুরু করেনি। দেশবাংলা এখনো নপ্লি সরবারহ শুরু করেনি।’
সাতক্ষীরার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কৃষক কিছু কিছু পিএল পাচ্ছে। এমকেএর কাছ থেকে পাচ্ছে। দেশবাংলার পিএল এপ্রিলের ১ থেকে ২ তারিখের পর থেকে বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফিশট্যাকও কিছু অর্ডার নিচ্ছে।’
বাগেরহাটের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাগেরহাটের এস আলম নার্সিং পয়েন্ট, বাধাবন নার্সিং পয়েন্ট ও চিত্রা এখনো এসপিএফ পিএল নার্সিং শুরু করেনি। বাগেরহাটে দেশবাংলা পিএল সরবরাহ করে। প্রতিষ্ঠানটিও এখনো পিএল সরবরাহ শুরু করেনি। এসপিএফের নপ্লি বা পিএল থেকে চিংড়ির প্রোডাকশন মার্চের শেষে শুরু হয়ে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত চলবে। কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো অনেকে শুরু করবে।’
যা বলছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা
বাস্তবে এসপিএফ চিংড়ি উৎপাদনে সব পক্ষের অনাগ্রহ দেখা গেলেও প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট কর্মকর্তারা। ক্লাস্টারগুলোতে এখনো পিএল পাওয়া না গেলেও প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, ক্লাস্টারে এসপিএফ চিংড়ির উৎপাদন দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়েছে।
প্রকল্প পরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী জানান, আটটি হ্যাচারি ও আটটি নার্সারি তাদের কাজ চলমান রেখেছে। একটি হ্যাচারি এলসি জটিলতায় পিপিএল আনতে পারেনি, তারা সময় চেয়েছে। অন্য হাচারিগুলো বিএমসি থেকে ব্রুডস নিচ্ছে, চাহিদাপত্র দিচ্ছে।
সারাবাংলাকে জিয়া বলেন, ‘তারা (অর্থ সহযোগিতা পাওয়া প্রতিষ্ঠান) এসপিএফ করছে না, এটা ঠিক নয়। তারাও এসপিএফ করছে। দুয়েকজন হয়তো বন্ধ রেখেছে, তারাও শুরু করবে। বিএমসিগুলো পুরোদমে কাজ করছে, তারা ব্রুডস সরবরাহ করবে।’
ডিপিডি ড. মোহাম্মদ শরিফুল আজম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেসব যায়গায় ক্লাস্টার আকারে এসপিএফ চিংড়ির চাষ হচ্ছে সেখানে চিংড়ির উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। ৯০টি ক্লাস্টারে সাড়ে সাত হাজার খামারি রয়েছেন। আমরা ৩০০ ক্লাস্টারকে অনুদান দেবো। গত বছর ৯০ টিকে অনুদান দিয়েছি, এ বছর ২১০টিকে অনুদান দেবো। ক্লাস্টার পদ্ধতিতে যেখানে চিংড়ির চাষ হচ্ছে সেখানে ঘেরের গভীরতা বেড়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে এই সফলতা এসেছে।’
প্রকল্পটির উপপ্রকল্প পরিচালক মনিষ কুমার মণ্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন আইনে ২০৩৩ সালের পর সমুদ্র থেকে কেউ আর মা চিংড়ি সংগ্রহ করতে পারবে না। ফলে ২০৩৩ সালের মধ্যে সবাইকেই এসপিএফে আসতে হবে। না এসে উপায় নেই। চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতেই রোগমুক্ত চিংড়ি উৎপাদনের দিকে যাচ্ছে দেশ। আমরা যে হ্যাচারিগুলোকে নির্ধারণ করেছি, তাদের এসপিএফ করার চেষ্টা করছি।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
এসপিএফ এসপিএফ চিংড়ি চিংড়ি চিংড়ি চাষ নার্সারি বিএমসি ব্রুড ম্যানেজমেন্ট সেন্টার রোগমুক্ত চিংড়ি হ্যাচারি