Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তাদের চিন্তা ছিল আমরা ভিক্ষা এনে খাব: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:১৭

ঢাকা: আওয়ামী লীগ দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করলেও বিএনপি সেটি চায়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বিএনপি সরকারের চিন্তাই ছিল অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা।

শেখ হাসিনা বলেন, ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি পূরণ করেও বাংলাদেশকে আমরা উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে উন্নীত করি। পার্লামেন্টে যেদিন আমি ঘোষণা দিলাম, আজ থেকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ সে দিন বিএনপি বিরোধী দলে। তাদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, তাহলে খাদ্য সহায়তা পাওয়া যাবেনা। তাদের চিন্তাই ছিল, আমরা প্রতিনিয়ত অন্যের কাছে হাত পেতে চলব। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব, আর ভিক্ষা চেয়ে খাবার এনে খাব।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী ২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে এ মেলা আয়োজন করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলে গেছেন— আমাদের আছে সোনার মাটি, আমাদের ফসল আমরা ফলাব। আমরা তা প্রমাণ করেছি। বাংলাদেশকে খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করেছি। ২০০১ যখন আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করি, তখনো ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত আমরা রেখে গিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ২০০৯ সালে সরকারে এসে দেখি, সেই ২৬ লাখ উদ্বৃত্ত তো দূরের কথা, বরং ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশে। আবার সেখান থেকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এত খাল-বিল, নদী-নালার দেশ আমরা; আমাদের দেশের মানুষের কেন আমিষের কষ্ট হবে! অনেক দেশি মাছ হারিয়ে যেতে বসেছিল। গবেষকরা গবেষণা করে সেগুলো উৎপাদনে ফিরিয়ে এনেছেন। ফলে অনেক বিলুপ্তপ্রায় মাছ আবার ফিরে পাচ্ছি। গবেষণা ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে আনতে পারে না, এটাই হলো বড় কথা। তাছাড়া মুরগির ক্ষেত্রেও গবেষণা করে করে বিভিন্ন ধরনের পাখি এখন উৎপাদন হচ্ছে। শুধু ডিমই না, মাংসও এখন মানুষ খেতে পারছে।

খাদ্য নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, ২০২৬ সাল থেকে তা শুরু হবে। এর মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। একদিকে যেমন আমাদের গণমানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, একই সঙ্গে আমিষ সরবরাহের জন্য আমাদের হাঁস-মুরগি, পশু-পাখিও লালন-পালন করতে হবে। কারণ আমাদের আমিষ আমরাই তৈরি করব, দেশের মানুষকে দেবো। আমাদের প্রথম লক্ষ্য খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়া, দ্বিতীয় লক্ষ্য পুষ্টির নিশ্চয়তা দেওয়া। এখন আমরা সেই পদক্ষেপই হাতে নিয়েছি।

বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, যেমন— খালেদা জিয়া ঘোষণা দিলেন, দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াবেন। সেই ডাল-ভাত খাওয়াতেও কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালে আসলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ফখরুদ্দীন সাহেব প্রধান উপদেষ্টা, ইয়াজউদ্দিন রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান মঈন উদ্দিন। মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন আবার ঘোষণা দিলেন আলু খাওয়ার জন্য। হাজার পদের আলুর নানা রকমের তালিকা তৈরি করা হলো এবং তার আবার প্রদর্শনী হলো। বেশ উন্নত হোটেলে। মানুষ ভাত পাচ্ছে না। তাতে কী, আলু খাবে!

শেখ হাসিনা বলেন, কেউ আমাদের ডাল-ভাত খাওয়াতে চাইল, কেউ আমাদের আলু খাওয়াতে চাইল। কিন্তু আমরা তো মাছে-ভাতে বাঙালি। মাছ-ভাত পেলেই তো যথেষ্ট। সেটাই আমরা চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কাজেই আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। এখন অন্তত বলতে পারি— মাছ-ভাতের অভাবটা নাই, ডাল-ভাতেরও অভাব নাই। তবে মানুষের চাহিদা এখন মাংস। আরও বড় বড় মাছ, সবকিছু খাবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন দেশের ডেইরি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান পোলট্রি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

শুরুতে প্রাণিসম্পদ খাতে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি ও অর্জনের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্রাণিসম্পদে ভরব দেশ, গড়ব স্মার্ট বাংলাদেশ।’ উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের আয়োজনে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনী শেষ হবে শুক্রবার। দর্শনার্থীদের কোনো প্রবেশমূল্য লাগবে না।

সারা দেশের পোলট্রি ও ডেইরি খামারিরা মেলায় তাদের গবাদি পশু-পাখি প্রদর্শনের জন্য যোগ দিয়েছেন। ৬৪ জেলার ৪৬৬টি উপজেলাতেও পাঁচ দিনব্যাপী অনুরূপ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর

প্রধানমন্ত্রী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর