Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তাপে পুড়ছে দেশ, যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ২২:১৫

ট্যাপের পানির শীতলতায় গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচার চেষ্টা। চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গি বাজার এলাকায়। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। চট্টগ্রামে মৃদু তাপপ্রবাহ চললেও ভ্যাপসা গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। দেশের কয়েকটি জেলায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহও। এতে বাড়ছে গরমজনিত রোগব্যাধি। শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রামক নানা ব্যাধি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে, যা মৃত্যুও ঘটাতে পারে। এ জন্য তীব্র রোদে পারতপক্ষে বাইরে বের না হওয়া কিংবা বেশিক্ষণ অবস্থান না করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের কয়েকজন চিকিৎসক সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে গরমের প্রভাব থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় সূতি কাপড়ের পোশাক পরিধান, তরল জাতীয় খাবার ও ফলমূল খাওয়াসহ নানা পরামর্শ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে দুই দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তবে এর মধ্যে ভোরে এক পশলা বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। তবে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আবার ভ্যাপসা গরম অনুভূত হতে থাকে। সকালে ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া কার্যালয়।

চট্টগ্রামের প্রধান আবহাওয়া কার্যালয়ের পূর্বাভাস কর্মকর্তা এম এইচ এম মোছাদ্দেক সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা অস্থায়ী ঝড়ো বা দমকা হাওয়ার আকারে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

গরম থেকে বাঁচতে কর্ণফুলী নদীতে শিশুদের দাপাদাপি। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর, সেখানে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ ছাড়া বাকি বিভাগগুলোর দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দিনাজপুর, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে পূর্বাভাসে। বলা হয়েছে, এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়াতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলছে আবহাওয়া অধিদফতর।

এ অবস্থায় গরমজনিত সংক্রান্ত নানা রোগের মধ্যে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বড় করে দেখছেন চিকিৎসকেরা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব তীব্র গরমের মধ্যে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি নিয়ে নগরবাসীকে সতর্ক করেছেন।

ডা. রব সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাপপ্রবাহের সময়টাতে সূতি কিংবা পাতলা কাপড় ছাড়া আর কিছু পরা যাবে না। রোদের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না, হিটস্ট্রোক হয়ে যেতে পারে। পানি খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে, ধীরে ধীরে পান করতে হবে, অল্প অল্প করে সারাদিনে, একসঙ্গে না।’

রাস্তার ধারে বিক্রি করা শরবতে তিন রোগের ঝুঁকি তুলে ধরে এই চিকিৎসক বলেন, ‘ডায়রিয়া হচ্ছে বেশি। রাস্তার ধারে যেসব শরবত বিক্রি হচ্ছে, এগুলো যেন কেউ না খায়। এগুলো খুবই অস্বাস্থ্যকর। এগুলো খেলে ডায়রিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েড— এ তিনটি রোগের ঝুঁকি থাকবে। রসালো ফল যেমন— তরমুজ, আনারস বেশি খেতে হবে। মসলাযুক্ত খাবার একদম কম খেতে হবে, যেন হজমে সমস্যা না হয়।’

জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়াও হিট স্ট্রোক নিয়ে মানুষকে সচেতন করার কথা বলেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে রোদে গেলে হিট স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। সে জন্য মাথায় ছাতা ও পর্যাপ্ত পানীয় জল বা যেকোনো বিশুদ্ধ তরল পান করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। জনসাধারণের জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে, বিশেষ করে যাত্রী ছাউনির পাশে। গণপরিবহণের ছাদ তাপ নিরোধী করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে বিআরটিএ।’

এই গরমে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ রোগী বেড়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শিশুদের যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাই চিকিৎসকরা তাদের বিশেষ যত্নে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অজয় ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনো হয়নি। কিন্তু হিট স্ট্রোকের আশঙ্কাটা বাড়ছেই। যাদের বয়স ৫০ থেকে ৫৫ বছর বা তার বেশি, তারা যেন রোদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ বাইরে না থাকেন। তারা সকাল ৯টার আগে এবং বিকেল ৫টার পরে বাইরে বের হয়ে যেন তাদের প্রয়োজনীয় কাজটুকু সেরে নেন, এটা আমরা জনসাধারণকে বলছি। মাঝখানের সময়টা যেন তারা বাইরে না থাকেন, সেটাই ভালো হবে।’

‘আগের দিনে মানুষ বৃষ্টিতে যেমন ছাতা ব্যবহার করত, রোদেও ছাতা ব্যবহার করত। এখন কোনো মানুষের হাতে আপনি ছাতা দেখবেন না। মানুষ রোদের মধ্যে বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতাটা ব্যবহার করলে অনেক ভালো থাকতে পারবে। ছাতা ব্যবহার করা উচিত,’— বলেন ডা. অজয় ঘোষ।

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক ও জনস্বাস্থ্য গবেষক ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘শীতকালে আমরা শরীর ঢেকে রাখি, যেন ঠান্ডা না লাগে। গরমেও কিন্তু শরীর সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত, যেন চামড়া পুড়ে না যায়। বিশেষ করে হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ জন্য দরকার সকালের দিকে বাইরের কাজ সেরে নেওয়া। সকাল ১০টা-১১টার পর থেকে বিকেল ২টা-৩টা পর্যন্ত তাপমাত্রা খুব প্রকট থাকে। সে সময় পারতপক্ষে বাইরে বের না হওয়া, এ সময়ের আগে কিংবা পরে বের হয়ে কাজগুলো সেরে নিতে পারলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যাবে। এ ছাড়া ঠান্ডা জায়গায় থাকতে হবে। ঘরে ভেন্টিলেশন থাকতে হবে, যেন বাতাস আসা-যাওয়া করতে পারে।’

চিকিৎসকেরা আরও বলেছেন, জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, বদহজম, ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, চর্মরোগর প্রাদুর্ভাবও দেখা দিচ্ছে। জনসাধারণকে এসব সংক্রামক ব্যধি থেকে রক্ষায় সতর্ক থাকতে হবে।

ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘গরমে শিশু-বৃদ্ধ সবার মধ্যে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পেটের পীড়ায় ভোগে সব বয়সী লোকজন। যত্রতত্র পানীয় পান করতে গিয়ে ডায়রিয়াসহ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। ত্বকে ছত্রাকের আক্রমণ হয় এবং আগে আক্রান্ত থাকলে সেটা বহু গুণে বেড়ে যায়।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজের (বিআইটিআইডি) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাকিল আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংক্রামক ব্যাধিগুলো একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। এ সময় প্রচুর ভাইরাল ইনফেকশন হয়। যিনি সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি বাইরে বের হবেন না পারতপক্ষে। কাজের জন্য যাদের বের হতেই হয়, তারা কিছু সচেতনতা অবলম্বন করতে পারেন।’

‘কাশি এলে টিস্যুর মধ্যে কাশি দেবেন অথবা কিছু না পেলে হাতের মধ্যে কাশি দেবেন, যেন অন্য মানুষের গায়ে না পড়ে। খোলা জায়গায় যেন কাশি না দেওয়া হয় এবং সর্দি-কাশি থাকলে ভিড় অ্যাভয়েড করলে ভালো হয়। কোথাও বসলে তিনি যেন একটা চেয়ার গ্যাপ দিয়ে বসেন অথবা পাশের মানুষের সঙ্গে উনার যেন তিন ফুট দূরত্ব থাকে। এ তিন ফুট দূরত্বটা নিশ্চিত করতে পারলেই কিন্তু পাশের মানুষটি নিরাপদ থাকবেন, তিনি আক্রান্ত হবেন না,’— বলেন ডা. শাকিল।

গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচতে শিশুরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে কর্ণফুলীতে। বড়রাও নিশ্চয় চাইবেন এভাবেই নিজেদের শীতল রাখতে। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক পরা উচিত জানিয়ে ডা. আবদুর রব বলেন, ‘ধুলাবালিমুক্ত থাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এখন কিন্তু জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া এগুলো বেশি হচ্ছে। ধুলাবালির কারণেই কাশি হচ্ছে, নিউমোনিয়া হচ্ছে।’

চর্মরোগের বিষয়ে ডা. অজয় ঘোষ বলেন, ‘যাদের আগে থেকে চর্মরোগ আছে, তাদের রোগগুলো এ গরমে বেড়ে যেতে পারে। কিছু চর্মরোগ আছে যেগুলো গরমজনিত। যেমন— আমরা ঘামাচি বলি, ব্রন বেড়ে যেতে পারে, বাচ্চাদের ফোস্কা, চিকেন পক্স— এগুলো বেড়ে যেতে পারে। এ মুহূর্তে কোনো ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার না করা উচিত। চর্মরোগ বেড়ে গেলে তাদের অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, যাদের ডায়াবেটিস কিংবা হার্টের সমস্যা আছে, তাদের অবশ্যই বিশেষভাবে সতর্ক ও যত্নবান থাকতে হবে।’

‘ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তরল খাবার খেতে হবে। মাঝে মাঝে ডাব খেলে ভালো। এ সময় তরমুজ পাওয়া যায়, বাঙ্গি পাওয়া যায়। এগুলো খেলে পানিশূন্যতা কাটবে, ত্বক-শরীরও ভালো থাকবে।’

বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘মানুষের বেশি করে ফল খাওয়া উচিত। বিশেষ করে মৌসুমি ফল যেগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটা ভালো থাকবে, ডিহাইড্রেশনের প্রভাবটাও কমবে।’

চিকিৎসকরা বলছেন, তাপপ্রবাহের প্রভাব থেকে বাঁচতে শরীর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করতে হবে, তরল খাবার খেতে হবে বেশি। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

গরম যতই জেঁকে বসছে, ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিআইটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক শাকিল আহমদ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ সময়টাতে ডেঙ্গুর প্রভাব কিন্তু খুব বেড়ে যায়। অলরেডি ডেঙ্গুর প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। এই যে অল্প বৃষ্টি হচ্ছে, সেই পানি কিন্তু জমে থাকে। এর থেকে ডেঙ্গুটা বাড়বে। এখনই সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। বাড়ির আশপাশ, ডাবের খোসা, খালি পাত্র— এগুলোতে যেন পানি জমতে না পারে। ছাদে টব থাকলে সেখানে যেন পানি জমে না থাকে। কোথাও জমা পানি থাকলে পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।’

পোলট্রি খামারও ঝুঁকিতে

তীব্র তাপপ্রবাহে খামারের মুরগি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে জানিয়েছেন প্রাণি চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞরা। হিট স্ট্রোকে খামারের মুরগি ও বিদেশি জাতের গরুর মৃত্যু হতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) প্যাথলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাপপ্রবাহের কারণে মুরগির ফার্মগুলো এ মুহূর্তে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। মুরগির শরীরে পালক আছে, যেটা জ্যাকেটের মতো কাজ করে। এ কারণে মুরগির শরীরে হিটটা রয়ে যায়, ফলে তার হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিটা কিন্তু মারাত্মক। মুরগি মারা যাচ্ছে, তাদের বাঁচানো জরুরি। না হলে খামারিরা মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।’

সিভাসু হাসপাতালের পরিচালক এবং ফিজিওলজি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, গত দুই দিন নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় একটি পোলট্রি ফার্মে অর্ধ শতাধিক মুরগির মৃত্যু হয়েছে। ঘটনা তদন্তে গিয়ে দেখা গেছে, সবগুলো মুরগিই হিট স্ট্রোকে মারা গেছে।

চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি মোড় এলাকায় পথের ধারের দোকান থেকে লেবুর শরবত পান করছেন একজন। চিকিৎসকরাও এ সময়ে পানি, শরবত বেশি বেশি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে রাস্তার ধারে সুলভ শরবতগুলো স্বাস্থ্যকর না হলে তা থেকে ডায়রিয়া, টাইফয়েডের মতো রোগ হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিচ্ছেন তারা। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

সাইফুদ্দিন বলেন, ‘ফার্মের মালিক কিন্তু গরম থেকে মুরগিগুলোকে রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেননি। ফার্মের মুরগিগুলো ১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এর বেশি হলে সেগুলো দুর্বল হতে শুরু করে এবং একপর্যায়ে মারা যায়। আমরা বারবার খামারিদের বলছি, আপনারা পর্যাপ্ত সিলিং ফ্যান লাগান, স্ট্যান্ড ফ্যান রাখেন। কোল্ডে স্প্রে করতে হবে, খামারে বাতাস আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বেডিংগুলো পাতলা করতে হবে। স্যালাইন, লেবুর রস খাওয়াতে হবে। কোনোভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না।’

সিভাসুর জেনেটিক্স ও অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক মিয়াজি সারাবাংলাকে বলেন, ‘পোলট্রির হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। কিন্তু গবাদি পশু যেমন— গরুও কিন্তু এ ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। দেশি জাতের গরুগুলো হয়তো আমাদের দেশি আবহাওয়ার সঙ্গে কোনোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া কিংবা বিদেশি ক্রসজাতের গরুগুলো কিন্তু হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। মুরগি ও গরুগুলো এ সময়ে খাওয়া-দাওয়া একেবারে কমিয়ে দেয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার দিতে হবে, যেন তাদের শরীরের ভারসাম্যটা ঠিক থাকে।’

ড. মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘প্রকৃতিতে যেসব প্রাণী আছে, পাখি কিংবা মেছোবাঘ বা বনবিড়াল, সেগুলো কিন্তু তাপপ্রবাহে নিজেদের কৌশল অবলম্বন করে। এরা গর্তে ঢুকে যেতে পারে। অথবা প্রকৃতি থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারে। কুকুর-বিড়াল ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে, কিন্তু তাদের মৃত্যুঝুঁকি নেই। পোষা পাখিগুলো নিয়মিত পানি স্প্রে করলে ঠিক থাকবে। কিন্তু খামারের মুরগির অবস্থা একেবারে খারাপ হয়ে যায়। সাধারণত খামারিরা ওষুধ খাইয়ে মুরগি বাঁচাতে চান। এটা সম্ভব নয়। খামারের তাপ কমানো ছাড়া বিকল্প কোনো পন্থা নেই। টিনের চালে নিয়মিত পানি ছিটালেও অনেক উপকার হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

টাইফয়েড ডায়রিয়া তাপপ্রবাহ তাপপ্রবাহের প্রভাব রোদ স্বাস্থ্য সতর্কতা হিট স্ট্রোক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর