বাড়তে বাড়তে ৪১ ডিগ্রি ছাড়াল চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১১
চুয়াডাঙ্গা: তাপমাত্রা কমার কোনো লক্ষ্মণই নেই চুয়াডাঙ্গায়। আগের তিন দিনেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়। চতুর্থ দিনে সে তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। ফলে এ দিনও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এই জেলাতেই। ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ায় তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকা এই জেলা এবার অতি তীব্র তাপপ্রবাহের দিকে ধাবিত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় সেই তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিনের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। এটি এ দিনও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবেই রেকর্ড হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ। বরে আগে বিকেল ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ। এরও আগে সকাল ৯টায় ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও দুপুর ১২টায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন- অব্যাহত থাকবে তাপপ্রবাহ, সারা দেশে হিট অ্যালার্ট
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টাতেও চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দুপুর ১২টায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া মঙ্গলবার ও বুধবারেও চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। সে হিসাবে টানা চার দিন ধরেই তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে চুয়াডাঙ্গায়।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের শুক্রবারের পূর্বাভাস অবশ্য বলছে, আগামী তিন দিনে যেসব এলাকায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা নেই। সে হিসাবে এই জেলার বাসিন্দাদের তীব্র তাপপ্রবাহ থেকেও সহসাই মুক্তি মিলছে না।
আরও পড়ুন- তাপে পুড়ছে দেশ, যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা
এদিকে টানা তাপপ্রবাহে সীমান্তবর্তী এ জেলার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। অসহ্য গরমে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে প্রাণিকূল। ফুটপাথের ছোট ছোট দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। বাড়ি থেকে মানুষ বের হচ্ছে না। দিনের বেশির ভাগ সময় রোদের তীব্র প্রখরতায় চারপাশে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
এ অবস্থায় নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, ইজিবাইক চালক ও রিকশা-ভ্যানচালকরা দুর্বিষহ গরমে তাদের যানবাহন চালাতে পারছেন না। বলতে গেলে তারা উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের জহুরুল হক বলেন, প্রচণ্ড গরমে মাঠে জমিতে কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। ভ্যাপসা গরমে বেশিক্ষণ মাঠে অবস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমিতে সেচ দেওয়ার পরও মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে।
একই গ্রামের শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, বারবার পানি পান করেও তৃষ্ণা মেটানো যাচ্ছে না। বৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন।
কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুজন আলী বলেন, সকালে কাজের জন্য বের হতে হয়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। সড়ক থেকে গরম উঠে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। বাইরে বেশি সময় অবস্থান করা যাচ্ছে না।
এদিকে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতিতে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতর ‘অ্যালার্ট ফর হিট ওয়েভ’ তথা তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা শিরোনামে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। ওই চিঠি পাওয়ার পর স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে চুয়াডাঙ্গায় গরমে স্বাস্থ্যরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে মাইকিং করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/টিআর