ঢাকার বায়ু সপ্তাহজুড়েই অস্বাস্থ্যকর, শুক্রবারের বাতাসে স্বস্তি
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৩৭
ঢাকা: ঈদের আগে থেকে শুরু হওয়া বায়ু দূষণ পরিস্থিতি সপ্তাহজুড়েই ছিল অস্বাস্থ্যকর অবস্থায়। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সাপ্তাহিক ছুটির দিন তাপপ্রবাহের মধ্যে স্বস্তি নিয়ে এসেছে ঢাকার বাতাস। সপ্তাহজুড়ে তীব্র মাত্রার অস্বাস্থ্যকর বায়ু দূষণ থাকার পর আজ মডারেট অবস্থানে আছে ঢাকার বায়ু দূষণ পরিস্থিতি। বিশেষজ্ঞ মতামত অনুযায়ী টানা ছুটি, বৃষ্টিপাত এবং বাতাসের প্রভাবে বায়ু দূষণ চিত্রের এই উন্নতি বিশ্বের সর্বাধিক দূষণের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এই শহরের।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) আইকিউএয়ার অনুযায়ী সকাল থেকেই ঢাকার বায়ু দূষণের স্কোর মডারেট পর্যায়ের। দুপুরের পর বাড়ার বদলে এটি কমতেই দেখা গেছে। দুপুর ১২টার পর ১০১ স্কোর নিয়ে বিশ্বের ১২১টি শহরের মধ্যে ১২তম অবস্থানে থাকলেও বিকেল ৪টার পর ৯৫ স্কোর নিয়ে ১৪তম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা।
এদিকে গত শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ঢাকার স্কোর ছিল ১৪৩। আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী এই মানের বায়ু সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকর। এর আগে, শুক্রবার (৫ এপ্রিল) ১৬০ একিউআই স্কোর নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে ছিল ঢাকা। আর তার আগের শুক্রবার (২৯ মার্চ) ১৭৪ স্কোর নিয়ে প্রথম অবস্থানে ছিল রাজধানী শহর। আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, এই স্কোরের বায়ু অস্বাস্থ্যকর।
আইকিউএয়ারের তালিকা অনুযায়ী , ঢাকার বায়ু দূষণের প্রধান উৎস বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫)’র উপস্থিতি। আজ ঢাকার বাতাসে পিএম ২.৫ এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ৬.৭ গুণ বেশি। গত শুক্রবার ছিল ১০.৫ গুণ বেশি।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়।
আইকিউএয়ারের ডাটা অনুযায়ী গত সপ্তাহজুড়েই অস্বাস্থ্যকর অবস্থানে ছিল ঢাকার চিত্র। এই ধারাবাহিকতা শুরু হয় ঈদের দুই দিন আগে থেকে। তখন একসঙ্গে অনেক মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে ঢাকা ছাড়তে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতা ছিল ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত। ১৩ এপ্রিল ঢাকার স্কোর ছিল ১৭৪ এবং ১৪ এপ্রিল ছিল ১৭৩। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে কমতে থাকে ঢাকার বায়ু দূষণ স্কোর। ১৫ এপ্রিল ১৬৬, ১৬ এপ্রিল ১৫২, ১৭ এপ্রিল ১৫১ এবং ১৮ এপ্রিল ১৪১ স্কোর ছিল ঢাকার বাতাসের।। এই কয়দিন মানদণ্ড অনুযায়ী বায়ুমান অস্বাস্থ্যকর থাকলেও ধীরে ধীরে দূষণ কমার চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। আর আজ শুক্রবার অস্বাস্থ্যকর থেকে মডারেট পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্কোর নেমে এসেছে ১০০-র নিচে।
দূষণচিত্রের এই উন্নতির বিষয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপসের) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘ঢাকার বায়ু দূষণের প্রধান কারণগুলোর অনুপস্থিতির জন্য বায়ু পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে। বন্ধ আছে নির্মাণকাজ, দূরপাল্লার পণ্য পরিবহণ বন্ধ ও ঢাকার আশেপাশের ইটভাটা এখনও চালু হয়নি; কল-কারখানা বন্ধ থাকার প্রভাবে বায়ুদূষণ কম। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যানজট কম তাই বাতাসে কালো ধোঁয়াও কম। স্কুল না খোলার কারণে অনেকেই এখনো ঢাকায় ফেরেনি। সেটিরও প্রভাব আছে। এছাড়া বাতাসের প্রবাহ লক্ষ করা যাচ্ছে। দেখা যায় বাতাস ও বৃষ্টির প্রভাবে বায়ু দূষণ কমে যায়। কারণ বাতাসে দূষণ উপাদান ছড়িয়ে যায় আর বৃষ্টি হলে দূষণ উপাদান বায়ুমণ্ডলের নিচের দিকে অবস্থান করে। ঈদের ঠিক আগে আগে অনেক মানুষ একসঙ্গে ঢাকা ছাড়ার ফলে যে দূষণ তৈরি হয়েছিল সপ্তাহজুড়ে এটি কমতে থাকে। আজ তাই দূষণ মডারেট পর্যায়ে আছে।’
ঢাকার মডারেট বায়ুতে সেন্সিটিভ গ্রুপের ব্যক্তিদের ঘরের বাইরে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে আইকিউএয়ার। এছাড়াও বাইরে যেয়ে ব্যায়াম না করা এবং ঘরের জানালা বন্ধ রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা যাদের মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা ব্যক্তি।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে যত মানুষ অকালে মারা যায়, তাদের ২০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ।
পরিবেশ দূষণের মধ্যে অকাল মৃত্যুর ক্ষেত্রে ঘরে ও বাইরে বায়ু দূষণকে সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, অকালমৃত্যুর প্রায় ৫৫ শতাংশের কারণই বায়ু দূষণ। এ কারণে ২০১৯ সালে জিডিপির ক্ষতি হয়েছিল ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এছাড়া আইকিউএয়ারের ২০২৩ সালের বায়ুদূষণ বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বায়ুদূষণে গত বছর শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তান। আর রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকার স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। শীর্ষে ছিল ভারতের নয়াদিল্লি।
সারাবাংলা/আরএফ/একে