নতুন ভবন পাচ্ছে ৮ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
২১ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪৯
ঢাকা: একাডেমিক ভবন পাচ্ছে দেশের আটটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এজন্য ‘কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের অধীন ৮টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে।
প্রকল্পের উপর গত ১৮ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) রেহানা পারভিন। সেখানে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে কমিশন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সভায় কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আজিজ তাহের খান বলেন, নির্বাচিত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো দেশের বৃহৎ এবং উচ্চ মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো ১৯৬০-৭০ এর দশকে নির্মিত হয়েছে। ফলে অবকাঠামোগুলোর বয়স ৫২ থেকে ৬৮ বছরে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব ভবনে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর খালি জায়গায় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। তাই এ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের কোনো প্রয়োজন নেই। ফলে প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
সভায় আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান আব্দুর রউফ বলেন, নির্ধারিত ছকে এমটিবিএফ সংক্রান্ত তথ্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সংযুক্ত করা হয়েছে। এমটিবিএফ প্রতিবেদন মোতাবেক কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ফিসক্যাল স্পেস ঋণাত্মক বা নিম্নমুখী। প্রস্তাবিত মেয়াদকালে প্রাক্কলিত অর্থ কোনো প্রকল্প থেকে উপযোজনের মাধ্যমে এই প্রকল্পের অর্থায়ন করা হবে, তা জানা দরকার।
এ প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের উন্নয়ন বাজেটের জন্য সংস্থান করা থোক বরাদ্দ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চাহিদা পূরণ করা যাবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ নিশ্চিত করার বিষয়ে সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সভায় বলা হয়, প্রতিটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রস্তাবিত ভবন কোথায় নির্মাণ করা হবে। সেই তথ্যসহ পূর্ণাঙ্গ সাইটম্যাপ ডিপিপিতে থাকা প্রয়োজন। পুরাতন অবকাঠামোগুলো পরবর্তীতে ব্যবহার হবে কি না বা ব্যবহারের অযোগ্য হলে তা ভেঙে ফেলা হবে কি না- সেই তথ্যও ডিপিপিতে থাকা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সভায় সকলে একমত হয়েছেন।
সভায় কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আরও বলেন, অধিদফতরের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২৮ হাজার জন। এর বিপরীতে বিদ্যমান জনবলের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার জন। সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে আরও ছয় হাজার জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে। আগামী বছর এই নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে সভায় গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সভায় বলা হয়, অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিদ্যমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটির বিষয়ে অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীর গতির কারণে ভারতের নমনীয় ঋণের আওতায় প্রকল্পটির কাজ অসমাপ্ত রেখে শেষ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় কোনো কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়নি।
সভায় আইএমইডির প্রতিনিধি বলেন, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ থাকতে পারে। কিন্তু আর্থিক বিশ্লেষণ গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন যাচাইয়ের জন্য কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন পরীক্ষা করে সংশোধিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থিত হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাবিত আয়তন ও প্রাক্কলিত ব্যয় এক। এক্ষেত্রে ব্যয় প্রাক্কলনের ভিন্নতা থাকা যৌক্তিক ছিল।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রতিনিধি ওই সভায় বলেন, ডিজিটাল ম্যাপিং করে সব পলিটেকনিক ইনস্টিউটগুলোর আয়তন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৮টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থিত হলেও এদের আয়তন ও ব্যয় প্রাক্কলন একই হওয়ার যৌক্তিকতা পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করার জন্য সভায় সুপারিশ করা হয়।
আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান আব্দুর রউফ আরও বলেন, জনবল নির্ধারণী প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বিভাগের জনবল নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্পের জনবলের সংখ্যা, নিয়োগের ধরন ও ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রস্তাবিত টিফিন ভাতা, কুরিয়ার, ডাক, নিবন্ধন ফি, অনুলিপি ব্যয়, ব্যাংক চার্জ, পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট, ফিটনেস ফি, অন্যান্য ভাতা, শ্রমিক মজুরি, যাতায়াত ব্যয়, পরিবহন ব্যয় এবং প্রশিক্ষণেরগুলোর প্রয়োজন নেই। তাই ডিপিপি থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে সভায় বলা হয়।
তিনি আরও বলেন, ভ্রমণ ব্যয়ে ১৫ লাখ টাকার স্থলে ১০ লাখ টাকার সংস্থান রাখতে হবে। বাস্তব প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে পুনর্গঠিত ডিপিপিতে একটি ল্যাপটপ ও একটি ফটোকপিয়ার সংস্থান রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ডিপিপি এক লাখ ১০ হাজার টাকার মধ্যে একটি ল্যাপটপ, ৮০ হাজার টাকার মধ্যে একটি ডেক্সটপ কম্পিউটার, ২টি লেজার প্রিন্টার ও একটি রাউটার ক্রয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, পিইসি সভার পর পুনর্গঠিত ডিপিপি এখনা পরিকল্পনা কমিশনে আসেনি।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস