Saturday 12 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অর্থ আত্নসাৎ: সোনালী লাইফের পর্ষদ সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ এপ্রিল ২০২৪ ০০:২১

ঢাকা: অনিয়ম-দুর্নীতি ও ১৮৭ কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদ ছয় মাসের জন্য সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম এম ফেরদৌসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসক দায়িত্ব গ্রহণের পর যতদ্রুত সম্ভব কোম্পানিটিতে দেশি বা বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানির বিমা পলিসি ইস্যুসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে নতুন প্রশাসক।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২১ এপ্রিল) থেকেই নতুন প্রশাসক নিয়োগ কার্যকর করা হবে। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল আইডিআরএ’র পরিচালক (উপসিচব) আব্দুল মজিদ বিমা কোম্পানিটির প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত নির্দেশনায় সই করেছেন।

প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়, গত ১৮ এপ্রিলের শুনানিতে কোম্পানির পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান নূর-এ হাফজা পৃথকভাবে জবাব দাখিল করেন। আর বোর্ডের পক্ষে জবাব দাখিল করেন কোম্পানিটির বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী মনিরুজ্জামান।

কাজী মনিরুজ্জামানের জবাবে বলা হয়, কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিজে ও তার পরিবারের অনুকূলে ইস্যুকৃত শেয়ারের মূল্য, মাসিক বেতন গ্রহণ, তার নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে অর্থ প্রদান, বিদেশ ভ্রমণ, বিদেশে শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ব্যয় বাবদ অর্থ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

তবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস দাবি করেছেন, সোনালী লাইফের কাছে তার পাওনা ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ৩০৫ টাকা। এর মধ্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত অফিস ভাড়া বাবদ ১১৫ কোটি ৭৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০ টাকা, অফিস ভাড়ার বিলম্ব ফি বাবদ পাওনা ২৩ কোটি ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৬ টাকা, কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া বাবদ পাওনা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৪২ টাকা তিনি গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের এ দাবির সঙ্গে কোম্পানির বুক অব অ্যাকাউন্টস, লেজার সিস্টেম জেনারেটেট ভাউচার, ব্যাংকের অ্যাডভাইস চেক ইত্যাদি ডকুমেন্টেসের সঙ্গে কোনো মিল না থাকায় তার এ বক্তব্য গ্রহণ করা হয়নি আইডিআরএ’র শুনানিতে। মূলত কোম্পানির টাকায় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিপুল ব্যয় বহন, নগদ গ্রহণ ও নিজ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি উদঘাটন হওয়ার পর তা ভাড়া হিসেবে গ্রহণের দাবি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ভাড়ার টাকা সমন্বয় করার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য না হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে আইডিআরএ চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বছরভিত্তিক ফ্লোর এরিয়ার চাহিদা নির্ধারণ করে মোট ১৮৪ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে ২০১৩ সালে চুক্তি সম্পাদন করা হয়। তবে ভাড়ার ওই চুক্তিতে কোম্পানির পক্ষে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বা চেয়ারম্যান চুক্তিতে সই করেননি। চুক্তিতে সই করেন ভবন মালিক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের জামাতা ও সোনালী লাইফের স্পন্সর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল। এ ধরনের চুক্তি সইকে আইডিআরএ অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য ও অপকৌশল বলে মনে করছে।

এদিকে, নূর-এ হাফজা তার জবাবে বলেছেন, তার নামে ইস্যুকৃত প্লেসমেন্ট শেয়ারের মূল্য তিনি পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন। এ ছাড়া, তিনি কোম্পানি থেকে যে পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছেন তা পরিশোধ করতে ইচ্ছুক।

আইডিআরএ বলছে, অসম্পূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ বা তথ্য গোপন, অস্বচ্ছ হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি, অভ্যন্তরীণ কন্ট্রোল সিস্টেমের অনুপস্থিতি, ক্যাশ চেকে বড় অংকের লেনদেন, এফডিআর জামানত রেখে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ গ্রহণ এবং মুখ্যনির্বাহী কর্মকর্তাসহ কোম্পানিটির ব্যাংক সিগনেটরির প্রায় সবাই একই পরিবারের সদস্য। এমন অবস্থায় সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ বিমা কোম্পানিটির কার্যক্রম এমনভাবে পরিচালনা করছে যে, এতে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে কোম্পানি ও বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সোনালী লাইফের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অডিট ফার্ম হুদাভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোং-কে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওই তদন্তে ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ উঠে আসে। পরবর্তীতে গত ৪ এপ্রিল আইডিআরএ থেকে এক চিঠিতে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে কেন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে না তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

সেইসঙ্গে ১৮ এপ্রিল কর্তৃপক্ষে আয়োজিত এ সংক্রান্ত শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। এর আলোকে গত ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত শুনানিতে অংশ নেন সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। তবে এর আগের দিন ১৭ এপ্রিল কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের তিন পরিচালক পদত্যাগ করেন। তারা হলেন- আহমেদ রাজিব সামদানী, হুদা আলী সেলিম ও হাজেরা হোসেন।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

পর্ষদ সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স