প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফরে সই হবে ৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক
২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:০২
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থাইল্যান্ড সফরের সময় দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের পাঁচটি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও লেটার অব ইন্টেন্ট সই হবে। সোমবার (২২ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর সম্পর্কে একটি সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ তথ্য জানান।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৪-২৯ এপ্রিল থাইল্যান্ডে সরকারি সফর করবেন। এসময় তিনি জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলে কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা থাকবেন।
সফরকালে দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক ও একটি লেটার অব ইন্টেন্ট স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো হলো- অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি, জ্বালানি সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, পর্যটন সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করার জন্য একটি লেটার অব ইন্টেন্ট।
দুই প্রধানমন্ত্রী এসব চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও লেটার অব ইন্টেন্ট স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সরাসরি প্রত্যক্ষ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার মর্যাদা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের আবেদনের বিষয়ে আরও জোরালোভাবে অনুরোধ করা হবে এ সফরে। এছাড়া মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতে এবং রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে থাইল্যান্ডসহ আসিয়ান সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে আরও বেশি সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য জোরালো আহ্বান জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, আগামী শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাবিসিন শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করবেন। এরপর থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সৌজন্যে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেবেন। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের রাজপ্রাসাদে রাজা মহা ভাজিরালংকন ফ্রা ভাজিরাক্লাও চাউইয়া এবং রাণী সুধিদা বন্ধুসুধাবিমলালক্ষণ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি- রফতানি বৃদ্ধির জন্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পর্যালোচনার পাশাপাশি অন্যান্য অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, বিশেষ করে বিনিয়োগ, পর্যটন, জ্বালানি, স্থল এবং সমুদ্র সংযোগ, উন্নয়ন প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন, বৌদ্ধ সার্কিট পর্যটন প্রচারণা, পর্যটন অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যৌথ কার্যক্রম ও দক্ষতা বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সুবিধা অর্জন করতে পারবে। পর্যটন শিল্পে এই সহযোগিতার ফলে উভয় দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি করা হলে উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর হবে এবং বিভিন্ন সভা- সেমিনার ও প্রশিক্ষণে সরকারি কর্মকর্তারা সময়মতো যোগদান করতে পারবেন ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন, স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে থাইল্যান্ড বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ব্যাংককে অবস্থিতি বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকায় থাই দূতাবাস বছরব্যাপী নানা আয়োজনের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করে। গত দুই দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুমুখী সহযোগিতা বৃদ্ধির ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কার্যকর উন্নয়ন ঘটেছে। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণভূমিকা অনস্বীকার্য। সার্বিক দিক বিবেচনায়, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে, তাই এটি উভয় দেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।
সারাবাংলা/আইই