ইবিতে র্যাগিংয়ের প্রমাণ মিলেছে, সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ
২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২৩
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলের গণরুমে র্যাগিংয়ের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় তারা দুেই শিক্ষার্থীর সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। তাদের বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। ঘটনায় অভিযুক্ত আরেক শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা কম থাকায় তাকে সতর্ক করতে বলা হয়েছে সুপারিশে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ইবির লালন শাহ হলের গণরুমে (১৩৬ নম্বর কক্ষ) রাতভর এক শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। ১২ ফেব্রুয়ারি ঘটনাটি জানাজানি হয়। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। হল প্রশাসনের কমিটিকে সাত কার্যদিবস সময় দেওয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটিকে যত দ্রুতসম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। তবে দুটি কমিটিই প্রতিবেদন দিতে প্রায় দুই মাস সময় নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইবি প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি চলতি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। অন্যদিকে হল কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আজ সোমবার (২২ এপ্রিল)। প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তথ্যও এ দিনই জানা গেছে।
দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেই র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ইবি প্রশাসনের কমিটির ১৪ পৃষ্ঠার ও হল প্রশাসনের কমিটির পাঁচ-ছয় পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের তথ্যপ্রমাণ সংযুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-
- ইবিতে গণরুমে র্যাগিং: হল কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি
- ইবিতে বিবস্ত্র করে র্যাগিং: এবার প্রশাসনের তদন্ত কমিটি
- ইবিতে বিবস্ত্র করে র্যাগিং: সাক্ষ্য চেয়ে বিজ্ঞপ্তি ২ কমিটির
- ইবিতে ফের শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ
- ইবিতে ফের বিবস্ত্র করে র্যাগিং: ‘ও কথায় কথায় হাসে এজন্য মারছি’
ওই ঘটনায় ইবির দুই শিক্ষার্থী শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের মুদাচ্ছির খান কাফি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মোহাম্মদ সাগরের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মার নেতৃত্বে গঠিত ইবি প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি। ওই দুজনের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। অন্যদিকে ইতিহাস বিভাগের উজ্জ্বল হোসেনের সংশ্লিষ্টতা কম থাকায় তাকে সতর্ক করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। অভিযুক্ত সবাই ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এদিকে ইবি লালন শাহ হলের আবাসিক শিক্ষক ড. আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের হলের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতে পারেনি। কারণ ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের কেউ আবাসিক শিক্ষার্থী নন। তবে হল কমিটি কাফি, সাগর ও উজ্জ্বলের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং আরও তিন শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা উল্লেখ করে তাদের সতর্ক করার সুপারিশ করেছে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটি পরবর্তী সভায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
হল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. আলতাফ হোসেন বলেন, সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর জমা দিয়েছি। আমরা ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। বিধি অনুযায়ী শাস্তি দিতে কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হয়েছে।
লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, তিনজনের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের বাইরে। তাই আমরা কর্তৃপক্ষ বরাবর সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করেছি।
প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, আমরা ঈদের আগেই তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছি। ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। আমরা জড়িতদের বিষয়ে প্রশাসন বরাবর বিধি অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ করেছি।
এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি রাতভর ইবির লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষ তথা গণরুমে এক শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র্যাগিং দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগে বলা হয়, ওই শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে রড দিয়ে মারধর করা, পর্নগ্রাফি দেখানো ও টেবিলের ওপর কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখা হয়েছিল। তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিও করা হয়। ‘নাকে খত’ দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ভয় দেখিয়ে তিন-চার বার বিছানাপত্র বাইরে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
ইবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি ‘ঘরোয়াভাবে সমাধান’ করায় এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ‘বিশেষ চাপ’ দেওয়ায় এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ প্রশাসনের কাছে জমা পড়েনি। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি ঘটনাটি জানাজানি হয়।
সারাবাংলা/টিআর
ইবি ইবিতে র্যাগিং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন র্যাগিং শাস্তির সুপারিশ সর্বোচ্চ শাস্তি