৬.৮% বেড়ে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ে রেকর্ড, ৩৭ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:১৪
যুদ্ধ চলছে দেশে দেশে। যে যুদ্ধ পেরিয়ে শান্তির দিনের প্রত্যাশায় বিশ্বের কোটি মানুষ। কিন্তু স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বিশ্বব্যাপী অস্ত্র-শস্ত্র তথা সামরিক খাতে ব্যয়ের যে তথ্য তুলে ধরেছে, তাতে সে আশা বহু দূরবর্তীই মনে হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের সব দেশ মিলিয়ে সামরিক খাতে ব্যয় করেছে দুই হাজার ৪৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগে কখনো এক বছরে সামরিক খাতে এত বেশি ব্যয় করেনি বিশ্ব। এই ব্যয় আগের তথা ২০২২ সালের তুলনাতেও ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
বরাবরের মতোই সামরিক ব্যয়ে অন্যদের থেকে যোজন যোজন এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক খাতে তাদের ব্যয় এই খাতে বৈশ্বিক ব্যয়ের ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ বিশ্বের সব দেশ সামরিক খাতে যে ব্যয় করছে, তার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ব্যয় করছে যুক্তরাষ্ট্র একা।
চীন ও রাশিয়া রয়েছে তালিকার পরবর্তী স্থানে। ইউরোপের দেশগুলোকে টপকে এই তালিকায় চতুর্থ স্থান দখল করেছে ভারত। আর সামরিক ব্যয়ে শীর্ষ যে ১০টি দেশ, তাদের সবার ব্যয় বৈশ্বিক এই খাতের মোট ব্যয়ের ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ বৈশ্বিক সামরিক খাতের মোট ব্যয়ের প্রায় চার ভাগের তিন ভাগই করছে ১০টি দেশ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতি বছরই বিশ্বব্যাপী সামরিক খাতে ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করে থাকে। তাদের হিসাবে ২০২২ সালে সামরিক খাতে বৈশ্বিক ব্যয় ছিল দুই হাজার ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালের তুলনায় এ ব্যয় ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এবার এর প্রায় দ্বিগুণ হারে সামরিক খাতে বৈশ্বিক ব্যয় বেড়েছে।
স্টকহোম ইনস্টিটিউটের হিসাব বলছে, সামরিক খাতের এই ব্যয় বাড়তে বাড়তে এবার বৈশ্বিক মোট জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালে সরকারি খরচের হিসাবেও সামরিক খরচ দশমিক ৪ শতাংশ পয়েন্ট হারে বেড়েছে। সামরিক খরচ এ বছরে সরকারি মোট খরচের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হয়ে গেছে। আর বৈশ্বিক গড় হিসাবে নিয়ে মাথাপিছু সামরিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০৬ মার্কিন ডলার, যা ১৯৯০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পেছনে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ছাড়াও এশিয়া, ওশেনিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বের সব অঞ্চলেই এই খাতে ব্যয় বাড়লেও বিশেষ করে ইউরোপ, এশিয়া, ওশেনিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যয় বেশি বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে।
সামরিক ব্যয়ে শীর্ষে কারা
সামরিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে তারা এই খাতে ব্যয় করেছে ৯১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীনের এই খাতে ব্যয় ২৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। সামরিক ব্যয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। গত বছর তারা এই খাতে ব্যয় করেছে ১০৯ বিলিয়ন ডলার। সেটিও আবার চীনের তুলনায় প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯ ভাগের এক ভাগ।
৮৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার সামরিক ব্যয় নিয়ে তালিকার চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ভারত। ৭৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে সৌদি আরব। ষষ্ঠ স্থানে থাকা যুক্তরাজ্য সামরিক খাতে ২০২৩ সালে ব্যয় করেছে ৭৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। সপ্তম স্থানে থাকা জার্মানির ব্যয় ছিল ৬৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
তালিকার অষ্টম স্থানে রয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত ইউক্রেন। তারা গত বছর সামিরিক খাতে ব্যয় করেছে ৬৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া ৬১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সামরিক ব্যয় নিয়ে তালিকার নবম স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। আর জাপান রয়েছে তালিকার দশক স্থানে। গত বছর তারা সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৫০ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আগের বছরের তালিকার সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, প্রথম সাতটি স্থানে কোনো পরিবর্তনই নেই। কেবল ২০২২ সালের ১১তম অবস্থান থেকে ৫১ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে ২০২৩ সালে এক লাফে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে ইউক্রেন। তাতে দশম স্থান থেকে একাদশ স্থানে নেমে গেছে দক্ষিণ কোরিয়া। গত বছর তারা এই খাতে ব্যয় করেছে ৪৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধরত রাশিয়াও গত বছর সামরিক খাতে ২৪ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের শীর্ষ দশে থাকা দেশগুলোর মধ্যে আর জাপানের সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধিই কেবল দুই অঙ্কে (১১ শতাংশ)। বাকিরা আগের বছরের তুলনায় ব্যয় বাড়ালেও সেটি এক অঙ্কেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
এদিকে তালিকায় ৩০তম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তান। চরম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেলেও গত বছর এই দেশটি সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার তথা ৮৫০ কোটি ডলার। এটি অবশ্য আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। এ কারণে তারা আগের বছরের ২৪তম স্থান থেকেও ‘অবনমিত’ হয়েছে।
তালিকায় ৪০টি দেশের সামরিক ব্যয়ের হিসাব দিয়েছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সে তালিকায় বাংলাদেশ নেই। এ ছাড়া চীন, রাশিয়া ও সৌদি আরব সরকারিভাবে তথ্য না দেওয়ায় তাদের সামরিক খাতের খরচকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অনুমান করা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর
অস্ত্র-শস্ত্রে ব্যয় যুদ্ধ সামরিক ব্যয় স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট