বেইলি রোডে চিরচেনা রূপ, ফের সিলিন্ডার নিয়ে ব্যবসা শুরু
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪৯
ঢাকা: এক মাস আগেও সন্ধ্যা নামলে কোনো কোনো মার্কেটে দেখা যেত ঘুটঘুটে অন্ধকার। যেসব শপিং মল খোলা ছিল সেগুলোতেও ক্রেতাদের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়ত না। তবে ঈদের পর সেই দৃশ্যপটে পরিবর্তন এসেছে। এখন প্রায় প্রতিটি দোকানই সুজ্জিত, খাবারের দোকানে চিরচেনা ভিড়, ফুটপাতে চলছে গল্প-আড্ডা। আলো ঝলমল বেইলি রোড ফিরেছে চিরচেনা রূপে।
এদিকে, ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের পর এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করা এখানকার খাবারের দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই দোকানগুলো ফের পুরানো চেহারা নিয়েই ফিরেছে। যদিও পুলিশ বলছে, আইন অমান্যকারীদের দোকান চালাতে দেওয়া হবে না।
বেইলি রোড ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি শপিংমলই খোলা। বেড়েছে ক্রেতাদের সংখ্যাও। দেশি ব্র্যান্ড আর্টিসানের ম্যানেজার শাখাওয়াত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রিন কোজি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের দুই দিন পর থেকেই আমাদের শো-রুম খোলা। ভয়ে গত প্রায় দুই মাস ক্রেতা আসেনি তেমন। সেজন্য কয়েকবার পণ্যে ডিসকাউন্টও দিতে হয়েছে।’
নোয়াহ শো-রুমের কর্মী রিয়াদ হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেদিন গ্রিন কটেজে আগুন লাগে সেদিন থেকে আমাদের ৮০% ডিসকাউন্ট শুরু হয়। বিকেল থেকেই ক্রেতাপূর্ণ ছিল শো-রুম। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব পড়ে ঈদ মার্কেটেও। ক্রেতা একদম কমে যায়।’
একই কথা বলেছেন নাভানা টাওয়ারের ব্যবসায়ীরা। মাইল্কো ব্র্যান্ডের কর্মী পলাশ মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নতুন বিজনেস শুরু করেছি। শো-রুম খোলার এক মাসের মাথায় এত বড় দুর্ঘটনা। ভয়ে মানুষ শপিং মলেই ঢোকেনি অনেকদিন। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে আগুন লাগা গ্রিন কোজি কটেজের আশেপাশের ভবনে।’
ওই ভবনের পাশে রয়েছে পিৎজা হাট, থ্রার্টি থ্রি, কেএফসির শো-রুম, ছোট ছোট কয়েকটি রেস্ট্রুরেন্ট এবং একটি বেবিশপ। আরও আছে বেকারির দোকান। সেসব দোকানের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর দীর্ঘ দিন কাস্টমার ঢোকেনি। ইদানিং কিছু কাস্টমার আসতে শুরু করেছে। ফলে মার্কেটও জমতে শুরু করেছে।
এদিকে, ক্যাপিটল সিরাজীর ফুড কোডে দেখা গেছে তিল ধারনের ঠাঁই থাকে না। সন্ধ্যার পর একটি চেয়ারও খালি থাকতে দেখা যায়নি। অথচ পুরো রমজান এবং তার আগেও এই ফুড কোডে এর অর্ধেক ক্রেতাকেও বসে খেতে দেখা যায়নি। ডোমিনোজ পিৎজা’র কর্মী আশিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রিন কটেজে আগুন লাগার পরে কিছুদিন ক্রেতা আসেনি। এর পর যারা এসেছেন তারা পারসেল নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেছেন।’ ইন্ডালসের কর্মী আরাফাত জানান, ঈদের ছুটির পর ক্রেতা আসতে শুরু করেছে। একই কথা বলেছে উইঘরের কর্মী সুজনও।
গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের পর যেসব খাবারের দোকান সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতো নিরাপত্তাজনিত কারণে সেসব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল বার্গার এক্সপ্রেস, ক্যাফে জেলাটেরিয়া, সুলতান ডাইন, নবাবী ভোজের মতো জনপ্রিয় খাবারের দোকানও। কিন্তু বেইলি রোডে গিয়ে দেখা গেল নবাবী ভোজ ও সুলতান ডাইন বাদে প্রায় সব দোকানই খুলে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দেড় মাসে একটি দোকানও খুলতে পারেনি। কিন্তু সম্প্রতি গ্রিন কোজির পাশের ফুটপাতে সিলিন্ডার ব্যবহার করে চালানো দোকান বার্গারনও খুলে গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দোকান মালিক এই প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান। তবে দোকানের এক কর্মী জানান, সিলিন্ডার ছাড়া এখানে লাইনের গ্যাস আনা সম্ভব নয়। সেজন্য সিলিন্ডার নিয়েই ব্যবসা শুরু করছেন।
বেইলি রোডে খুলে গেছে বার্গার এক্সপ্রেসও। গ্যাসের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির কেউ কথা বলতে রাজি হননি। কর্মীরা জানান, মালিক কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছেন। আরও দেখা গেছে, গ্রিন কটেজে আগুনের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল খাবারের দোকান সিলক্স। সেটিও খুলেছে। আবার ফুটপাতের দোকান তুলে দেওয়া হলেও সেগুলোও নিয়মিতই বসছে পুলিশের সামনে।
নির্দেশনা অমান্য করে বেইলি রোডের দোকানে সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে!- এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু আনছার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেইলি রোডে কোনো দোকানেই সিলিন্ডার ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া ফুটপাতও বন্ধ। নির্দেশনা অমান্য করে কেউ যদি সিলিন্ডার ব্যবহার করে তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’
উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামে একটি ভবনে আগুন লাগে। ওই ঘটনায় ৪৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়। বেইলি রোডের ওই ঘটনা দেশজুড়ে নাড়া দিয়েছিল। ওই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস সম্প্রতি একটি তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম