এপ্রিলে তাপমুক্তি নেই
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫৯
ঢাকা: এপ্রিলের শুরু থেকেই দেশজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে অতি তীব্র তাপপ্রবাহেও পুড়ছে বেশ কয়েকটি জেলা। টানা খরতাপে মানুষ দিশেহারা। তাপের তীব্রতা কমার কোনো সম্ভাবনা না থাকায় এপ্রিল মাসে চতুর্থবারের মতো হিট অ্যালার্ট তথা তাপপ্রবাহের জারি করতে হয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরকে। এ মাসে
চলমান এই তাপপ্রবাহে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের ফসল। মধুমাসে বাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা ফলগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পোলট্রি শিল্পে। রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। গত ছয় দিনে হিট স্ট্রোকে সারা দেশে ৩৪ জনের প্রাণহানির তথ্য পর্যন্ত মিলেছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির জন্য প্রার্থনার বিশেষ নামাজ ‘ইস্তিসকার সালাত’ আদায় করছেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে বৃষ্টির জন্য দুই হাত তুলে আল্লাহর দরবারে অঝোরে কান্নাকাটি করছেন তারা। কিন্তু আবহাওয়া অফিস শিগগিরই তাপমুক্তির কোনো সুখবর দিতে পারছে না। তাদের তথ্য বলছে, এপ্রিলের মধ্যেই বৃষ্টির দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আগামী মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। মে মাসের প্রথম দিন থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে শুরু করবে। ২ থেকে ৩ মে বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ওই সময় ঝড়-বৃষ্টি কালবৈশাখীতেও রূপ নিতে পারে।’
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের দুয়েকটি বিভাগের দুয়েক জায়গা ছাড়া চলমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি এপ্রিলের বাকি কয়েক দিনেও অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে গিয়ে ফিরতে পারে স্বস্তি।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘এখন যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি আছে, আগামী কয়েক দিনে সে পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। মে মাসের ২-৩ তারিখে ঝড়-বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমতে থাকবে। ৫ মে থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতি এখনকার মতো অস্বস্তিকর আর থাকবে না।’
এদিকে আবহাওয়া অফিসের সবশেষ ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তীব্র তাপপ্রবাহ।
এ ছাড়া ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্প বেশি থাকার কারণে অস্বস্তিভাব থাকতে পারে।
এর আগে গত ৩ এপ্রিল চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রথমবারের মতো তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করেছিল আবহাওয়া অধিদফতর। সেটিও ৭২ ঘণ্টার জন্যই জারি করা হয়েছিল। ওই সময়ের পর তাপমাত্রা কিছুটা কমে এসেছিল।
এরপর গত ১৯ এপ্রিল আবহাওয়া অধিদফতর দ্বিতীয় দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করে। সেই হিট অ্যালার্টের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই ২২ এপ্রিল জারি করা হয় তৃতীয় দফার সতর্কবার্তা। এবারও সেই সতর্কবার্তার মেয়াদ শেষ হতে না হতেই জারি করা হলো চতুর্থ মেয়াদের সতর্কবার্তা।
কাঠফাটা রোদ ও তীব্র গরমে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে বিপর্যয়। টানা তাপপ্রবাহে কাহিল হয়ে পড়েছেন মানুষ। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে স্থবিরতা। সূর্যের তাপ এতই বেশি যে, খোলা আকাশের নিচে হাঁটলেও গরম বাতাস লাগছে চোখেমুখে। বৃষ্টির জন্য মানুষ হাহাকার করছে। দিনের বেশিরভাগ সময় রাস্তাঘাট থাকছে ফাঁকা। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ, কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বের হতে চাইছেন না কেউ।
এদিকে গরমজনিত কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা রোদের তাপদাহে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দাবদাহের কারণে তরমুজ, বাঙ্গি, ডাব, আনারস, মাল্টা, পেয়ারাসহ পানি জাতীয় ফলের চাহিদাও বেড়েছে।
সারাবাংলা/এনইউ/টিআর
অতি তীব্র তাপপ্রবাহ আবহাওয়া অধিদফতর খরতাপ তাপপ্রবাহ তাপমাত্রা বৃষ্টির আভাস বৃষ্টির পূর্বাভাস