দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে বৌয়ের কথা না শোনার পরামর্শ জিএম কাদেরকে
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:০৪
ঢাকা: সারাদেশে জাতীয় পার্টির করুণদশার কথা জানিয়েছেন দলটির বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা। এমনকি এই করুণদশা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে বৌয়ের কথা না শোনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সেইসঙ্গে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে শুধুমাত্র বনানীর কার্যালয়ে বসে না থেকে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সারাদেশ সফরেরও পরামর্শ দিলেন নেতারা।
বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে নেতারা বলেছেন, দলের নেতৃত্ব ও পরিস্থিতি যে পর্যায় চলে গেছে তাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার অস্তিত্ব ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ভরাডুবি হবে নিশ্চিত।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে পার্টির বর্ধিত সভায় সারা দেশ থেকে আসা নেতারা এই পরামর্শ দেন। এ সময় মঞ্চে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ ২৪ জন কেন্দ্রীয় নেতা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
বর্ধিত সভায় খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, ‘পার্টির কিছু নেতা রয়েছেন যারা সুযোগ সন্ধানী। এই সুযোগ সন্ধানী নেতারা রাজনীতির মাঠে না থেকেও বার বার এমপি-মন্ত্রীও হয়েছেন। সেজন্য জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রায়ত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ মনোকষ্ট নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।’
দলের সার্বিক পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে চেয়ারম্যানের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির দুর্গ ছিল রংপুর। আজ সেই র্দুগ নেই। এর কারণ কি? কারণ একটাই, নেতৃত্বের অভাব। কান কথা শুনে রাজনীতির নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। দলের মধ্যে কান কথা বেশি চলছে। ফলে রংপুরের ঘাঁটি হারিয়ে গেছে। তাই এক কথায় বলতে হয়- বৌ মরলে বৌ পাওয়া যায়, ভাই মরলে ভাই পাওয়া যায় না ‘
কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ডা. আব্দুল হাই মঞ্চে বসে থাকা জাপা চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার আশেপাশে যারা বসা আছেন, তারা শুধু হালুয়া-রুটির জন্য আপনার আশে পাশে ঘুরঘুর করেন। হালুয়া-রুটির জন্য আপনার কাছে ধর্না দেন। এসব নেতাদের কাছ থেকে দূরে থাকুন। লেজুরভিত্তিক রাজনীতি না করে নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে জনস্বার্থে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামুন।’
টাঙ্গাইল জেলা জাপার সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জাতীয় পার্টির রাজনীতি বনানী অফিস কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। যারা প্রতিদিন বনানী অফিসে গিয়ে চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে দেখা করেন, তারা পদ-পদবি পান। তারাই প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হচ্ছেন। এভাবে একটি রাজনৈতিক দল চলতে পানে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবসময় আওয়ামী লীগের দোষ দিয়ে থাকি। তারা কথা দিয়ে কথা রাখেনি, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আওয়ামী লীগ দলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৌশল অলম্বন করবে, এটাই স্বাভাবিক। জাতীয় পার্টি কেন কৌশল নিয়ে সামনে পথ চলছে না।’
দিনাজপুর জেলা জাপার সভাপতি রুবেল আহমেদ পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি জাতীয় পার্টির মহাসচিব। আপনি কয়টি জেলা সফর করেছেন? কয়টি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়েছেন? বানানী অফিসে বসে দলের নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না।’
লালমনিরহাট জেলা জাপা সভাপতি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘তৃণমূলে জাতীয় পার্টির অবস্থা খুবই দুর্বল। দলটির অঙ্গসংগঠনগুলো ঘুমিয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় জাপা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে আরও ভরাডুবি হবে।’
ঢাকা মহনগরের দক্ষিণের নেতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল আলম রুবেল বলেন, ‘৪২ বছর ধরে আমি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করি। আমার মতো অনেকে আছেন যারা এই দলটি করতে গিয়ে সবকিছু হারিয়েছেন। আজ আমাদের মাজা ভেঙে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি; কিন্তু মঞ্চে মাত্র ২৪ নেতা উপস্থিত। অন্য নেতারা কোথায়? তারা তো সময় মতো হালুয়া-রুটির জন্য সামনের কাতারে থাকবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টি নামে দল করছেন। তিনিও জানেন তাকে দিয়ে রাজনৈতিক দল হবে না। তাদের ওখানে যেসব নেতা রয়েছেন তারাও সময় মতো চলে আসবেন। তারাও নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন, এমপি হবেন।’
‘অথচ এমন অনেকেই আছেন যারা ২০/২৫ বছর জাতীয় পার্টির রাজনীতি করছেন- কিন্তু একবারও নির্বাচন করার সুযোগ পাননি। ওইসব নেতার সমর্থকরা কেন জাপাকে সমর্থন জানাবে?’- প্রশ্ন তোলেন ঢাকা দক্ষিণের নেতা রুবেল।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম