Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা ও ডলারের ধাক্কা আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ প্রকল্পে

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০০

ঢাকা: ধীর গতি বিরাজ করছে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ প্রকল্পে। প্রায় ছয় বছরের বেশি সময় পার হলেও বাস্তব অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ১৭৫ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার টাক। সেই সঙ্গে বেড়েছে ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই। সবশেষ নির্ধারিত সময় চলতি বছরের ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

‘আশুগঞ্জ ১৩২ কেভি পুরাতন এআইএস উপকেন্দ্রকে ১৩২ কেভি নতুন জিআইএস উপকেন্দ্র দ্বারা প্রতিস্থাপন’ প্রকল্পে বিরাজ করছে এমন চিত্র। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারি ও ডলার সংকটের ধাক্কা লেগেছে এই প্রকল্পে।  প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনীর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। গত ৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) মোস্তাফিজুর রহমান। সভায় প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে না উঠতেই ডলার সংকটের কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দরপত্র দিয়েও ঠিকাদাররা কাজ করতে পারেননি। এর ফলে অতিরিক্ত সময় যাচ্ছে।

পিইসি সভা সূত্রে জানা গেছে, ওই সভায় শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রধান বলেন, প্রকল্পটি মোট ৩৫৬ কোটি ৯৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩৪২ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৪ কোটি ৯৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল একনেকে এটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণসহ প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়েছে। এতেও কাজ শেষ হয়নি। এবার ব্যয় কমিয়ে মোট ২৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২১ সালের ৯ জুন পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দেন । এরপর ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ১৭৫ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তন এবং কয়েকটি অঙ্গে ব্যয় হ্রাস বা বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটি সংশোধন প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্পের মেয়াদ (২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) অপরিবর্তিত রেখে এটি দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা সংশোধিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ২২ কোটি ৬৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা অর্থাৎ ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি।

পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সভায় বলেন, আশুগঞ্জ উপকেন্দ্রকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে সম্ভাব্য জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের ঝুঁকি হ্রাস এবং ঢাকাসহ আশুগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়। তিনি বলেন, সরকার ও পিজিসিবির যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান আশুগঞ্জ ১৩২ কেভি এআইএস উপকেন্দ্রেকে ১৩২ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্র দ্বারা প্রতিস্থাপন করাই প্রকল্পের মুল কার্যক্রম।

সভায় সভাপতি শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) মোস্তাফিজুর রহমান প্রকল্পের মেয়াদ বার বার বৃদ্ধির কারণ জানতে চান। এর জবাবে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের পর দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে ২০২০ সালের ১৮ মে পিজিসিবির সঙ্গে ঠিকাদার চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট করর্পোরেশনের ২৭ মাসে উপকেন্দ্র নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার চুক্তি হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সিভিল ডিজাইন ও বিভিন্ন ইকুইপমেন্টের কারিগরি ড্রয়িং ও ডিজাইন অনুমোদন এবং মাঠ পর্যায়ে ভৌত অবকাঠামোগত কাজ বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার মালামাল মবিলাইজেশন শুরু না করায় পিজিসিবি থেকে পত্রের মাধ্যমে বার বার ঠিকাদারকে কাজ শুরু করার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোভিড-১৯-এর কারণে মালামাল মবিলাইজেশন দেরি হয়েছে বলে জানানো হয়। ফলে কাঙ্ক্ষিত ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।

সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, মূল অনুমোদিত প্রকল্পে সংস্থান করা ১৩২ কেভি ওয়ান অ্যান্ড হাফ ব্রেকার সেইম, ইনডোর টাইপ জিআইএস এবং ৬৩ কেএ ইকুইপমেন্টের পরিবর্তে প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে ১৩২ কেভি ডাবল বাস বার সেইম, আউটডোর টাইপ জিআইএস এবং ৫০ কেএ নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, কারিগরি সংক্রান্ত এ পরিবর্তনের ফলে নির্ভরযোগ্যতা ও প্রাপ্ত সুবিধা একই থাকে, কিন্তু নির্মাণ ব্যয় ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম খাতে ১০৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকাসহ মোট ১০৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় হ্রাস পায়। প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে এক মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ৮৪ দশমিক ৯৫ টাকা হারে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল । বর্তমানে স্থানীয় মুদ্রার সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

সভায় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নিশ্চয়তা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সামগ্রিকভাবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ করা সম্ভব হবে।

পিইসি সভায় পিজিসিবির প্রতিনিধি বলেন, প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গে মোট ৪২ কোটি ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য, বৈদেশিক মুদ্রায় ক্রয় করা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম খাতে ৩৩ কোটি ৯৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রায় অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামো খাতে দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন ভাতা বাবদ পিজিসিবি খাতে এক কোটি ৩৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি এবং অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামো ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিশোধযোগ্য ভ্যাটের পরিমাণ ৭৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় ব্যাংকে খোলা এলসির বিপরীতে কমিশন এবং ব্যাংক চার্জ বাবদ ব্যয় ৭১ লাখ ৬২ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন গাড়ি কেনার পরিবর্তে পিজিসিবির সমাপ্ত প্রকল্প থেকে পুরাতন গাড়ির সংস্থান করায় মেরামত ও সংরক্ষণে ব্যয় বেড়েছে তাই মোটর যানবাহন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে । অপরদিকে প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গে মোট ২০ কোটি ৩০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয় কমেছে। এরমধ্যে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ ১৯ কোটি এবং কন্টিনজেন্সি খাতে ৬৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয় কমেছে।

পিজিসিবির সদ্য সমাপ্ত প্রকল্প থেকে অধিকাংশ অফিস সরঞ্জাম এবং আসবাবপত্রের সংস্থান করায় এই খাতগুলোতে ৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয় কমেছে। প্রকল্পে উপ-পরিচালক পদ শূন্য থাকায় একটি গাড়ির জ্বালানি বাবদ ১৬ লাখ ৯ হাজার টাকা , সম্মানী বাবদ ১০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয় কমেছে।

সার্বিকভাবে বিভিন্ন অঙ্গে ব্যয় ৪২ কোটি ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বৃদ্ধি ও ২০ কোটি ৩০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা হ্রাস পেয়ে প্রকল্প ব্যয় সর্বমোট ২২ কোটি ৬৫ লাখ ২২ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/আইই

আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ প্রকল্প


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর