শরীরে নিয়ন্ত্রণ নেই, শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিলেন আদনান
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২০
কুষ্টিয়া: জন্ম থেকেই নিজের শরীরের প্রতি নিয়ন্ত্রণ নেই। দাঁড়াতে পারেন না সোজা হয়ে। শরীর, হাত ও পা কাঁপতে থাকে অনবরত। কথা বলতেও বেগ পেতে হয়। হাঁটতেও শিখেছেন অনেক দেরিতে। তখন বয়স ৯ বছর। তিনি মোহাম্মদ আদনানুজ্জামান।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকে (সম্মান) গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ‘এ’ ইউনিটে অংশ নেন তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষায় বসেন।
জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত আদনান থেমে যাননি। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও পারিবারিক সহায়তায় এতদূর এসেছেন। শিক্ষক মায়ের অনুপ্রেরণায় উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখছেন। সুযোগ পেয়ে রসায়ন বিষয়ে ভর্তি হতে চান তিনি।
আদনান কুষ্টিয়া সদরের আরওয়া পাড়ার আজগর আলী ও সাবিনা সুলতানা লিলির সন্তান। তারা দুই ভাই-বোন। বাবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী এবং মা স্কুল শিক্ষিকা। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে মা-বাবার সঙ্গে এসেছেন প্রতিবন্ধী আদনান। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে ‘এ’ গ্রেড পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন।
আদনান বলেন, আগে থেকেই স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব। ভর্তি পরীক্ষাও দিয়েছি। কিন্তু শ্রুতিলেখক সঙ্গে থাকার অনুমতি মেলেনি। হাতের কাঁপুনিতে বৃত্ত ভরাট করতে গুলিয়ে ফেলি। চান্স হয়নি। ইবি কিংবা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। জীবনে সবসময় বাবা-মা আমার পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন।
আদনানের মা সাবিনা সুলতানা লিলি বলেন, আমার স্বপ্ন সে (আদনান) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। আমি আনন্দিত যে তাকে এতদূর নিয়ে আসতে পেরেছি। আমিই এক হাতে ব্যাগ আর অন্য হাতে তাকে কোলে নিয়ে স্কুলে নিয়েছি, পড়িয়েছি। হাল ছাড়িনি। আমাদের ইচ্ছাশক্তিতে ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত, শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সারাদেশে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে মোট ৬ হাজার ৪৪২ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। পরীক্ষায় শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল ৯১.০৪ শতাংশ। আগামী ৩ মে মানবিকের ‘বি’ ইউনিট ও ১০ মে বাণিজ্যের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সারাবাংলা/আইই