সুস্থ আছে মাথা জোড়া লাগানো শিশু রাবেয়া-রোকেয়া
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২৯
ঢাকা: অস্ত্রপচারের পর মাথা জোড়া লাগানো দুই জমজ শিশু রাবেয়া ও রোকেয়া সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। একইসঙ্গে চিকিৎসক দল ও চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি।
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) দুই জমজ বোনের অস্ত্রপচার পরবর্তী চিকিৎসার খোঁজ নেওয়ার পর এই মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। গত ২৪ এপ্রিল এই পরিদর্শনকালে হাঙ্গেরির চিকিৎসক দল তার সঙ্গে ছিলেন। এ বিষয়ে রোববার (২৮ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ। এতে ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
তারা জানান, মাথা জোড়া লাগানো জমজ শিশু রাবেয়া ও রোকেয়ার অপারেশন পরবর্তী খোঁজ-খবর নিতে গত ২৪ এপ্রিল হাসপাতালে পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এসময় হাঙ্গেরির চিকিৎসক দল তার সঙ্গে ছিলেন। পরিদর্শন শেষে চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিশেষ চিকিৎসক দল। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ এই অপারেশনে অবদান রাখায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন তারা।
সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, পাবনার চাটমোহর উপজেলার রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় দুই মাথা জোড়া লাগানো জমজ সন্তান। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। বিশ্বে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন জীবিত জমজ শিশুদের মধ্যে মাত্র একটি জোড়া মাথার শিশু জন্ম নেয়। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ জোড়া মাথার শিশু মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে এবং আরও এক তৃতীয়াংশ শিশু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। আর শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ শিশু জোড়া মাথা নিয়ে বেঁচে থাকে। যাদের অস্ত্রপচারের মাধ্যমে আলাদা করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সফলতার হার খুব বেশি নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালের ১ আগস্ট ৩৩ ঘণ্টাব্যাপী এই বিরল অপারেশনটি সম্পন্ন হয় ঢাকার সিএমএইচ’এ, যা বিশ্বে ১৭তম।
অস্ত্রপচারের সবচাইতে জটিল অংশ ‘জমজ মস্তিষ্ক’ আলাদা করা। এই কাজটি সম্পন্ন করতে ওই বছরের ২২ জুলাই শিশু রাবেয়া ও রোকেয়া সিএমএইচ’এ নিয়ে আসা হয়। পরে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ও ১৩ মার্চ আড়াই ঘণ্টা করে দুইটি সফল অস্ত্রপাচার হয়। এর মাধ্যমে তাদের মাথায় বিদ্যমান ক্ষতস্থান নতুন কোষ দ্বারা পূর্ণ করা হয়। পরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে রাবেয়ার মাথার বাম দিকের চামড়ার ক্ষত শুরু হয় এবং পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়ে চামড়ার নিচে লাগানো কৃত্রিম মাথার খুলি দৃশ্যমান হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ওই বছরের ৭ মার্চ সিএমএইচ’এ আরেকটি সফল অস্ত্রপচার করেন বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
বর্তমানে রোকেয়া ও রাবেয়া দু’জনই সুস্থ আছে। এই অপারেশনে দেশি ও বিদেশি চিকিৎসকসহ শতাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অংশগ্রহণ করেন বলে সংবাদ সম্মেলনের জানান সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ।
সারাবাংলা/এনএস